উৎপাদন বাড়াতে ১ হাজার ৯০০ কোটি বিনিয়োগ করছে বিএসআরএম
সরকারি ও বেসরকারি নির্মাণের ক্রমবর্ধমান চাহিদা মেটাতে দ্বিতীয় রি-রোলিং প্ল্যান্ট স্থাপনের জন্য প্রায় এক হাজার ৯০০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করছে দেশের ইস্পাত তৈরির সবচেয়ে বড় প্রতিষ্ঠান বিএসআরএম।
এই বিনিয়োগের ফলে বিএসআরএম এর বিলেট তৈরির সক্ষমতা আড়াই লাখ টন ও স্টিল উৎপাদন সক্ষমতা বার্ষিক ছয় লাখ টন বাড়বে। এজন্য প্রতিষ্ঠানটি দ্বিতীয় রি-রোলিং ইউনিট স্থাপন করছে। এটি হবে চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে বিএসআরএম ইন্ডাস্ট্রিয়াল এস্টেটে।
কারখানা সম্প্রসারণের পর আগামী বছরের মধ্যে চট্টগ্রামভিত্তিক এই ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের মোট ইস্পাত উৎপাদন ক্ষমতা দাঁড়াবে প্রায় ২৪ লাখ টন। এটি দেশের মোট ইস্পাত উৎপাদন ক্ষমতার প্রায় এক-চতুর্থাংশ হবে বলে জানিয়েছেন বিএসআরএমের দুই শীর্ষ কর্মকর্তা।
বিএসআরএম গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আমের আলীহুসেন দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমরা আশা করছি দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে ইস্পাতের চাহিদা বাড়বে।'
তিনি আরও বলেন, 'আমাদের অর্থনীতিতে সাময়িক কিছু সমস্যা যাচ্ছে। অর্থনীতি আবার ঘুরে দাড়াবে।'
বিএসআরএম জানিয়েছে, উৎপাদন সক্ষমতা বাড়াতে জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সি (জাইকা) ও দেশি-বিদেশি ব্যাংকগুলোসহ আন্তর্জাতিক অর্থায়নকারীদের কাছ থেকে সহায়তা পাওয়া গেছে।
প্রায় ১৭ কোটি ৫০ লাখ ডলারের এই প্রকল্পের মধ্যে জাইকার পাঁচ কোটি ডলারসহ আন্তর্জাতিক অর্থায়নকারীদের কাছ থেকে ১০ কোটি ৮০ লাখ ডলার পাবে বিএসআরএম।
প্রকল্প ব্যয়ের ৮০০ কোটি টাকার একটি অংশ দেশি আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছ থেকে নেওয়া ঋণের মাধ্যমে মেটানো হবে।
জাইকা, ভারতের এক্সিম ব্যাংক, স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক সিঙ্গাপুর ও ব্র্যাক ব্যাংক লিমিটেড ১০ কোটি ৮০ লাখ ডলার দেবে। এর মধ্যে জাইকা দেবে ৫০ মিলিয়ন ডলার।
ইনফ্রাস্ট্রাকচার ডেভেলপমেন্ট কোম্পানি লিমিটেড (ইডকল), ইস্টার্ন ব্যাংক পিএলসি, প্রাইম ব্যাংক লিমিটেড ও সিটি ব্যাংক লিমিটেড ৮০০ কোটি টাকা দেবে। বাকি খরচ বিএসআরএম বহন করবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
গত ৪ অক্টোবর ইস্পাত নির্মাতা প্রতিষ্ঠানটি জাইকাসহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে ঋণ চুক্তি সই করে। গত ১৭ অক্টোবর এ উপলক্ষে অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
'বাংলাদেশে জাইকার এটিই প্রথম বেসরকারি খাতে অর্থায়ন,' উল্লেখ করে বিএসআরএম গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলেন, 'আমরা গর্বিত। জাইকা আমাদের এবং আমাদের দেশের ভবিষ্যতের ওপর আস্থা রেখেছে।'
জাইকার ওয়েব সাইটে প্রকাশিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, এই ঋণ বিএসআরএমকে নতুন পরিবেশবান্ধব ইস্পাত কারখানা তৈরিতে সহায়তা করবে।
এতে আরও বলা হয়, এই ঋণ বাংলাদেশের ইস্পাত শিল্পকে পরিবেশবান্ধব হিসেবে গড়ার পাশাপাশি কার্বন নিঃসরণ কমাতে সহায়তা করবে। এখানে সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদন সুবিধা, বায়ুদূষণ ব্যবস্থাপনা ব্যবস্থা এবং পানি পরিশোধন ও পুনঃব্যবহার প্লান্ট থাকবে।
জাইকা জানায়, সাম্প্রতিক বছরগুলোয় বাংলাদেশ জাপানের সরকারি উন্নয়ন সহায়তা ও অন্যান্য অর্থায়নের মাধ্যমে মেট্রো, বিমানবন্দর ও সমুদ্রবন্দরের মতো বৃহৎ অবকাঠামো উন্নয়ন করছে।
এছাড়া বাণিজ্যিক খাতে গড় আয় বেড়ে যাওয়ায় আবাসন, বাণিজ্যিক সুবিধা ও হোটেল নির্মাণ আরও সক্রিয় হয়েছে বলে জানায় জাইকা।
সংস্থাটি বলেছে, রিবারের মতো ইস্পাত পণ্য এ ধরনের অবকাঠামোর প্রয়োজনীয় উপকরণ। ভবিষ্যতে বাংলাদেশে ইস্পাতের চাহিদা বার্ষিক ১৫-২০ শতাংশ হারে বাড়বে বলে আশা করা হচ্ছে।
স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক ডলার সিন্ডিকেটেড লোন ও এজেন্টের জন্য লিড অ্যারেঞ্জার, কাঠামো গঠন ও সমন্বয়কারী হিসেবে কাজ করছে।
মেঘনা ব্যাংক লিমিটেড ও এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংক লিমিটেড ইডকলের অর্থায়নের গ্যারান্টি দিচ্ছে।
বিএসআরএমের উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক তপন সেনগুপ্ত ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আগামী বছরের মার্চ-এপ্রিলের মধ্যে দ্বিতীয় রি-রোলিং প্ল্যান্টটি চালু হবে বলে আশা করা হচ্ছে।'
Comments