হারিয়ে যাচ্ছে আখ চাষ

লালমনিরহাট সদর উপজেলার ধরলা নদীর চর খারুয়া এলাকায় আখের রস থেকে গুড় তৈরি করছেন চাষিরা। ছবি: এস দিলীপ রায়/ স্টার

রংপুর অঞ্চলে গত চার বছরে আখের চাষ ছেড়ে দিয়েছেন বেশিরভাগ চাষি। এ বছর যে কয়েকজন চাষি আখের চাষ করেছেন তারাও হতাশ। আখ থেকে যে গুড় তৈরি করছেন তা বিক্রি করতে হচ্ছে কম দামে। আগামীতে আর আখের চাষ করবেন না, বলছেন চাষিরা।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্র জানায়, এ বছর রংপুর অঞ্চলে আখের চাষ হয়েছে ১,১৪৯ হেক্টর জমিতে। গেল বছর জমির পরিমান ছিল ১,৩৪৪ হেক্টর। ২০২০ সালে আখ চাষ হয়েছিল ৩৬,৫০০ হেক্টর জমিতে। এর আগের বছরগুলোতে ৫০ হাজারের বেশি হেক্টর জমিতে আখের চাষ হয়েছে। সুগার মিল বন্ধ হওয়ার পর থেকেই আখের চাষ কমতে শুরু করে।

জানা যায়, প্রতি হেক্টর জমি থেকে আখ উৎপন্ন হয় ৫২ হেক্টর। গুড় উৎপন্ন হয় ৪ মেট্রিক টন। প্রতি হেক্টর জমিতে আখ উৎপন্ন ও আখ থেকে গুড় উৎপন্ন করতে খরচ হয় ১ লাখ ৮০ হাজার থেকে ২ লাখ টাকা পর্যন্ত।

আখ চাষিরা দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, চরাঞ্চলের কিছু চাষি এখনো আখ চাষ করছেন। আগে চরে বিপুল পরিমান জমিতে আখ চাষ হতো। সর্বশেষ চার বছর আগে তারা চিনিকলে উৎপাদিত আখ বিক্রি করেছিলেন। সুগার মিলগুলো আখ মাড়াই বন্ধ করলে কৃষকরা আখ চাষ কমিয়ে দেন। বর্তমানে যে পরিমানে আখ চাষ হচ্ছে তা দিয়ে শুধু গুড় তৈরি করা হচ্ছে। গেল বছর তাদের উৎপাদিত প্রতিকেজি গুড় ১০০-১০৫ টাকা দরে বিক্রি করেছিলেন এবছর প্রতিকেজি গুড় বিক্রি করতে হচ্ছে ৮০-৮৫ টাকা দরে। এতে তারা চরমভাবে হতাশ।

লালমনিরহাটের ধরলা নদীর চর খারুয়া এলাকায় আখ মাড়াই করছেন চাষিরা। ছবি: এস দিলীপ রায়

লালমনিরহাট সদর উপজেলার মোগলহাট ইউনিয়নে ধরলা নদীর বুকে চর খারুয়ার কৃষক নায়েব আলী (৪২) দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, চরে এ বার ৭ জন কৃষক ১৫ বিঘা জমিতে আখ চাষ করেছেন। ৪-৫ বছর আগে ২৫০ জন কৃষক আখ চাষ করতেন। আখ হলো এক বছর মেয়াদি ফসল। চরের অনেক জমিতে অন্য ফসলের চাষ সম্ভব না হলেও আখ চাষ করা যায়। প্রতি বিঘা জমিতে আখ উৎপন্ন হয় ৫,৫০০-৬,০০০ কেজি। প্রতিকেজি গুড় উৎপন্ন করতে লাগে ১২ কেজি আখ। এক বিঘা জমির আখ দিয়ে ৪৬০-৫০০ কেজি গুড় উৎপন্ন হয়। প্রতি বিঘা জমিতে আখ উৎপন্ন  ও আখ থেকে গুড় প্রস্তুত করতে খরচ হয় ২০-২৫ হাজার টাকা।

'গেল বছর গুড় বিক্রি করে আমরা লাভবান হয়েছিলাম। এবছর তেমন  লাভ করতে পারছি না। হতাশ আমরা। তাই আগামীতে আর আখচাষ করব না বলে ঠিক করেছি,' তিনি বলেন।

একই এলাকার আখ চাষি বাদশা মিয়া (৫৫) বলেন, আখ চাষ ও আখ থেকে গুড় তৈরি করতে অনেক পরিশ্রম হয়। আখ উৎপন্ন করতে এক বছর লাগে। আগে আখ চাষ করতে সুগার মিল থেকে প্রণোদনা পেতেন। আখ সুগার মিলে বিক্রি করতাম। তাতে তারা লাভবান হতেন। এখন উৎপাদিত আখ থেকে শুধু গুড় প্রস্তুত করছেন। গুড়ের বাজারদরও ওঠানামা করায় তারা হতাশ।

আখের গুড়ের দাম কমে যাওয়ায় আখ চাষে আগ্রহ হারাচ্ছেন চাষিরা। ছবি: এস দিলীপ রায়/ স্টার

লালমনিরহাট শহরের গুড় ব্যবসায়ী ফজল মিয়া দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, বাজারে গুড়ের চাহিদা কমেছে। এছাড়া ভারত থেকে গুড় আমদানি হচ্ছে। এ কারণে কৃষকের উৎপাদিত গুড় গেল বছরের তুলনায় কমদামে বিক্রি হচ্ছে। বর্তমানে প্রতিকেজি গুড় ১২০-১২৫ টাকা পাইকারী দরে বিক্রি হচ্ছে। কৃষকের উৎপাদিত গুড় পুনরায় পরিশোধিত করে বাজারে বিক্রি করতে হয় বলে তিনি জানান।

লালমনিরহাট কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক সৈয়দা সিফাত জাহান দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, চরাঞ্চলে কিছু চাষি আখ চাষ করলেও সমতলে আখ চাষ শূন্যের কোটায় নেমেছে। আখ চাষে এক বছর সময় লাগে। এখন কৃষকরা এক বছরে ৩-৪টি ফসল উৎপন্ন করছেন। আখ চাষের ঐতিহ্য ফিরে আসার কোনো সম্ভাবনা নেই।

Comments

The Daily Star  | English

Make right to vote a fundamental right

The Constitutional Reform Commission proposes voting to be recognised as a fundamental right, so that people can seek legal remedies if it is violated.

14h ago