ভ্রমণ তালিকায় রাখতে পারেন নেত্রকোণার এই ৫ স্থান  

ছবি: সাজেদুর আবেদীন শান্ত

নেত্রকোণা পাহাড়ি ঝরনা, চীনা মাটির পাহাড়, নদী, খাল এবং হাওরের জন্য বিখ্যাত। বছরের অন্যান্য সময়ের তুলনায় শীতকালে এই অঞ্চলে বেশি দর্শনার্থী আসেন।

যদি সামনের শীতে নেত্রকোণা ভ্রমণের পরিকল্পনা করে থাকেন, তবে এই ৫টি স্থান অবশ্যই দেখতে ভুলবেন না।

শাহ সুলতান রুমীর মাজার

নেত্রকোণা সদর উপজেলার মদনপুর গ্রামে শাহ সুলতান কমর উদ্দিন রুমীর মাজার রয়েছে। ১০৫৩ খ্রিস্টাব্দের কিছু আগে পশ্চিম এশিয়ার তুরস্কের সেলজুক রাজ্য থেকে সুফী সাধক শাহ সুলতান কমর উদ্দিন রুমীর (রহঃ) আগমন বলে কথিত আছে। আরও কথিত আছে, রোম সাম্রাজ্য বিজয়ী তুরস্ক রাজ্যকেই রোম সম্রাজ্য বলা হতো। এর শাসককে বলা হতো রুমী এবং সে রাজ্যের সুলতানের ছোট ভাই হিসেবে শাহ সুলতানকেও রুমী উপাধিতে অভিহিত করা হতো। (সূত্র:modonpurup.netrokona.gov.bd/bn/site/top_banner/QGl9-হযরত-শাহ্-সুলতান-কমর-উদ্দিন-রুমী-রাহঃ-এর-মাজার-শরীফ)

নেত্রকোণা থেকে সিএনজিচালিত অটোরিকশায় রুমীর মাজারে যাওয়া যায়, ভাড়া পড়বে মাত্র ৩০ টাকা।

ছবি: সাজেদুর আবেদীন শান্ত

মুসলিম সেনাপতি বখতিয়ার খলজির বাংলা বিজয়ের ১০০ বছর আগে এবং হযরত শাহজালালের (রহঃ) সিলেট বিজয়ের ২৫০ বছর আগে রুমী বাংলায় আসেন। নেত্রকোণায় ইসলাম প্রচারে তিনি অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন। প্রতি বৃহস্পতিবার মাজারে ড্রাম বাজানো হয় এবং সারাদেশ থেকে আসা হাজার হাজার মানুষ এতে অংশ নেন। নারী-পুরুষ উভয়ের জন্যই প্রার্থনার ব্যবস্থা আছে এখানে।

কবিতাকুঞ্জ

নেত্রকোণা সদর থেকে মাত্র ৪০ টাকা রিকশাভাড়া দিয়ে কবিতাকুঞ্জে যাওয়া যাবে। মাগড়া নদীর কাছেই মালনী নামক জায়গায় অবস্থিত এই কবিতাগৃহটির উদ্যোক্তা বিখ্যাত কবি নির্মলেন্দু গুণ।

ছবি: সাজেদুর আবেদীন শান্ত

কবিতাকুঞ্জ মূলত কবিতা পড়ার ঘর। ৯০টি দেশের খ্যাতিমান লেখকদের প্রায় ২ হাজার কবিতার বই এখানে সংরক্ষিত রয়েছে। বিভিন্ন ভাষার বিখ্যাত প্রায় ৭০ জন কবির ছবিও আছে কবিতাকুঞ্জে।

কবিতাকুঞ্জের পেছনে অবস্থিত দুটি গেস্টহাউজে অতিথিদের থাকার ব্যবস্থা রয়েছে। কবিতা পড়া বা নদীর দৃশ্য উপভোগ করা ছাড়াও আপনি চাইলে বরশি দিয়ে মাছও ধরতে পারবেন।

বিরিশিরি সাংস্কৃতিক কেন্দ্র

ছবি: সাজেদুর আবেদীন শান্ত

নেত্রকোণা সদর থেকে ৪০ কিলোমিটার দূরে দুর্গাপুর উপজেলায় এই সাংস্কৃতিক কেন্দ্রটি অবস্থিত। এখানে যাওয়ার জন্য নেত্রকোণা সদরের রাজু বাজার থেকে ৩০০ টাকা ভাড়ায় মোটরসাইকেল পাওয়া যাবে।

মূলত নৃতাত্ত্বিক গোষ্ঠির সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য সংরক্ষণ, বিকাশ এবং লালন করার উদ্দেশ্যে এটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। বিরিশিরি কালচারাল একাডেমিতে জাদুঘর আছে। জাদুঘরের প্রবেশ মূল্য ১০ টাকা।

বিরিশিরি গেস্ট হাউজে অতিথিদের থাকার ব্যবস্থাও রয়েছে। জেলা ডাক বাংলা ছাড়াও এখানে থাকার আরও অনেক হোটেল আছে। এগুলোতে থাকার জন্য প্রতিদিন ১-২ হাজার টাকা খরচ হতে পারে।

চীনা মাটির পাহাড়

ছবি: সাজেদুর আবেদীন শান্ত

নেত্রকোণার দুর্গাপুর উপজেলার বিজয়পুর ইউনিয়নের আড়াপারা গ্রামে গেলে চীনা মাটির পাহাড় দেখা যাবে। স্থানীয়ভাবে এট সাদা মাটির পাহাড় নামেও পরিচিত। এটি নেত্রকোণার খুবই পরিচিত ও জনপ্রিয় একটি জায়গা। খনিজ সম্পদে সমৃদ্ধ এই জায়গাটি বাংলাদেশের শীর্ষ পর্যটন কেন্দ্রগুলোর মধ্যেও অন্যতম।

সোমেশ্বরী নদী পার হয়ে রিকশা, অটো বা মোটরসাইকেলে করে এখানে যাওয়া যায়। মোটরসাইকেলে গেলে ভাড়া পড়বে ১০০ টাকা আর অটোতে গেলে খরচ হবে ৩০ টাকার মতো।

নাম সাদা মাটির পাহাড় হলেও পাহাড়ের একেক অংশে মাটির রং একেক রকম। কোথাও লাল, কোথাও সাদা আবার কোথাও নীলাভ। এ যেন নানা রঙের খেলা। পাহাড়ের নিচে রয়েছে নীল ও সবুজ পানির লেক। পাহাড়ের ছায়া ও আকাশের রঙের ওপর ভিত্তি করে পানির রং পরিবর্তন হয়।

গণেশ্বরী নদী

ছবি: সাজেদুর আবেদীন শান্ত

গারো পাহাড়ের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া গণেশ্বরী নদী আপনাকে মুগ্ধ করতে পারে। নদীর উত্তর-পূর্বদিকে ভারতের সীমান্ত রয়েছে, যা সবুজ বনে আচ্ছাদিত উঁচু পাহাড়ে ঘেরা। দক্ষিণ-পশ্চিম অংশে উঁচু পাহাড়ে ঘেরা অংশে বিভিন্ন নৃ-গোষ্ঠীগুলোর বসবাস।

এ দৃশ্য দেখতে হলে আপনাকে নেত্রকোণার কলমাকান্দা উপজেলার লেঙ্গুরা ইউনিয়নে যেতে হবে। রাজু বাজার থেকে ৩০০ টাকায় মোটরসাইকেল ভাড়া নিয়ে এখানে যাওয়া যাবে।

ঢাকা থেকে নেত্রকোণা যাবেন যেভাবে

ঢাকার মহাখালী বাস টার্মিনাল থেকে বিআরটিসি, এনা এবং হযরত শাহজালাল বাস কোম্পানির গাড়িতে করে নেত্রকোণা যাওয়া যাবে। প্রায় সারা দিনই গাড়ি পাওয়া যায়। বাসের টিকেটের দাম সাধারণত ২৫০ টাকা।

এ ছাড়া কমলাপুর বা বিমানবন্দর রেল স্টেশন থেকে মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেস অথবা হাওর এক্সপ্রেস ট্রেন ধরেও নেত্রকোণা যাওয়া যায়।

থাকবেন কোথায়

নেত্রকোণা সদরে কোনো ফাইভ স্টার বা উন্নতমানের হোটেল না থাকলেও বেশ কিছু বেসরকারি ও সরকারি রেস্ট হাইজ আছে।

নেত্রকোণা সার্কিট হাউজ, কাচারি ডাক বাংলো, এলজিইডি রেস্ট হাউজ, হোটেল সৌরভ, হোটেল শাহজাহান, প্রবাসী গেস্ট হাউজ ও হোটেল ইমরান ইন্টারন্যাশনাল ছাড়াও রয়েছে বেশ কিছু আবাসিক হোটেল। এসব হোটেলে প্রতিদিনের ভাড়া এক থেকে দুই হাজার টাকা।

অনুবাদ করেছেন আহমেদ হিমেল

 

Comments

The Daily Star  | English
The Indian media and Bangladesh-India relations

The Indian media and Bangladesh-India relations

The bilateral relationship must be based on a "win-win" policy, rooted in mutual respect, non-hegemony, and the pursuit of shared prosperity and deeper understanding.

9h ago