শিশু কিছু খেতে চায় না, কী করবেন

শিশু
ছবি: সাজ্জাদ ইবনে সাঈদ

বাচ্চা একদম খেতে চায় না, খাওয়া নিয়ে খুব সমস্যা করে—এমন অভিযোগ প্রায় প্রত্যেক মায়ের। বিশেষত ছয় মাস বয়সী থেকে পাঁচ বছর বয়সী শিশুদের মধ্যে খেতে না চাওয়ার প্রবণতা বেশি লক্ষ করা যায়।

সমস্যাটি কীভাবে সমাধান করবেন সে বিষয়ে পরামর্শ দিয়েছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী কল্যাণ ও পরামর্শদান কেন্দ্রের উপপরিচালক (মনোবিজ্ঞান) ইফরাত জাহান

ইফরাত জাহান বলেন, 'এই সমস্যাটি যতটা শরীরের, ততটাই মনের। জন্মের পর প্রথম ছয় মাস শিশু শুধু বুকের দুধ খেয়ে ক্ষুধা মিটিয়ে থাকে। তারপর ধীরে ধীরে যখন তাকে বাড়তি খাবার দেওয়া হয়, স্বাদের ভিন্নতার সঙ্গে মানিয়ে একটু সময় লাগে। এই সময়টায় শিশুর পেট ভরবে না বলে অনেক বাবা-মা জোর করে বাচ্চাকে খাওয়ানো শুরু করেন। এতে বাচ্চার মধ্যে খাবার নিয়ে অনীহা শুরু হয়।'

তিনি আরও বলেন, `আজকালকার শিশুরা ফোন দেখে খেতে অভ্যস্ত। যেহেতু তারা ফোনে বুদ হয়ে থাকে, কী খাচ্ছে তা নিয়ে মাথা ঘামায় না। তাই ফোন দেখে শিশুকে খাওয়ানো, শিশুর খাদ্য গ্রহণের জন্য ফলপ্রসূ উপায় হলেও এটি তার মুখের স্বাদ নষ্ট করে দেয়।'

শিশুর খেতে না চাওয়ার আরও কিছু কারণ হিসেবে মনোবিদ ইফরাত জাহান চিহ্নিত করেছেন-

বৈচিত্র্য না থাকা

প্রতিদিন এক ধরনের খাবার খেলে শিশুরা খাওয়ার প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলে।

খাবারের ঘনত্ব ঠিক না থাকা

বেশি তরল বা একদম ব্লেন্ড করা খাবার দিলে অনেক শিশু খাবারের স্বাদ বুঝতে পারে না। আবার শক্ত বা থকথকে খাবারেও শিশুদের গিলতে সমস্যা হয়।

বুকের দুধের পরপর বাড়তি খাবার দেওয়া

শিশুদের পাকস্থলী আকারে বেশ ছোট থাকে। তাই দুধ খাওয়ার পরপরই ভারী খাবার দিলে শিশুরা খেতে চায় না। কারণ দুধই তাদের পেটের অনেকখানি ভরিয়ে ফেলে।

ঘন ঘন খাবার দেওয়া

বাবা-মা মনে করেন, বাচ্চাকে পেট ভরে খাওয়ানোই তার প্রথম ও প্রধান দায়িত্ব। তাই পেট ভরেনি ভেবে কেউ কেউ কিছুক্ষণ পর পর শিশুকে খাওয়াতে চান। খানিকটা বাবা-মায়ের মন না ভরা পর্যন্ত শিশুর পেট ভরবে না, এমন ব্যাপার। মনে রাখবেন, এমনকিছু করা ঠিক হবে না যাতে শিশুর খাবারের প্রতি ভীতি জন্ম নেয়।

বাইরের খাবারের প্রতি আগ্রহ

চকলেট, চিপস, জুস, ললিপপ ইত্যাদি শিশুর খাওয়ার রুচি নষ্ট করে ফেলে। এ বয়সে শিশুরা যদি এ ধরনের বাইরের খাবারের অভ্যস্ত হয়ে যায়, তাহলে ঘরে তৈরি খাবারের প্রতি অনীহা কাজ করে।

এই সমস্যার সমাধানে করণীয় হিসেবে কিছু পরামর্শ দিয়েছেন মনোবিদ ইফরাত জাহান-

পর্যবেক্ষণ করুন

আপনার শিশু ঘরে তৈরি কোন খাবারটি আগ্রহ নিয়ে খাচ্ছে এটি লক্ষ করুন। কিন্তু প্রতিদিন দেবেন না। এতে সেই খাবারের প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলবে। ২/৩ দিন পর পর বানিয়ে দিন। আগ্রহের সঙ্গে খাবে।

স্বাদ পরিবর্তন করুন

শিশুকে খাওয়াতে আপনাকে অবশ্যই কৌশলী হতে হবে। যেমন- আপনার বাচ্চা যদি দুধ ডিম একবারেই খেতে না চায়, সেক্ষেত্রে ডিম দুধ দিয়ে পুডিং বানিয়ে দিতে পারেন। মাছ-মাংস খেতে না চাইলে অন্য যে খাবারটি পছন্দ করছে, তার মধ্যে মাছ মাংস ব্লেন্ড করে দিতে পারেন।

ক্ষুধা তৈরি করা

শিশুর মধ্যে ক্ষুধা তৈরি হওয়ার সময় দিতে হবে। এতে সে নিজেই খাবার খেতে আগ্রহী হবে। আপনার বাচ্চার যদি কথা বলার বয়স হয়, সেক্ষেত্রে মাঝে মাঝে তাকে জিজ্ঞেস করবেন, তার কী খেতে ইচ্ছা করছে। এতে ওই খাবারের প্রতি আগ্রহ জন্ম নিতে পারে।

আনন্দিত রাখা

শিশুরা সাধারণত চঞ্চল ও দুরন্ত প্রকৃতির হয়। খাবারের চেয়ে খেলাধুলার প্রতি তাদের আগ্রহ বেশি থাকে। খেলাধুলা করলে শিশুর মন যেমন ভালো থাকবে, তেমনি ক্ষুধাও পাবে। খেলতে খেলতে খেতে চাইলে তাতে বাধা দেওয়া ঠিক নয়।

সব শিশু সমান নয়

একজনের বাচ্চা বেশি খেতে পারছে বলে তার দেখাদেখি আপনার বাচ্চাকে একই পরিমাণ খাওয়াতে হবে, এই ভাবনা অমূলক। বড়দের মধ্যে যেমন ভিন্নতা আছে, ছোটদের মধ্যেও আছে। যদি বাচ্চা একেবারেই কম খায়, সেক্ষেত্রে কিছুক্ষণ পর পর পুষ্টিকর খাবার খাওয়ানোর চেষ্টা করবেন।

শিশুকে নাদুসনুদুস বানানোর চেয়ে সুস্থ রাখা বেশি জরুরি। তাই যদি মনে হয়, শিশুর শরীরে পুষ্টির অভাব হচ্ছে বা খাওয়ার অভাবে অসুস্থ হয়ে যাচ্ছে, সেক্ষেত্রে শিশু বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

 

Comments

The Daily Star  | English

Dengue cases see sharp rise in early July

Over 1,160 hospitalised in first 3 days, total cases cross 11,000

11h ago