‘হ মামা, না মামা’র মতো কমান্ডে প্রোগ্রামিং শেখাবে ‘মামা ল্যাং’
প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজ শেখা যে কোনো মানুষের জন্য কঠিন হতে পারে। প্রোগ্রামিং নিয়ে প্রাথমিক ভয়-ভীতি দূর করতে টয় প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজ হতে পারে একটি দারুণ সমাধান। সেরকমই একটি সমাধান হলো বাংলা ভাষার টয় ল্যাঙ্গুয়েজ 'মামা ল্যাং'
সংশ্লিষ্টদের মতে, শিক্ষানবিশ প্রোগ্রামারদের জন্য মামা ল্যাং একটি আশীর্বাদ যা এই খাতে বাংলাভাষীদের আরও এগিয়ে নিয়ে যাবে।
মামা ল্যাং কী?
মামা ল্যাংয়ের উদ্ভাবক আহনাফ প্রিয় দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'মামা ল্যাং একটি অনন্য ও বিশেষায়িত প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজ যা ব্যবহার করে আপনারা মজা পাবেন। এটি ঢাকা ও বাংলাদেশের পারিপার্শ্বিকতা, ঐতিহ্য ও কৃষ্টিকে ঘিরে তৈরি করা হয়েছে। এমন কী, এর নামটাও এসেছে বাংলা শব্দ 'মামা' থেকে। বলাই বাহুল্য, এটা এমন এক শব্দ যা আমরা প্রতিদিনের কথোপকথনে ব্যবহার করে থাকি।'
আহনাফ ভারতের 'ভাই ল্যাং' প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজের সাফল্য থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে বাংলা ভাষায় একই ধরনের একটি টয় প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজ তৈরি করতে উদ্যোগী হন।
শিক্ষার্থীদের সুবিধার জন্য আহনাফ মামা ল্যাংকে জাভাস্ক্রিপ্টের ভিত্তিতে তৈরি করতে চেয়েছেন, কেননা এটাই বর্তমান বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজ।
এ নিয়ে আহনাফের বক্তব্য হচ্ছে, 'মামা ল্যাং মানুষের মধ্যে জাভাস্ক্রিপ্ট নিয়ে আগ্রহ তৈরি করবে এবং অন্যান্য জাভাস্ক্রিপ্ট প্রজেক্টে কাজ করতে সহায়তা করবে।'
মামা ল্যাং কীভাবে কাজ করে?
আহনাফের মতে, 'মামা ল্যাং শুধু একটি প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজ হিসেবেই ডিজাইন করা হয়নি বরং এতে রয়েছে একটি স্পষ্ট সাংস্কৃতিক ও মজাদার বার্তা– যা শিক্ষানবিশ ও অভিজ্ঞ, উভয় ধরনের প্রোগ্রামারের কাজে লাগবে।'
বাংলা ভাষার নিজস্ব এই প্রোগ্রামিং ভাষাটি জাভাস্ক্রিপ্টের সঙ্গে সরাসরি যুক্ত তাই জাভাস্ক্রিপ্টে লিখতে পারা যায়, এমন সবকিছুই মামা ল্যাং ব্যবহার করেও লেখা সম্ভব।
ভ্যারিয়েবল, টাইপ, আউটপুটের বিল্ট-ইন, কন্ডিশনাল এবং লুপের মতো পরিচিত সকল ধরনের প্রোগ্রামিং উপাদানই পাওয়া যাবে মামা ল্যাং-এ, কিন্তু এতে থাকবে একটি বিশেষ ধরনের 'স্থানীয় চমক'।
যেমন ভ্যারিয়েবলের ক্ষেত্রে 'মামা এইডা হইলো' এবং হ্যাঁ বা নায়ের বদলে বুলিয়ান ভ্যালুগুলো প্রকাশ করা হয় 'হ মামা' এবং 'না মামা' দিয়ে। আহনাফের উদ্দেশ্য হচ্ছে জটিল বা কঠিন শব্দের বদলে নিত্যব্যবহার্য শব্দগুলো এনে প্রোগ্রামিংকে আনন্দময় করে তোলা।
'মামা ল্যাংয়ের এই বাক্য গঠন প্রক্রিয়া আসলে ঢাকার দৈনন্দিন আলাপ থেকেই নেয়া, এতে করে প্রোগ্রামিং আরও স্বচ্ছন্দ ও আনন্দময় হয়ে ওঠবে। বাঙালিরা এ ধরনের সুযোগ খুব একটা পান না বলেই আমার ধারণা', যোগ করেন আহনাফ।
আহনাফ এর পরিচয়
প্রকৌশলী আহনাফ যুক্তরাষ্ট্রের মিনেসোটা বিশ্ববিদ্যালয়ে কম্পিউটার বিজ্ঞান নিয়ে পড়াশোনা করেছেন। স্নাতক শিক্ষাজীবনের প্রথমদিকে কোডিং বিষয়ে তেমন একটা দক্ষতা না থাকলেও পরবর্তী সময়ে বেশ পটু হয়ে উঠেছেন তিনি– যার ফলস্বরূপ আজ বাংলাভাষীরা পেয়েছে মামা ল্যাং।
আহনাফের ধারণা, দৈনন্দিন জীবনে ব্যবহৃত ভাষা বা নামের সঙ্গে সম্পর্কিত এ ধরনের সহজ প্রোগ্রামিং ভাষা থাকলে বাংলাভাষীদের জন্য প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজের চর্চা আরও অনেক সহজ ও স্বচ্ছন্দ হয়ে উঠবে।
তিনি বলেন, 'প্রথম প্রথম আমার কোডিং তেমন একটা ভালো লাগতো না– কিন্তু এখন অনেক বেশি উপভোগ করি। আমি আশাবাদী যে অন্যান্য বাঙালির ক্ষেত্রে এসব বাধাবিপত্তি কাটিয়ে ওঠার জন্য মামা ল্যাং বেশ কাজে লাগবে।'
বর্তমানে আহনাফ হ্যালিকন নামে নিজের একটি সফটওয়্যার কনসাল্টিং ফার্ম পরিচালনা করছেন। তিনি বহুজাতিক ইলেকট্রনিক্স পণ্য খুচরা বিক্রেতা প্রতিষ্ঠান বেস্টবাইর সফটওয়্যার আর্কিটেকচার উপদেষ্টা হিসেবে কাজ করেছেন। এর আগে তিনি মিনেসোটায় একটি রেস্টুরেন্ট মার্কেটিং স্টার্টআপের সহ-প্রতিষ্ঠাতা হন এবং এ মুহূর্তে ইনভাইভ নামের লাইফ ইনস্যুরেন্স স্টার্টআপ নিয়ে কাজ করছেন
মামা ল্যাং বিষয়ে আরো জানতে ক্লিক করুন।
আহনাফের সম্পর্কে জানতে ক্লিক করুন তার গিটহাব পেজে।
ইংরেজি থেকে ভাবানুবাদ করেছেন অনিন্দিতা চৌধুরী
Comments