দালাইলামার ডেরায় ক্রিকেটের শান্ত রাগিণী

হিমাচল প্রদেশ ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশনের অপূর্ব মাঠের পাশে নির্বিকার জীবন যাত্রা দেখে বোঝার উপায় নিয়ে এখানেই চলছে বিশ্বকাপের মতন আসর। ক্রিকেটের খোঁজ খবর এখানকার মানুষ রাখেন না এমন নয়।  বেশ ভালোই রাখেন, খেলাও দেখেন। কিন্তু তা নিয়ে অতিরঞ্জনে আগ্রহ নেই।

ধর্মশালা থেকে

দালাইলামার ডেরায় ক্রিকেটের শান্ত রাগিণী

Himachal Pradesh Cricket Association Stadium, Dharamshala
ছবি: একুশ তাপাদার/স্টার

ধৌলাধর রেঞ্জের শুভ্র পাহাড়সারির ঝলমলে আলো ম্যাকলয়েডগঞ্জ আর ধর্মশালার উঁচু পর্বতের জনপদকে করে তুলেছে অপরূপ। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ৭ হাজার ফুট উঁচুতে নিভৃতি আছে প্রবল। মোড়ে মোড়ে ক্রিকেট বিশ্বকাপের স্বাগত বার্তা দিয়ে স্থানীয় প্রভাবশালী রাজনীতিবিদ অনুরাগ ঠাকুরের প্ল্যাকার্ড থাকলেও তা যেন প্রভাব বিস্তার করতে পারছে না।

হিমাচল প্রদেশ ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশনের অপূর্ব মাঠের পাশে নির্বিকার জীবন যাত্রা দেখে বোঝার উপায় নিয়ে এখানেই চলছে বিশ্বকাপের মতন আসর। ক্রিকেটের খোঁজ খবর এখানকার মানুষ রাখেন না এমন নয়।  বেশ ভালোই রাখেন, খেলাও দেখেন। কিন্তু তা নিয়ে অতিরঞ্জনে আগ্রহ নেই।

ট্যাক্সি চালক সুদেব সিং যেমন মুখস্থ বলে দিলেন ধর্মশালার মাঠে কবে কার খেলা। এমনকি বাংলাদেশের দু'একজন খেলোয়াড়ের নামও বলে দিলেন গড়গড় করে। শহরের যেসব দোকানে টিভি আছে সেখানে খেলার চ্যানেলই চলছে। তা নিয়ে মারমার কাট-কাট অবস্থা নেই।

মৌলিক আরও কিছু তফাৎ ধরা পড়বে চোখ মেললে।  বাংলাদেশে সাধারণ একটা আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ম্যাচ হলেই আশেপাশের সব পথ বন্ধ করে রাখা হয়। জীবন করে ফেলা হয় স্থবির। এখানে একদমই তা না। কোন পথঘাটে অহেতুক ব্যারিকেড দিতে হয়নি।

বিশ্বকাপ ম্যাচ চলাকালীনও মাঠের একদম গা ঘেঁষা স্কুলেই তাই কোন প্রভাব ছিল না।  স্কুলের ছেলে-মেয়েরা অবশ্য ছুটির পর টিলার উপর ব্যাগ রেখে আইডি কার্ড দেখিয়ে ঢুকেছে গ্যালারিতে।

ক্রিকেট এখানে মূল অনুষঙ্গ হওয়ার জায়গায় নেই। তবে ক্রিকেটকে কেউ উপেক্ষাও করছে না। জীবন মরণ সমস্যার মধ্যে নেই আরকি, খেলাটা আছে স্রেফ বিনোদনের জায়গায়। কোন একটা মিউজিক্যাল ইভেন্টের মতোনই।

dhauladhar range
ম্যাকলয়েড গঞ্জে চোখ উপরে তুললেই ধৌলাধর রেঞ্জের সৌন্দর্য্য। ছবি: একুশ তাপাদার/ স্টার

ধর্মশালা, ম্যাকলয়েডগঞ্জকে অনন্য করেছে প্রকৃতি। কেন জানি প্রকৃতি যেখানে অবারিত সেখানে ধর্মীয় গুরুদের উপস্থিতিও প্রবল। ঐশ্বরিক চিন্তায় মগ্ন হতে হয়ত তাদের প্রকৃতির আশ্রয় দরকার বেশি। বৌদ্ধ-বিহার বা মনাস্ট্রি, প্যাগোডা আর মন্দিরের আধিক্য তাই জানান দেয় এই অঞ্চলের রূপরেখা।

শান্ত কিন্তু প্রাণ শক্তিতে ভরপুর। নিভৃত কিন্তু আনন্দ প্রয়াসী জনপদের চরিত্র অবশ্য বুঝাতে সহায়তা করতে পারে একজন বিশাল ব্যক্তিত্বের উপস্থিতি।  তেনজিং গিয়াৎসো বললে হয়ত অনেকের কপালে ভাঁজ পড়বে। তাকে চেনানোর জন্য দরকার তার পদবি। কারণ পদবির নামেই তিনি দুনিয়াজুড়ে খ্যাতিমান। সেই দালাইলামা থাকেন এই শহরে। এখানে তার প্রভাব জানান দিতে পারে স্রেফ একটা দৃশ্য।

ধর্মশালায় দালাইলামা যেদিক দিয়ে চলাচল করেন সেই রাস্তা খানিকের জন্য বন্ধ হয়ে যায়। উত্তরীয় নিয়ে নিবেদনের ভক্তিতে সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে যান ভক্তরা। রোববার সকালে এমন এক দৃশ্যের সামনে পড়ে গেলাম। দালাইলামাকে সরাসরি দেখার সৌভাগ্যও হয়ে গেল।

তিব্বতি বৌদ্ধ ধর্মীয় এই প্রধান গুরুর জন্য বেশ কিছু পশ্চিমা দেশের মানুষকেও দেখলাম বেশ নিবেদিত। মানুষের সম্মানের প্রতিদানে দালাইলামা সবাইকে হাত নেড়ে শুভেচ্ছা জানিয়ে নিরাপত্তাবহর নিয়ে হাওয়া হয়ে গেলেন। দালাইলামার নিজের যে শহর সেই লাসা এখান থেকে প্রায় ২ হাজার কিলোমিটার দূরে। কিন্তু চতুর্দশ দালাইলামা তেনজিং ৬৪ বছর ধরেই তো থাকেন ধর্মশালায়, এই অঞ্চল আরও বেশি করে তারই, তার জন্যই এত খ্যাতি।

দালাইলামা এই পথে যাবেন। তাই দাঁড়িয়ে পড়লেন অনুরাগীরা

১৯৫৮ সালে চীন তিব্বত দখল করে নেওয়ার পর হিমাচলের এই অঞ্চলে আশ্রয় নিতে হয় দালাইলামাকে, তার সঙ্গে আসেন তিব্বতিরা। তিব্বতি শরণার্থীদের বড় একটা অংশ সেই থেকে এখানে বাস করেন। তাদের জীবনাচারের উপস্থিতি পাহাড়ের প্রতিটি বাঁকে নজর দিলেই পাওয়া যায়। ক্রিকেটের পক্ষে সব ছাপিয়ে প্রকট কোন কিছু হয়ে উঠার বাস্তবতা নেই আসলে। ক্রিকেটের সুর এখানে বাজবে অঞ্চলের স্কেল মেপে, চড়া হওয়ার উপায় নেই।

Comments

The Daily Star  | English

Disrupting office work: Govt employees can be punished within 8 days

The interim government has moved to amend the Government Service Act-2018 to allow swift disciplinary action against its employees who will be found guilty of disrupting official activities.

6h ago