রমজানে গাজায় হামলা চালাবে না ইসরায়েল: জো বাইডেন

এনবিসির অনুষ্ঠানে হাজির হওয়ার পর জো বাইডেন অনুষ্ঠানের সঞ্চালক সেথ মেয়ার্সের সঙ্গে আইসক্রিম খেতে খেতে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাব দেন। ছবি; এএফপি
এনবিসির অনুষ্ঠানে হাজির হওয়ার পর জো বাইডেন অনুষ্ঠানের সঞ্চালক সেথ মেয়ার্সের সঙ্গে আইসক্রিম খেতে খেতে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাব দেন। ছবি; এএফপি

মার্কিন প্রেসিডেন্ট বাইডেন জানিয়েছেন, ইসরায়েলের সঙ্গে একটি চুক্তি চূড়ান্ত হয়েছে। যার ফলে, তারা পবিত্র রমজান মাসে গাজায় সব ধরনের সামরিক অভিযান বন্ধ রাখবে

আজ মঙ্গলবার এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা এএফপি।

গতকাল মার্কিন টিভি চ্যানেল এনবিসির 'লেট নাইট উইথ সেথ মেয়ার্স' অনুষ্ঠানে যোগ দেন বাইডেন। সেখানে তিনি বলেন, 'সামনে রমজান মাস শুরু হতে যাচ্ছে। ইসরায়েলিরা রমজান মাসে (গাজায়) অভিযান না চালানোর বিষয়ে সম্মত হয়েছে, যাতে আমরা সব জিম্মিদের মুক্তি দিতে পারি।'

এর আগে, এই অনুষ্ঠান থেকে বের হয়ে এসে সাংবাদিকদের বাইডেন জানিয়েছিলেন, তিনি আশা করছেন আগামী সপ্তাহের মধ্যেই গাজায় যুদ্ধবিরতির বিষয়ে নতুন চুক্তির কাজ শেষ হবে হবে।

লেট নাইট উইথ সেথ মেয়ার্স অনুষ্ঠানে জো বাইডেন। ছবি: রয়টার্স
লেট নাইট উইথ সেথ মেয়ার্স অনুষ্ঠানে জো বাইডেন। ছবি: রয়টার্স

তিনি বলেন, 'আমি আশার করি আগামী সপ্তাহান্তের শুরুতে এটা হবে। অথবা সপ্তাহান্ত শেষে। আমার জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা আমাকে জানিয়েছেন, আমরা (চুক্তি চূড়ান্ত করার বিষয়ে) একেবারে শেষ পর্যায়ে আছি। তবে এখনো এই কাজ শেষ হয়নি।'

যুদ্ধবিরতি কবে থেকে শুরু হতে পারে, এ প্রশ্নের জবাবে বাইডেন সাংবাদিকদের বলেন, 'আমার আশা হলো আগামী সোমবার (৪ মার্চ) থেকে আমরা যুদ্ধবিরতি দেখতে পাবো।'

এনবিসির অনুষ্ঠানে হাজির হওয়ার পর জো বাইডেন অনুষ্ঠানের সঞ্চালক সেথ মেয়ার্সের সঙ্গে নিউ ইয়র্কের একটি আইসক্রিমের দোকানে যান। সেখানে আইসক্রিম খেতে খেতে তিনি সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাব দেন।

মিশিগানের প্রেসিডেনশিয়াল প্রাইমারির একদিন আগে তিনি এই মন্তব্য করলেন। এই প্রাইমারি থেকে বোঝা যাবে ডেমোক্র্যাটিক পার্টিতে এ মুহুর্তে কতটুকু জনপ্রিয় বাইডেন। ইসরায়েল-হামাস যুদ্ধ বিষয়ে বাইডেনের প্রতিক্রিয়া ও সার্বিক ব্যবস্থাপনা নিয়ে দলের মধ্যে অসন্তোষ রয়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

দক্ষিণ গাজায় অভিযান শেষে ফিরে আসছে ইসরায়েলি ট্যাংক। ছবি: রয়টার্স
দক্ষিণ গাজায় অভিযান শেষে ফিরে আসছে ইসরায়েলি ট্যাংক। ছবি: রয়টার্স

সোমবার এক মার্কিন কর্মকর্তা জানান, দেশটির মধ্যস্থতাকারীরা রমজান মাসের আগেই জিম্মি বিনিময় ও যুদ্ধবিরতির চুক্তি চূড়ান্ত করার জন্য চাপ দিচ্ছেন। শীর্ষ মার্কিন কর্মকর্তারাও বিষয়টি নিয়ে কাজ করছেন।

মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, 'চুক্তি চুড়ান্ত হওয়ার বিষয়টি হামাসের ওপর নির্ভর করছে'।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ম্যাথু মিলার সাংবাদিকদের বলেন, 'আমরা মনে করি একটি চুক্তি হওয়া সম্ভব এবং আমরা আশা করব হামাস সেটাতে একমত হবে।'

'হামাসকে হ্যাঁ বলতে হবে', যোগ করেন তিনি।

সোমবার বেশ কয়েকটি হিব্রু গণমাধ্যমে জ্যেষ্ঠ ইসরায়েলি কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে বলা হয়েছে, বন্দিবিনিময় চুক্তির ভবিষ্যত নিয়ে তারা হতাশ। তারা জানান, হামাস এমন ইঙ্গিত দিয়েছে যে তারা সর্বশেষ প্রস্তাবটি মেনে নেবে না।

চ্যানেল ১২, ১৩ ও কান নিউজ জানিয়েছে, প্যারিসে ইসরায়েল, যুক্তরাষ্ট্র, মিশয়র ও কাতারের মধ্যস্থাকারীদের তৈরি করা খসড়া চুক্তিতে 'হামাসের দাবি মেনে নেওয়া হয়নি'।

গাজা সিটিতে ত্রাণসামগ্রী সংগ্রহের জন্য অপেক্ষা করছেন ফিলিস্তিনিরা। ছবি: রয়টার্স
গাজা সিটিতে ত্রাণসামগ্রী সংগ্রহের জন্য অপেক্ষা করছেন ফিলিস্তিনিরা। ছবি: রয়টার্স

চ্যানেল ১২ জানায়, হামাস নেতারা ইঙ্গিত দিয়েছেন, প্রস্তাবিত চুক্তিতে কিছু এমন কিছু শর্ত আছে যা মেনে নেওয়া সম্ভব নয়।  

তবে এখনো প্যারিস প্রস্তাবে আনুষ্ঠানিক জবাব দেয়নি হামাস।

প্যারিস চুক্তির শর্তের মধ্যে আছে হামাসের হাতে জিম্মি ৪০ ব্যক্তিকে মুক্তি দেওয়া, যাদের মধ্যে নারী, শিশু, নারী সেনা, বয়স্ক ও অসুস্থরা আছেন। বিনিময়ে ছয় সপ্তাহ যুদ্ধ বন্ধ থাকবে এবং শত শত ফিলিস্তিনি বন্দিকে মুক্তি দেবে ইসরায়েল।

এখন পর্যন্ত চুক্তি চূড়ান্ত না হওয়ার কারণ হিসেবে ইসরায়েলের একটি শর্তের কথা সংশ্লিষ্টরা উল্লেখ করেছেন। ইসরায়েলের দাবি, এই চুক্তির অর্থ এই নয় যে যুদ্ধ শেষ হয়ে গেছে। যতদিন পর্যন্ত হামাসকে পুরোপুরি নিশ্চিহ্ন করা না হচ্ছে, ততদিন গাজায় ইসরায়েলি সেনা মোতায়েন থাকবে।

এ ক্ষেত্রে হামাসের দাবি ঠিক উল্টোটাই।

আল জাজিরার এক প্রতিবেদন মতে, ইসরায়েল ৪০০ ফিলিস্তিনি বন্দিদের মুক্তি দিতে রাজি হয়েছে। তাদের মধ্যে কয়েকজন গুরুতর অপরাধে অভিযুক্ত মানুষ আছেন।

কাতারের রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সূত্রের বরাত দিয়ে বলেছে, ইসরায়েল উত্তর গাজার বাস্তুচ্যুত মানুষদের সেখানে ফিরে যেতে দিতে রাজি হয়েছে। তবে যাদের 'সেনাবাহিনীতে যোগ দেওয়ার বয়স হয়েছে', তারা ফিরতে পারবেন না।

এ ছাড়া গাজায় আরও বেশি করে ত্রাণ সামগ্রী ঢুকতে দেওয়া ও অস্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণের শর্তেও রাজি হয়েছে দেশটি।

এ ছাড়া, গাজার জনবহুল এলাকা থেকে সেনা সরিয়ে নেওয়া ও যুদ্ধবিরতির অংশ হিসেবে ছয় সপ্তাহ ধরে দিনে আট ঘণ্টা করে যুদ্ধ বন্ধ রাখতেও রাজি হয়েছে তারা।

সোমবার হামাসের জ্যেষ্ঠ্য নেতা সামি আবু জুহরি রয়টার্সকে জানান, যেকোন যুদ্ধবিরতির চুক্তিতে 'আগ্রাসন বন্ধ, সেনা প্রত্যাহার, বাস্তুচ্যুতদের ফিরে আসা, ত্রাণ সামগ্রী প্রবেশে বাধা দূর, আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণের উপকরণ ও পুনর্নিমাণ সহযোগিতার বিষয়গুলো থাকতে হবে।'

তবে ছয় সপ্তাহের যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হলেও ইসরায়েল রাফাহ শহরে হামলা চালানো বন্ধ বা গাজা থেকে সেনা সরিয়ে নেওয়ার বিষয়ে আগ্রহী নয়।

সিবিএসকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে রোববার ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেন, 'আমরা যদি যুদ্ধবিরতির চুক্তি করি, তাহলে এটা (রাফাহর অভিযান) খানিকটা বিলম্বিত হবে, তবে এই অভিযান হবেই। এতে কোনো সন্দেহ নেই।'

'এই অভিযান চালাতেই হবে, কারণ আমাদের লক্ষ্য সম্পূর্ণ বিজয় এবং তা আমাদের নাগালের মধ্যেই আছে—কয়কে মাস দূরে নয়, বরং কয়েক সপ্তাহ দূরে; যখন আমরা অভিযান শুরু করব', যোগ করেন তিনি।

গত ৭ অক্টোবর ইসরায়েলি ভূখণ্ডে অতর্কিত হামলা চালায় হামাস। এতে এক হাজার ১৬০ জন নিহত হন এবং হামাসের হাতে জিম্মি হন প্রায় ২৫০ জন মানুষ। জিম্মিদের মধ্যে ১৩০ জন এখনো গাজায় আছেন এবং ৩১ জন নিহত হয়েছেন বলে জানা গেছে।

সেদিন থেকে গত প্রায় চার মাসে ইসরায়েলের প্রতিশোধমূলক নির্বিচার হামলায় ২৯ হাজার ৭৮২ জন মানুষ নিহত হয়েছেন। নিহতদের বেশিরভাগই নারী ও শিশু।

Comments