সাংবাদিক নাদিম হত্যা: বাবু চেয়ারম্যানের স্বীকারোক্তি নিয়ে মিথ্যাচারের অভিযোগ

বাবু চেয়ারম্যানের পুনরায় রিমান্ড ও তার ছেলে রিফাতের গ্রেপ্তার দাবি করে জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সামনে অনশনে নিহত সাংবাদিক নাদিমের পরিবারের সদস্যরা। ছবি: সংগৃহীত

জামালপুরে সাংবাদিক গোলাম রব্বানী নাদিম হত্যা মামলার প্রধান আসামি মাহমুদুল আলম বাবুর আদালতে দেওয়া স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি নিয়ে মিথ্যাচারের অভিযোগ তুলেছেন ভুক্তভোগী পরিবারের সদস্য ও বাদীপক্ষের আইনজীবী। 

এ অভিযোগ তুলে আজ বুধবার সকালে তারা জামালপুরের জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে অনশনে বসেন।

একইসঙ্গে তারা আবার বহিষ্কৃত ইউপি চেয়ারম্যান মাহমুদুল আলম বাবুর রিমান্ড ও তার ছেলে রিফাতকে গ্রেপ্তারের দাবি জানান।

এর আগে, ৫ দিনের রিমান্ড শেষে গত ২৩ জুন জামালপুর জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট হাসিব উল্লাহ পিয়াসের আদালতে ১৬৪ ধারায় বাবুর জবানবন্দি রেকর্ড করা হয়।

বাদীপক্ষের আইনজীবী ইউসুফ আলী দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'নাদিম হত্যার প্রধান আসামি চেয়ারম্যান বাবু স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন বলে আমাদের জানানো হয়েছিল। সেদিন কোর্ট প্রাঙ্গণে আমরাও ছিলাম। ম্যাজিস্ট্রেটের রুম থেকে বের হয়ে তদন্ত কর্মকর্তা আমাদের বলেছিলেন যে আসামি বাবু নিজেকে জড়িয়ে দোষ স্বীকার করে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছে।'

'কিন্তু এটি মিথ্যাচার ছিল' উল্লেখ করে এই আইনজীবী বলেন, 'আমরা বিশ্বস্ত সূত্রে জানতে পেরেছি এবং নিশ্চিত হয়েছি যে হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত মর্মে একটি শব্দও বলেননি বাবু। তিনি আরও বলেছেন যে তার ছেলে রিফাত সেদিন জামালপুরে ছিল না। সে নাকি ১০ দিন আগে থেকেই ঢাকায় ছিল।'

আইনজীবী ইউসুফ আলী বলেন, 'বাবু পুরোপুরি এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার বিষয়ে অস্বীকার করেছে। তবুও তদন্ত কর্মকর্তা আমাদের কাছে স্বীকারোক্তির কথা বলেছেন।'

তিনি আরও বলেন, 'আমি মনে করি মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মামলাটি ভিন্ন খাতে নেওয়ার চেষ্টা করেছেন এবং বাবু চেয়ারম্যানকে দ্বিতীয়বার রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের চেষ্টাও তিনি করেননি। এতেই প্রমাণিত হয় তদন্ত কর্মকর্তা সরাসরি প্রধান আসামি বাবুকে বাঁচানোর জন্য কাজ করে যাচ্ছেন।'

নিহত সাংবাদিক নাদিমের স্ত্রী মনিরা বেগম ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমার আইনজীবী আমাকে জানিয়েছেন যে মামলার প্রধান আসমি মাহমুদুল আলম বাবু ১৬৪ ধারায় নাকি হত্যার সঙ্গে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেননি। আগে আমাদের মিথ্যা সংবাদ জানানো হয়েছিল।'

অনশনে অংশ নিয়ে জামালপুর প্রেসক্লাবের সভাপতি হাফিজ রায়হান সাদা বলেন, 'মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মিথ্যাচার করেছে। আমরা বাদীপক্ষের আইনজীবীর মাধ্যমে জানতে পারলাম যে চেয়ারম্যান বাবু কোনো স্বীকারোক্তি দেয়নি। আমরা আবারও বাবু চেয়ারম্যানকে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি নেওয়ার দাবি জানাই। বাবু চেয়ারম্যানের ছেলে রিফাত বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে বেড়াচ্ছে কিন্তু গ্রেপ্তার হচ্ছে না।'

'তার বিরুদ্ধে পুলিশকেই অস্ত্র মামলা দিতে হবে। ঘটনার ৩ মাস হয়ে গেল, কিন্তু মামলার কোনো অগ্রগতি নেই, টালবাহানা চলছে। এক মাসের ভেতর চার্জশিট দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু কোনো কথাই আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী রাখেনি। আমরা জানি এই মামলা দ্রুত বিচারে যাওয়ার কথা। কিন্তু আসামিরা একজনের পর একজন জামিনে বের হয়ে যাচ্ছে,' বলেন তিনি।

যোগাযোগ করা হলে নাদিম হত্যা মামলার প্রথম তদন্তকারী কর্মকর্তা ও বকশিগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সোহেল রানা ডেইলি স্টারকে বলেন, 'মামলাটির তদন্ত কর্মকর্তা প্রথমে আমি ছিলাম। পরে জেলা ডিবির ইনচার্জকে আইও করা হয়েছে। এখন অবশ্য মামলাটি সিআইডির কাছে আছে।'

জানতে চাইলে জামালপুর ডিবির বর্তমান ওসি মুসফিকুর রহমান ডেইলি স্টারকে বলেন, 'মামলাটি আর আমাদের হাতে নেই। এটি সিআইডিতে দেওয়া হয়েছে। তাই এ বিষয়ে আমি কিছু জানি না। আর সে সময় ডিবির ওসি আরমান আলী এর তদন্ত কর্মকর্তা ছিলেন।'

ডিবির তৎকালীন ওসি তদন্ত কর্মকর্তা আরমান আলীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি ডেইলি স্টারকে বলেন, 'নাদিমের সঙ্গে চেয়ারম্যান বাবুর বিভিন্ন বিরোধ ছিল তা স্বীকার করেছিল ম্যাজিস্ট্রেটের সামনে। হত্যার বিভিন্ন কারণও স্বীকার করেছিল। কিন্তু হত্যার সঙ্গে জড়িত বলে সম্পূর্ণভাবে স্বীকার করেননি বাবু। তবে তিনি আরও কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়েছিলেন।'

উল্লেখ্য, সংবাদ প্রকাশকে কেন্দ্র করে গত ১৪ জুন রাতে বকশীগঞ্জ বাজারের পাটহাটি এলাকায় সাধুরপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের সদ্য বহিষ্কৃত চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সদ্য বহিষ্কৃত সাধারণ সম্পাদক মাহমুদুল আলম বাবুর সন্ত্রাসী বাহিনীর হামলার শিকার হন বাংলানিউজ২৪ ডটকমের জেলা প্রতিনিধি ও জামালপুর অনলাইন জার্নালিস্ট এসোসিয়েশনের সহসভাপতি নাদিম। 

পরদিন দুপুরে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি।

Comments

The Daily Star  | English

Local mechanics rev up the road, now govt needs to catch up

Amid the worldwide development of electric vehicles, which is changing the traffic landscape away from fossil fuels, Bangladeshi mechanics brought their humble version of an e-vehicle to the road: a battery-run rickshaw -- awkwardly wired, with visible battery units slinging on the back.

14h ago