সমর্থনকারীদের এক শতাংশ ভোটও পাননি ১৫৯ স্বতন্ত্র প্রার্থী

নীলফামারী-৩ সংসদীয় আসনের মোট ভোটার ২ লাখ ৭৫ হাজার ৩৪১ জন। স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার জন্য নির্বাচন কমিশন আইন অনুযায়ী, একজন প্রার্থীকে মোট ভোটারের এক শতাংশের স্বাক্ষর মনোনয়নপত্রের সঙ্গে জমা দিতে হয়েছিল। যার সংখ্যা ছিল- ২ হাজার ৭৫৩।

এই আসনে মোড়া প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করে আবু সাইদ শামীম পেয়েছেন ৩৮ ভোট। যা দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে সবনিম্ন ভোট। অর্থাৎ তার সমর্থনকারীদের মধ্যে ২ হাজার ১৫ জন তাকে ভোট দেয়নি। একই আসন থেকে ট্রাক প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করে আরেক স্বতন্ত্র প্রার্থী হুকুম আলী খান পেয়েছেন ৯৪ ভোট। অর্থাৎ এই এক আসন থেকেই দুই জন স্বতন্ত্র প্রার্থী তাদের সমর্থনকারী এক শতাংশ ভোটারের ভোট পাননি।

এই দুই জনের মতো সারাদেশের ৪৩৭ জন স্বতন্ত্র প্রার্থীর মধ্যে ১৫৯ জন অর্থাৎ ৩৬ দশমিক ৩৯ শতাংশ প্রার্থী মোট ভোটারের এক শতাংশ ভোট পাননি। যার মধ্যে পাঁচ জন প্রার্থী ১০০ ভোটও পাননি।

ঢাকা ১৪ আসনে পাঁচ জন স্বতন্ত্র প্রার্থীর মধ্যে চার জন প্রার্থীই এক শতাংশ ভোট পাননি। এ আসনের মোট ভোটারের সংখ্যা ছিল ৪ লাখ ১৮ হাজার ২১২ জন। অর্থাৎ ওই স্বতন্ত্র প্রার্থীরা চার হাজার ১৮২ জনের স্বাক্ষর নিয়ে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছিলেন। কিন্তু পাঁচ জনের মধ্যে একজন ছাড়া বাকি চার জন কেউই দুই হাজার ভোটও পাননি। তিন জন পেয়েছেন এক হাজারের নিচে।

এই আসনে যেখানে স্বতন্ত্র প্রার্থীদের ৪ হাজার ১৮২টি করে ভোটার স্বাক্ষরের প্রয়োজন ছিল, সেখানে পাঁচ জনের মধ্যে চারজন এক শতাংশ ভোটও পাননি। কাজী ফরিদুল হক, জেড আই রাসেল, মোহাম্মদ মহিবুল্লাহ ও মোহাম্মদ ইমরুল কায়েস খান পেয়েছেন যথাক্রমে ১ হাজার ৫৮৪, ৫৪৬, ৬৬৬ ও ১১৯ ভোট।

যোগাযোগ করা হলে, ইমরুল কায়েস বলেন, 'যখন একজন ভোটার প্রার্থীর পক্ষে স্বাক্ষর করেন, তখন তাদের ভয় দেখানোসহ অন্যান্য বিষয়ের মুখোমুখি হতে হয়। অন্য প্রতিযোগীরা যখন ভোটারের আনুগত্য সম্পর্কে জানতে পারেন, তখন তারা প্রায়শই বিভিন্ন উপায়ে ভোটারকে প্রভাবিত করতে চেষ্টা করেন। এতে, যে সমর্থকরা প্রাথমিকভাবে তাদের পছন্দের প্রার্থীকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল তারা তখন অন্য কোনো প্রার্থীকে ভোট দিতে পারে।'

তিনি বলেন, ভয়ভীতির কারণে অনেকে ভোট দিতে যান না।

গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের (আরপিও) ১২ (৩ক) (ক) বিধান অনুযায়ী, নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থীর ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট নির্বাচনী এলাকার এক শতাংশ ভোটারের সমর্থন-সম্বলিত স্বাক্ষরযুক্ত তালিকা মনোনয়নপত্রের সঙ্গে যুক্ত করে দিতে হবে। তবে কোনো স্বতন্ত্র প্রার্থী ইতোপূর্বে জাতীয় সংসদের কোনো নির্বাচনে সদস্য নির্বাচিত হয়ে থাকলে ওই তালিকা দেওয়ার প্রয়োজন হবে না।

২০০৮ সালের নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচন থেকে এ বিধান প্রচলন করা হয়েছে। ড. শামসুল হুদার নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশন এ বিধান প্রচলন করেন।

সেই কমিশনের কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমাদের উদ্দেশ্য ছিল- ঢালাওভাবে স্বতন্ত্র প্রার্থীর নির্বাচনে অংশ নেওয়া বন্ধ করা। কারণ, এসব প্রার্থীরা পোলিং এজেন্ট বিক্রি করাসহ নির্বাচন কমিশন থেকে প্রদত্ত সুবিধাদি বড় ও মাঝারি দলের প্রার্থীদের কাছে বিক্রি করে দিতেন। যার জন্য আমরা প্রার্থিতার শৃঙ্খলা বজায় রাখার স্বার্থে এ বিধান চালু করেছিলাম।'

'আমি মনে করে, প্রার্থিতার শৃঙ্খলা রক্ষার স্বার্থে এ বিধান চালু থাকার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে।'

তিনি বলেন, 'আমরা এক শতাংশ ভোটারের সমর্থনের কথা বলেছিলাম। এর মানে কিন্তু এক শতাংশ ভোট পাওয়া নয়। হয়তো তারা টাকা দিয়ে বা প্রভাব খাটিয়ে সমর্থকদের স্বাক্ষর নিয়ে জমা দেন, এ কারণে হয়তো তারা এক শতাংশ ভোটও পান না।'

এ বিষয়ে সাবেক নির্বাচন কমিশনার রফিকুল ইসলাম দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'স্বতন্ত্র প্রার্থীদের এক শতাংশ ভোটারের সমর্থনের বিষয়টি সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। কারণ, সংবিধানে বলা আছে, কারো বয়স ২৫ বছর হলে তিনি নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন। কিন্তু এখানে একটি বাধা রাখা হয়েছে। সে সঙ্গে যারা তাকে সমর্থন দিচ্ছেন, তাদের নাম কিন্তু ডিসক্লোজ হয়ে যাচ্ছে। ফলে যারা বেশি ক্ষমতাবান, তারা এসব সমর্থনকারীদের ওপরে চাপ প্রয়োগ করতে পারেন।'

স্বতন্ত্রদের ভোট পাওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, 'মনোনয়নপত্রের সঙ্গে স্বতন্ত্র প্রার্থীরা যে স্বাক্ষর দিয়েছেন, তারা কিন্তু তাকে সমর্থন করেছেন। তাকে ভোট দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেননি।'

এটির থাকা না থাকার বিষয়ে তিনি বলেন, 'আমাদের কমিশন (নূরুল হুদা কমিশন) এটি বাদ দেওয়ার বিষয়ে আলোচনা করেছিল। কিন্তু পরবর্তীতে এটি আর বাতিল করা হয়নি। এটির একটি কারণ হলো এটি এখন রীতিতে পরিণত হয়েছে। তবে আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি, এক শতাংশ সমর্থনকারীর বিষয়টি থাকা উচিত নয়।'

Comments

The Daily Star  | English
The Indian media and Bangladesh-India relations

The Indian media and Bangladesh-India relations

The bilateral relationship must be based on a "win-win" policy, rooted in mutual respect, non-hegemony, and the pursuit of shared prosperity and deeper understanding.

7h ago