পোশাক কারখানায় স্বাভাবিক অবস্থা ফিরছে

পোশাকশ্রমিক
ছবি: সংগৃহীত

ন্যূনতম মজুরি নিয়ে দুই সপ্তাহেরও বেশি সময় ধরে চলা অস্থিরতার পর প্রায় সব কারখানায় শ্রমিকরা কাজে যোগ দেওয়ায় পোশাক খাতে স্বাভাবিক অবস্থা ফিরতে শুরু করেছে।

গতকাল মঙ্গলবার রাজধানী ও এর আশেপাশের এলাকায় এমন দৃশ্য দেখা যায়।

তবে, বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) সভাপতি ফারুক হাসান দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, আশুলিয়ার কয়েকটি কারখানা এখনো চালু হয়নি।

তিনি বলেন, 'শ্রমিকরা কর্মস্থলে ফিরছেন। আশা করছি, সব কারখানা খুলে দেওয়া হবে।'

গতকাল রাজধানীর মিরপুর এলাকায় দুয়েকটি কারখানার শ্রমিকরাও কাজে যোগ দেননি। তারা মিরপুর ১০ নম্বর সেকশনে কয়েক ঘণ্টা ধরে বিক্ষোভ করেছেন।

সব পক্ষের প্রতিনিধিদের নিয়ে সরকারের ন্যূনতম মজুরি বোর্ডের গত ৭ নভেম্বর ঘোষিত ন্যূনতম মাসিক মজুরি গ্রহণ করেনি শ্রমিকদের একটি অংশ। তারা ন্যূনতম মজুরি ২৩ হাজার টাকা দাবি করে আসছেন।

পোশাক শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি আট হাজার টাকা থেকে বাড়িয়ে সাড়ে ১২ হাজার টাকা করা হয়েছে। বর্তমানে এটি ১১৩ ডলার ৬৩ সেন্টের সমান।

এই নতুন মজুরি আগামী ১ ডিসেম্বর থেকে কার্যকর হবে। শ্রমিকরা জানুয়ারিতে নতুন কাঠামোয় বেতন পাবেন।

সম্মিলিত গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি নাজমা আক্তার ডেইলি স্টারকে বলেন, 'শ্রমিকরা কাজে ফিরে আসায় প্রায় সব কারখানা খুলে দেওয়া হয়েছে। গার্মেন্টস খাতে স্বাভাবিক অবস্থা ফিরে আসতে শুরু করেছে।'

বাংলাদেশ অ্যাপারেলস ওয়ার্কার্স ফেডারেশনের সভাপতি তৌহিদুর রহমানও ডেইলি স্টারকে একই কথা জানান।

বিজিএমইএ সভাপতি আমেরিকান অ্যাপারেল অ্যান্ড ফুটওয়্যার অ্যাসোসিয়েশনকে (এএএফএ) আরেকটি চিঠি পাঠিয়ে মজুরি বৃদ্ধির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে সংগঠনটির আওতাধীন খুচরা বিক্রেতা ও ব্র্যান্ডের কাছ থেকে দাম বাড়ানোর অনুরোধ জানিয়েছেন।

গত ১১ অক্টোবর বেশ কয়েকটি খুচরা বিক্রেতা ও ব্র্যান্ডকে উদ্দেশ্য করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে শ্রমিক অসন্তোষের বিষয়ে জরুরি ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানিয়ে চিঠি দেওয়া হয়।

রিটেইলার ও ব্র্যান্ডগুলো হলো—এইও ইঙ্ক, অ্যাবারক্রোম্বি অ্যান্ড ফিচ, অ্যাডিডাস, আমের স্পোর্টস, বার্টন, গ্যাপ ইঙ্ক, হুগো বস এজি, কেএমডি ব্র্যান্ডস, লেভি স্ট্রাউস অ্যান্ড কোং, লুলুলেমন, প্যাটাগোনিয়া, পুমা এসই, পিভিএইচ কর্পোরেশন, সানমার, আন্ডার আর্মার ও এএলডিআই সাউথ গ্রুপ।

ফারুক হাসান জানান, আজ বিজিএমইএ বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক উৎপাদনকারী খুচরা বিক্রেতা ও ব্র্যান্ডগুলোর সঙ্গে বৈঠক করতে যাচ্ছে।

তিনি বলেন, 'শ্রমিকদের অস্থিরতা সম্পর্কে তাদের আপডেট করা হবে। মজুরি বাড়ানোর সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে তাদেরকে পণ্যের দাম বাড়িয়ে দিতে বলা হবে।'

চিঠিতে ফারুক হাসান বলেছেন, নতুন ন্যূনতম মজুরি এমন এক সময়ে এসেছে যখন বাংলাদেশের পাশাপাশি বিশ্ব অর্থনীতিও নজিরবিহীন পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, 'বাংলাদেশের পোশাকশিল্প সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। ক্রমবর্ধমান মূল্যস্ফীতির ছাড়াও জ্বালানি, গ্যাস, বিদ্যুৎ ও পরিবহনসহ খাতে খরচ উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে।'

চিঠিতে বলা হয়েছে, 'এখন বৈশ্বিক জলবায়ু কর্ম-পরিকল্পনার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে আমাদের কারখানাগুলো কার্বন দূষণ কমাতে ও সম্পদ সাশ্রয়ী হতে আরও বিনিয়োগ করছে।'

এতে আরও বলা হয়—শুধু তাই নয়, কর্মস্থলের নিরাপত্তা ও শ্রমিকদের স্বাচ্ছন্দ্য নিশ্চিত করতে এবং ক্লান্তি কমাতে কারখানাগুলো মেশিন, কর্ম প্রক্রিয়া ও উৎপাদন পদ্ধতি উন্নত করছে।

বিজিএমইএ সভাপতি ফারুক হাসান বলেন, 'বর্তমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে নতুন মজুরি কাঠামো বাস্তবায়ন করা অনেক কারখানার জন্য চ্যালেঞ্জিং হবে। তবে শ্রমিকদের সম্মানজনক জীবনযাপন নিশ্চিত করা কারখানার মালিকদের পাশাপাশি বৈশ্বিক ব্র্যান্ড ও খুচরা বিক্রেতাদেরও সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার।'

চিঠিতে আরও বলা হয়েছে, 'যেহেতু নতুন মজুরি কাঠামো গ্রহণ করেছি, তাই আমরা এর বাস্তবায়ন নিশ্চিত করব। দায়িত্বশীল ক্রয় অনুশীলনের ক্ষেত্রে আপনাদের সমর্থন প্রয়োজন।'

এতে আরও বলা হয়, 'কারখানায় নিরবচ্ছিন্ন ও মসৃণ কার্যক্রম নিশ্চিত করতে ১ ডিসেম্বর থেকে যেসব পণ্য পাঠানো হবে, সেগুলোর দাম যথাযথভাবে সমন্বয় করা জরুরি।'

Comments

The Daily Star  | English
Reforms vs election

Reforms vs election: A distracting debate

Those who place the election above reforms undervalue the vital need for the latter.

15h ago