আ. লীগের ‘স্বতন্ত্র’ কৌশল ও শক্তিশালী প্রার্থীদের পরাজয়

এবারের সংসদ নির্বাচনকে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ দেখাতে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা যে কৌশল নিয়েছিলেন, তা এতটা ভালো কাজ করেছে যে গতকালের ভোটে দলের বেশ কয়েকজন প্রার্থী স্বতন্ত্র প্রার্থীদের কাছে পরাজিত হয়েছেন।

দলীয় মনোনীত প্রার্থী, আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোটের শীর্ষ নেতা এবং জাতীয় পার্টি থেকে অনুরোধ আসার পরও 'স্বতন্ত্র' প্রার্থীদের ভোটের লড়াইয়ে থাকার বিষয়ে শেখ হাসিনা তার অবস্থানে অনড় ছিলেন।

হবিগঞ্জ-৪ আসনে ১ লাখ ৫১ হাজার ভোটের ব্যবধানে স্বতন্ত্র প্রার্থী ও যুবলীগ নেতা সৈয়দ সায়েদুল হক সুমনের কাছে পরাজিত হয়েছেন বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মাহবুব আলী।

ঢাকা-১৯ আসনে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা প্রতিমন্ত্রী এনামুর রহমান হেরেছেন। দলের দুই স্বতন্ত্র প্রার্থীর কারণে শুধু হারেননি তিনি, হয়েছেন তৃতীয়। এ আসনে জয়ী হয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী আশুলিয়া আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাইফুল ইসলাম। দ্বিতীয় হয়েছেন আরেক স্বতন্ত্র আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য তৌহিদ জং মুরাদ।

যশোর-৫ আসনে আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থী ইয়াকুব আলীর কাছে পরাজিত হয়েছেন পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় প্রতিমন্ত্রী স্বপন ভট্টাচার্য।

এক দশক আগে এ আসনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী খান টিপু সুলতানকে পরাজিত করে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে সংসদ সদস্য হয়েছিলেন স্বপন।

ফরিদপুর-৪ আসনে আওয়ামী লীগের আরেক আলোচিত স্বতন্ত্র প্রার্থী মুজিবুর রহমান চৌধুরী নিক্সন তৃতীয়বারের মতো দলের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির কো-চেয়ারম্যান কাজী জাফরুল্লাহকে পরাজিত করেছেন।

আওয়ামী লীগের সাংস্কৃতিক বিষয়ক সম্পাদক ও নেত্রকোনা-৩ আসনে দলীয় মনোনীত প্রার্থী অসীম কুমার উকিল স্বতন্ত্র প্রার্থী ইফতিকার উদ্দিন তালুকদার পিন্টুর সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করলেও প্রায় ২ হাজার ভোটে পরাজিত হয়েছেন।

আওয়ামী লীগের মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সম্পাদক ও মুন্সীগঞ্জ-৩ আসনে দলীয় মনোনীত প্রার্থী মৃণাল কান্তি দাস স্বতন্ত্র ও মুন্সীগঞ্জ পৌরসভার সাবেক মেয়র মোহাম্মদ ফয়সালের কাছে পরাজিত হয়েছেন।

অন্যদিকে, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) সভাপতি হাসানুল হক ইনু কুষ্টিয়া-২ জোটের প্রার্থী হয়ে নৌকা প্রতীকে নির্বাচন করেছিলেন। স্বতন্ত্র প্রার্থীরা যেন নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ায়, সেজন্য কিছু করার জন্য তিনি বারবার আওয়ামী লীগ সভাপতিকে অনুরোধ করেছিলেন। কিন্তু, শেখ হাসিনা অনড় অবস্থানে ছিলেন। অবশেষে ইনু সাবেক ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান কামারুল আরাফিনের কাছে হেরে গেলেন।

মাদারীপুর-৩ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ছিলেন দলের প্রচার ও প্রকাশনা বিষয়ক সম্পাদক আবদুস সোবহান গোলাপ। গত ৩০ ডিসেম্বর মাদারীপুরে প্রধানমন্ত্রীর জনসভায় তিনি স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাদের প্রবেশে বাধা দিয়েছিলেন বলে অভিযোগ উঠেছিল। এর ফলাফল পেয়েছেন তিনি কালকিনি উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি স্বতন্ত্র প্রার্থী তাহমিনার কাছে হেরে।

নির্বাচনে প্রার্থী দেওয়া নিয়ে দফায় দফায় বৈঠকের পর ১৪ দলীয় জোটের তিন শরিক দলকে আওয়ামী লীগ ছয় আসন ছাড়ে। এর মধ্যে শুধু বরিশাল-২ থেকে ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন এবং বগুড়া-৪ আসনে জাসদের রেজাউল করিম তানসেন জয়ী হয়েছেন।

পিরোজপুর-২ আসনে জাতীয় পার্টির (জেপি-মঞ্জু) চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন মঞ্জু তার এক সময়ের এপিএস মহিউদ্দিন মহারাজের কাছে পরাজিত হয়েছেন। পিরোজপুর জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সম্পাদক ও সাবেক জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মহারাজ এই আসনে মঞ্জুর প্রধান রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে পরিচিত।

সংসদের প্রধান বিরোধী দল জাতীয় পার্টি নিজেদের প্রার্থীদের লড়াই সহজ করতে আওয়ামী লীগকে রাজি করিয়েছিল ২৬ প্রার্থীর প্রার্থিতা প্রত্যাহার করতে।

কিন্তু, প্রধান বিরোধী দলের এ কৌশল পুরোপুরি ব্যর্থ হয়েছে। ওই ২৬ আসনের মধ্যে ১৫টিতে আওয়ামী লীগের নেতারা স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য হয়েছেন।

আওয়ামী লীগের সঙ্গে আসন ছাড়ের বিষয়টি মীমাংসার পর ১৪ দলীয় জোট এবং জাতীয় পার্টির নেতারা ক্ষমতাসীনদের শীর্ষ নেতাদের অনুরোধ করেন যেন আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থীরা ভোট থেকে সরে দাঁড়ায়। কিন্তু ক্ষমতাসীন দল এ অনুরোধ রাখেনি।

ঢাকা-১৮ আসনে জাপা চেয়ারম্যান জি এম কাদেরের স্ত্রী শেরিফা কাদেরের বিপরীতে কোনো আওয়ামী লীগ প্রার্থী থাকবে না, এমন সিদ্ধান্তের পর জাপা নির্বাচনে অংশ নিতে রাজি হয়। কিন্তু ভোটের ফলাফলে শেরিফা কাদের মাত্র ৬ হাজার ৪২৯ ভোট পেয়ে এখন জামানত হারাতে যাচ্ছেন। এ আসনে আওয়ামী লীগ নেতা স্বতন্ত্র প্রার্থী খসরু চৌধুরী বিজয়ী হয়েছেন।

বরগুনা-১ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ও টানা তিনবারের সংসদ সদস্য ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভু তৃতীয় হয়েছেন। জয়ী হয়েছেন বরগুনা জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক গোলাম সারোয়ার টুকু।

গাজীপুর-৫ আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য ও মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সাবেক প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজ চুমকি প্রায় ১২ হাজার ভোটের ব্যবধানে হেরেছেন দলের নেতা ও ঢাকসুর সাবেক ভিপি আক্তারুজ্জামানের কাছে।

স্বতন্ত্র ও আওয়ামী লীগ প্রার্থীর মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতা নিয়ে আলোচনায় ছিল ফরিদপুর-৩ আসন। গতকাল ভোটের পর ফরিদপুর জেলা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা স্বতন্ত্র প্রার্থী এ কে আজাদের কাছে পরাজিত হয়েছেন জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শামীম হক।

এছাড়া, আওয়ামী লীগের টানা তিনবারের সংসদ সদস্য মমতাজ বেগমকে মানিকগঞ্জ-২ আসনে পরাজিত করেছেন দলের স্বতন্ত্র প্রার্থী দেওয়ান জাহিদ আহম্মেদ।

 

Comments

The Daily Star  | English
compensation for uprising martyrs families

Each martyr family to get Tk 30 lakh: Prof Yunus

Vows to rehabilitate them; govt to bear all expenses of uprising injured

5h ago