প্রতিহিংসা থেকে চেয়ারম্যান বাবুর পরিকল্পনায় সাংবাদিক নাদিমকে হত্যা: র্যাব
ব্যক্তিগত প্রতিহিংসা থেকে উচিত শিক্ষা দিতে ইউপি চেয়ারম্যান মাহমুদুল আলম বাবুর পরিকল্পনায় সাংবাদিক গোলাম রব্বানি নাদিমকে হত্যা করা হয় বলে জানিয়েছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)।
আজ শনিবার সন্ধ্যায় রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান র্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।
তিনি জানান, গত ১৪ জুন সাংবাদিক গোলাম রব্বানি নাদিম পেশাগত দায়িত্ব পালন শেষে বাড়ি ফেরার পথে বকশীগঞ্জ উপজেলার পাটহাটি এলাকায় কতিপয় সন্ত্রাসীদের নৃশংস হামলার শিকার হন এবং একপর্যায়ে অচেতন হয়ে পড়লে সন্ত্রাসীরা তাকে রাস্তার পাশে ফেলে পালিয়ে যায়। পরবর্তীতে স্থানীয় সাংবাদিক ও পথচারীরা তাকে অচেতন অবস্থায় উদ্ধার করে প্রথমে বকশীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এবং পরে রাতেই জামালপুর জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করে। নাদিমের অবস্থার অবনতি হলে ১৫ জুন সকালে তাকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয় এবং সেদিন বিকেলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় নাদিম মৃত্যুবরণ করেন। এ ঘটনায় নাদিমের স্ত্রী বাদী হয়ে মাহমুদুল আলম বাবুকে প্রধান অভিযুক্ত করে বকশীগঞ্জ থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। চাঞ্চল্যকর এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনা বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়া এবং বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে গুরুত্বের সঙ্গে প্রচারিত হয় এবং সাংবাদিক নাদিমের ওপর হামলার একটি সিসিটিভি ফুটেজ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে দেশব্যাপী ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করে। এ ছাড়াও, সাংবাদিক সংগঠনসহ বিভিন্ন মহল এ ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ ও তীব্র নিন্দা জানায়। র্যাব এ ঘটনার রহস্য উদঘাটন ও হত্যার সঙ্গে জড়িতদের গ্রেপ্তারের লক্ষ্যে গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি করে।
খন্দকার আল মঈন জানান, এরই ধারাবাহিকতায় আজ র্যাব সদর দপ্তরের গোয়েন্দা শাখা ও র্যাব-১৪ এর একটি আভিযানিক দল স্থানীয় র্যাবের সহযোগিতায় পঞ্চগড়ের দেবীগঞ্জ ও বগুড়ার দুপচাঁচিয়া এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে সাংবাদিক নাদিম হত্যাকাণ্ডের মূল পরিকল্পনাকারী সাধুরপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মাহমুদুল আলম বাবু ও তার সহযোগী মো. মনিরুজ্জামান মনির, জাকিরুল ইসলাম এবং মো. রেজাউল করিমকে গ্রেপ্তার করে। গ্রেপ্তারকৃতরা সাংবাদিক নাদিম হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে তাদের সংশ্লিষ্টতার বিষয়ে তথ্য প্রদান করে।
তিনি জানান, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, সাধুরপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মাহমুদুল আলম বাবুর পরিকল্পনাতেই এই হত্যাকাণ্ডটি সংঘটিত হয়। সাংবাদিক নাদিম সাম্প্রতিক সময়ে বাবুর অপকর্ম নিয়ে অনলাইন পোর্টালে কয়েকটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেন। প্রতিবেদন প্রকাশের পর বাবু ক্ষিপ্ত হয়ে সাংবাদিক নাদিমকে বিভিন্নভাবে হুমকিসহ তার বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা দায়ের করেন। পরবর্তীতে ময়মনসিংহের সাইবার ট্রাইব্যুনাল মামলাটি খারিজ করে দেন। মামলা খারিজের বিষয়টি নিয়ে নাদিম ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দেওয়ায় বাবু আরও ক্ষিপ্ত হয়ে সাংবাদিক নাদিমকে উচিত শিক্ষা দেওয়ার পরিকল্পনা করেন। পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী ১৪ জুন রাত আনুমানিক ১০টার দিকে নাদিম বাড়ি ফেরার পথে বকশীগঞ্জ বাজারের পাটহাটি এলাকায় বাবু তার সন্ত্রাসীদের নিয়ে নির্জন স্থানে ওঁৎ পেতে থাকেন। নাদিম তার সহকর্মীসহ মোটরসাইকেলযোগে ঘটনাস্থলে পৌঁছালে বাবুর সন্ত্রাসীরা তাকে চলন্ত মোটরসাইকেল থেকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয়। পরবর্তীতে পেছন থেকে দৌড় দিয়ে বাবুর আরও কয়েকজন লোক এসে তাকে মারতে মারতে পাশের একটি অন্ধকার গলিতে টেনেহিঁচড়ে নিয়ে যায় এবং এলোপাতাড়ি আঘাত করতে থাকে। সেসময় প্রধান অভিযুক্ত বাবু ঘটনাস্থলের কাছ থেকে পুরো ঘটনার নেতৃত্ব দেন। নাদিমের সহকর্মী তাকে বাঁচাতে গেলে বাবুর সন্ত্রাসীরা তাকেও মারধর করে। একপর্যায়ে নাদিমের চিৎকার শুনে স্থানীয়রা এগিয়ে আসলে বাবু ও তার সন্ত্রাসী গ্রুপ দ্রুত ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যায়। পরবর্তী দিন ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সাংবাদিক নাদিম মৃত্যুবরণ করেন।
খন্দকার আল মঈন জানান, গ্রেপ্তারকৃত মাহমুদুল আলম বাবু সাধুরপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন। তিনি ব্যক্তিগত প্রতিহিংসা ও নাদিমের প্রতি ক্ষিপ্ত হয়ে তাকে তার সন্ত্রাসী বাহিনী দিয়ে উচিত শিক্ষা দেওয়ার পরিকল্পনা করে। ঘটনার পর থেকে তিনি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর গ্রেপ্তার এড়াতে পঞ্চগড়ের দেবীগঞ্জে তার এক দূর সম্পর্কের আত্মীয়ের বাড়িতে আত্মগোপনে ছিলেন। আত্মগোপনে থাকা অবস্থায় র্যাব কর্তৃক গ্রেপ্তার হন। ইতোপূর্বে তার বিরুদ্ধে জামালপুরের বিভিন্ন থানায় একাধিক মামলা রয়েছে বলে জানা যায়।
তিনি আরও জানান, গ্রেপ্তারকৃত রেজাউল, মনির এবং জাকির মাহমুদুল হাসান বাবুর সন্ত্রাসী গ্রুপের অন্যতম সহযোগী। গ্রেপ্তারকৃত রেজাউল দৌড়ে গিয়ে নাদিমকে ধাক্কা দিয়ে মোটরসাইকেল থেকে ফেলে দেয়। পরবর্তীতে ঘটনাস্থলেই বাবুর নির্দেশে তারা নাদিমকে বেদম প্রহার করতে থাকে। একপর্যায়ে পাশের একটি অন্ধকার গলিতে টেনেহিঁচড়ে নিয়ে যায় এবং এলোপাতাড়ি আঘাত করে ঘটনাস্থল ত্যাগ করে। ইতোপূর্বে তাদের বিরুদ্ধে জামালপুরের বিভিন্ন থানায় একাধিক মামলা রয়েছে বলে জানা যায়।
গ্রেপ্তারকৃত আসামিদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন বলেও জানান খন্দকার আল মঈন।
Comments