পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবৃতির জবাব দিলো গ্রামীণ টেলিকম

ড. মুহাম্মদ ইউনূস। ছবি: স্টার

শান্তিতে নোবেল পুরস্কারজয়ী প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূসের বিরুদ্ধে 'বিচারিক হয়রানি' নিয়ে ১০০ জনেরও বেশি নোবেল পুরস্কারজয়ীসহ ১৭৫ জন বিশ্বনেতার খোলা চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবৃতি বিষয়ে লিখিত বক্তব্য দিয়েছে গ্রামীণ টেলিকম।

কলকারখানা প্রতিষ্ঠান ও পরিদর্শন অধিদপ্তর এবং দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) দায়ের করা মামলা, প্রফেসর ইউনূসের কর ফাঁকির অভিযোগ ও গ্রামীণ ব্যাংকের এমডির পদ থেকে তার পদত্যাগের বিষয়ে গতকাল রোববার নিজেদের বক্তব্য তুলে ধরেছে গ্রামীণ টেলিকম।

এতে বলা হয়েছে, 'প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস বাংলাদেশের দরিদ্র অসহায় মানুষ, বিশেষত অতি দরিদ্র নারীদেরকে অবর্ণনীয় নিষ্ঠুর দারিদ্রতা থেকে স্থায়ী মুক্তি দেওয়ার লক্ষ্যে তাদের মধ্যে ক্ষুদ্র ঋণ বিতরণের ব্যবস্থা গড়ে তুলেছেন এবং সেই লক্ষ্যে গ্রামীণ ব্যাংক প্রতিষ্ঠা করেন।'

'এই অসাধারণ কাজের স্বীকৃতি স্বরূপ ২০০৬ সালে ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও গ্রামীণ ব্যাংক যৌথভাবে শান্তিতে নোবেল পুরস্কার অর্জন করেন। অতঃপর ড. ইউনূস তার দৃষ্টিকে প্রসারিত করলেন বিশ্বের সব দেশের দারিদ্রতা দূরীকরণে।'

'তিনি বিশ্বব্যাপী দারিদ্রতা দূরীকরণ ও শিক্ষিত যুবকদের বেকার সমস্যার স্থায়ী সমাধানের জন্য এক নতুন অর্থনৈতিক চিন্তা ধারার রূপরেখা তুলে ধরেন, যার নাম "সামাজিক ব্যবসা"। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অবস্থিত ৩০৩টি ইউনূস সেন্টারের মাধ্যমে তিনি তার সামাজিক ব্যবসা কার্যক্রম পরিচালনা করেছেন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা,ফ্রান্স, জার্মানি, জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়াসহ বিশ্বের প্রায় অধিকাংশ দেশই ড. ইউনূসের এই সামাজিক ব্যবসা কার্যক্রম গ্রহণ করেছে।'

'দারিদ্রতার স্থায়ী সমাধান ও বেকারত্ব নিরসনে নতুন নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যে ড. ইউনূস বাংলাদেশের মধ্যে প্রায় ৫০টির মতো সামাজিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন, যাতে বিশ্ববাসীর কাছে এই প্রতিষ্ঠানগুলোকে সামাজিক ব্যবসার মডেল হিসেবে দাঁড় করানো যায়।'

এই সামাজিক প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে একটি হচ্ছে গ্রামীণ টেলিকম এবং প্রফেসর ইউনূস গ্রামীণ টেলিকমের চেয়ারম্যান।

কলকারখানা প্রতিষ্ঠান ও পরিদর্শন অধিদপ্তরের মামলা

কলকারখানা প্রতিষ্ঠান ও পরিদর্শন অধিদপ্তর গ্রামীণ টেলিকমের বিরুদ্ধে যে মামলা করেছে তা উল্লেখ করে সংস্থাটির বক্তব্যে তাদের ব্যাখ্যা দিয়েছে।

অভিযোগ-১

চাকরি স্থায়ী না করা: ধারা ৪(৭)(৮) অনুযায়ী, প্রতিষ্ঠানের শ্রমিক বা কর্মচারীদের শিক্ষানবীশকাল সময় শেষে আইনের বিধান অনুযায়ী স্থায়ীকরণ করা হয়নি।

ব্যাখ্যা

গ্রামীণ টেলিকম নিয়োগ নীতিমালা অনুযায়ী কর্মকর্তা-কর্মচারীদের চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেয়। কারণ, গ্রামীণ টেলিকম যেসব ব্যবসায়িক কার্যক্রম পরিচালনা করে, সেগুলো চুক্তিভিত্তিক এবং নির্দিষ্ট মেয়াদ শেষে নবায়নের মাধ্যমে পরিচালনা করে। নোকিয়া কেয়ার, হুয়াওয়ে কেয়ার ও পল্লীফোন কার্যক্রম ৩ বছরের চুক্তি অনুযায়ী পরিচালিত হয় এবং ৩ বছর পর আবার চুক্তি নবায়ন করে পরিচালনা করা হয়।

যেহেতু গ্রামীণ টেলিকমের কার্যক্রম চুক্তির ভিত্তিতে পরিচালিত হয়েছে, সেজন্য সব কর্মকর্তা-কর্মচারীদের চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। ব্যবসায়িক চুক্তির মেয়াদ বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের চুক্তির মেয়াদও বৃদ্ধি করা হয়েছে। গ্রামীণ টেলিকমের সব কর্মকর্তা-কর্মচারীদেরকে স্থায়ী কর্মীর মতোই প্রভিডেন্ট ফান্ড, গ্রাচুয়িটি, অর্জিত ছুটি, অবসরকালীন ছুটিসহ সব সুবিধাই দেওয়া হয়।

ধারা ৪(৮) এর উল্লেখ রয়েছে যে, শিক্ষানবিশকাল শেষে বা তিন মাস মেয়াদ বৃদ্ধির পর কনফারমেশন লেটার দেওয়া না হলেও উপ-ধারা (৭) এর বিধান অনুযায়ী সংশ্লিষ্ট শ্রমিক স্থায়ী বলে গণ্য হবে।

অভিযোগ-২

বাৎসরিক ছুটি নগদায়ন: ধারা-১১৭ বিধি ১০৭ মোতাবেক প্রতিষ্ঠানে কর্মরত শ্রমিক বা কর্মচারীদের আইনের বিধান অনুসারে মজুরিসহ বাৎসরিক ছুটি প্রদান, ছুটি নগদায়ন ও ছুটির বিপরীতে নগদ অর্থ প্রদান করা হয় না।

ব্যাখ্যা

গ্রামীণ টেলিকমের অর্জিত ছুটি সংক্রান্ত নীতিমালা ২০০২ সালে প্রণয়ন করা হয়েছে, যা ১ জানুয়ারি ১৯৯৭ সাল থেকে কার্যকর। যদিও শ্রম আইন ২০০৬ সালে প্রতিষ্ঠিত।

বাংলাদেশ শ্রম আইন ২০০৬ এর ধারা ৩(১) অনুযায়ী, 'প্রত্যেক প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব নীতিমালা থাকিতে পারে। তা শ্রম আইনে সুবিধা হতে কম হতে পারবে না।'

গ্রামীণ টেলিকমের নীতিমালায় বছরে ৩০ দিন অর্জিত ছুটির বিধান রেখে ছুটি নীতিমালা তৈরি করা হয়েছে, যেখানে শ্রম আইন অনুযায়ী গ্রামীণ টেলিকমের কর্মীরা গড়ে বছরে সর্বোচ্চ ১৪ দিন অর্জিত ছুটি প্রাপ্য হন। অর্থাৎ আমরা শ্রম আইনের সুবিধার চেয়ে অধিক হারে অর্জিত ছুটি প্রদান করে থাকি।

গ্রামীণ টেলিকমের অর্জিত ছুটি নগদায়নের ক্ষেত্রে প্রতি ৩ বছরে ৩০ দিনের ছুটি নগদায়ন করতে পারবে এবং ৬০ দিন ছুটি জমা রাখতে পারবে।

ছুটি নগদায়নের ক্ষেত্রে শ্রম আইনে গ্রামীণ টেলিকমের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা প্রতি বছরে ১৪ দিন পেয়ে থাকেন, যার ৭ দিন নগদায়ন হবে এবং বাকি ৭ দিন জমা থাকবে। গ্রামীণ টেলিকমের প্রচলিত ছুটি নীতিমালা অনুযায়ী প্রতি ৩ বছরে ৩০ দিন ছুটি নগদায়ন করে থাকে। অর্থাৎ বছরে গড়ে ১০ দিন নগদায়ন হচ্ছে। এই নগদায়নের ক্ষেত্রে শ্রম আইনের চেয়ে বেশি দেওয়া হয়েছে।

১১৭(৭) ধারায় উল্লেখ আছে, কোনো শ্রমিক অর্জিত ছুটির জন্য দরখাস্ত করলে এবং মালিক কোনো কারণে তা না-মঞ্জুর করলে ওই ছুটি সংশ্লিষ্ট শ্রমিকের মূল অর্জিত ছুটির সঙ্গে অতিরিক্ত পাওনা হিসেবে যুক্ত হবে।

গ্রামীণ টেলিকমে বাৎসরিক ছুটি নগদায়ন ১৯৯৭ সাল থেকে চালু করা আছে, যা শ্রম আইনের চেয়েও আগে। পরবর্তীতে কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের নির্দেশে ২০২১ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি বোর্ড সভায় শ্রম আইন মোতাবেক প্রদান করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়, যা ২০২১ সালের ১ জানুয়ারি থেকে কার্যকর। বিষয়টি ২০২১ সালের ২৯ আগস্ট চিঠির মাধ্যমে কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরকে জানিয়ে দেওয়া হয়। অথচ এ বিষয়ে তারা ২০২১ সালের ৯ সেপ্টেম্বর মামলা করেছে।

অভিযোগ-৩

অংশ গ্রহণ তহবিল ও কল্যাণ তহবিল শ্রম আইন ২৩৪ ধারা অনুযায়ী কমিটি গঠন: ধারা-২৩৪ অনুযায়ী শ্রমিক অংশগ্রহণ তহবিল ও কল্যাণ তহবিল গঠন করা হয়নি এবং নীট লভ্যাংশের ৫ শতাংশ এই দুটি তহবিল ও শ্রমিক কল্যাণ ফাউন্ডেশন আইন ২০০৬ অনুযায়ী গঠিত তহবিলে নির্দিষ্ট হারে প্রদান করা হয়নি।

ব্যাখ্যা

গ্রামীণ টেলিকম কোম্পানি আইনের ২৮ ধারায় সৃষ্ট প্রতিষ্ঠান। এর লভ্যাংশ বিতরণযোগ্য নয় বিধায় নীট প্রফিটের ৫ শতাংশ ডাব্লিউপিপিএফ দেওয়ার সুযোগ নেই। তারপরও গ্রামীণ টেলিকম শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়ন এই টাকা পাওয়ার জন্য বিভিন্ন সময়ে শ্রম আদালতে মামলা করে। মামলা চলমান থাকায় ডাব্লিউপিপিএফ (অংশ গ্রহণ তহবিল ও কল্যাণ তহবিল) গঠন করা হয়নি। বিষয়টি কলকারখানা অধিদপ্তরে জানানো হয় যে এ বিষয়ে মামলা চলমান রয়েছে। আদালত যেভাবে সিদ্ধান্ত দেবে, আমরা সেভাবে ব্যবস্থা নেবো।

শ্রম আইনের ২৩৬ ধারায় জরিমানা, অর্থ আদায়, ইত্যাদির প্রতিকারের বিধান দেওয়া আছে। শ্রম আইনের ২৩৪ ধারার বিধান পালন করা না হলে ২৩৬ ধারায় এর প্রতিকারের বিধান রয়েছে।

এই তিনটি অভিযোগ শ্রম আইনে প্রতিকারের বিধান থাকায় এগুলো কোনোভাবেই ফৌজদারি অপরাধ নয়। শ্রম আইন অনুযায়ী এটি প্রশাসনিক ও সিভিল মোকদ্দমার বিষয়।

এ ছাড়া, এই মামলার বাদী একজন লেবার ইন্সপেক্টর। শ্রম আইনের বিধান অনুযায়ী বিবাদীদের বিরুদ্ধে তার মামলা দায়ের করার আইনগত কোনো ক্ষমতা নেই। ধারা ৩১৯ (৫) অনুযায়ী উক্ত মামলা করার ক্ষমতা কেবলমাত্র মহাপরিদর্শককে দেওয়া হয়েছে। অথবা মহাপরিদর্শকের কাছ থেকে তার অধীনস্থ কোনো কর্মকর্তা ক্ষমতাপ্রাপ্ত হলে তিনি বাদী হিসেবে বিবাদীদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা করতে পারেন। আইনগত এই বাধ্যবাধকতা থাকা সত্ত্বেও বাদী মহাপরিদর্শকের অনুমতি ছাড়াই ৩১৯ (১) ধারায় নিজ ক্ষমতাবলে মামলা করেছেন।

শ্রম আইনের ৩১৩ (২) ধারায় আদালতের উপরও আইনগত বাধ্যবাধকতা আছে যে তিনি মহাপরিদর্শক অথবা তার কাছ থেকে ক্ষমতাপ্রাপ্ত কোনো কর্মকর্তা ছাড়া কোনো মামলা গ্রহণ করতে পারবেন না। আদালতের নথিপত্রে এ বিষয়ে কোনো আদেশ লিপিবদ্ধ করা হয়নি।

গ্রামীণ টেলিকম তাদের বক্তব্যে বলছে, 'এসব বিষয় বিস্তারিত উল্লেখ করে ফৌজদারি কার্যবিধি আইনের ২৪১-এ ধারায় বিবাদীদেরকে মিথ্যা অভিযোগ থেকে অব্যাহতি দেওয়ার প্রার্থনা করার পরও বিজ্ঞ লেবার কোর্ট তা নামঞ্জুর করে ৪(৭)(৮), ১১৭ ও ২৩৪ ধারার অপরাধের অভিযোগ আমলে নিয়ে তাদের বিরুদ্ধে চার্জ গঠন করেছেন। এই চার্জ অর্ডারের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে পিটিশন দাখিল করা হলে বিচারপতি রুহুল কুদ্দুস ও বিচারপতি আশিস রঞ্জন দাস শ্রম আদালতের চার্জ অর্ডারটিকে কেন বাতিল ঘোষণা করা হইবে না এই মর্মে রুল জারি করলেও অপর পক্ষের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আপীল বিভাগ তা শুনানির জন্য রুল প্রদানকারী সিনিয়র কোর্টকে বাদ দিয়ে হাইকোর্টের অন্য একটি বেঞ্চ, যে কোর্ট পূর্বের একই বিষয়ে একটি বিবাদীদের দায়েরকৃত মামলায় বিপক্ষে রায় দিয়েছিলেন, সেই বিচারপতি মো. কুদ্দুস জামান ও বিচারপতি শাহেদ নূরউদ্দিনের কোর্টে প্রেরণ করলে তারা পূর্বের মামলার রায়কে টেনে এনে শুনানি শেষে রুলটি ডিসচার্জ করলে আপীল বিভাগ বিবাদীদের পক্ষে দায়ের লিভ টু আপিল পিটিশনটি শুনানিকালে মেইনটেনেবিলিটির উপর অনেক সময় শুনানি করলেও মূল মামলার বিষয়ের শুনানির জন্য মাত্র ১০ মিনিট সময় নির্ধারণ করে দেন। যা ছিল অপর্যাপ্ত। এরপর লিভ পিটিশনটি ডিসমিস করে। যদি আপিল বিভাগ আমাদেরকে শুনানির জন্য যদি পর্যাপ্ত সময় দিতো, তাহলে মামলায় আনা অভিযোগগুলো যে প্রশাসনিক ও সিভিল বিষয় এবং ফৌজদারি বিষয় নয় এবং মামলা দায়েরের ক্ষেত্রেও আইনগত ত্রুটি ও চার্জ অর্ডারের আইনগত ভুল-ভ্রান্তি রয়েছে সেগুলো ব্যাখ্যা করা যেতো এবং সেক্ষেত্রে আপিল বিভাগের রায় ও আদেশ ভিন্নতর হতে পারতো।'

দুদকের মামলা

দুদকের মামলা বিষয়ে নিজেদের বক্তব্যে গ্রামীণ টেলিকম বলেছে, ডাব্লিউপিপিএফ গ্রামীণ টেলিকমের জন্য প্রযোজ্য না হলেও একের পর এক মামলা এবং মামলায় আদালতের আদেশ ও নির্দেশনা দেখে গ্রামীণ টেলিকম কর্তৃপক্ষ ভীত হয়। অন্যদিকে সংশ্লিষ্ট শ্রম অধিদপ্তর ও আইন শৃঙ্খলা সংস্থাগুলোর চাপের মুখে পড়ে বিতরণযোগ্য না হওয়া সত্ত্বেও পারিপার্শ্বিক অবস্থায় নিরুপায় হয়ে গ্রামীণ টেলিকম শ্রমিক-কর্মচারী ও সিবিএর সঙ্গে চুক্তি করে, যা আদালতের আদেশ মেনেই করা হয়েছে।

সিবিএর সঙ্গে চুক্তি মোতাবেক ২০১০ সাল থেকে শুরু করে ২০২১-২০২২ অর্থ বছর পর্যন্ত নেট প্রফিটের ৫ শতাংশ ডাব্লিউপিপিএফ পাওনার ৯০ শতাংশ টাকা শ্রমিক-কর্মচারীদেরকে ব্যাংক অ্যাকাউন্টের মাধ্যমেই দেওয়া হয়েছে। মোট সুবিধাভোগী ১৬৪ জনের মধ্যে এ পর্যন্ত ১৫৬ জনকে তাদের প্রাপ্য টাকা দেওয়া হয়েছে। বাকি ৮ জনের মধ্যে ৪ জন দেশের বাইরে এবং ৪ জন মারা গেছেন। তাদের অংশ সেটেলমেন্ট অ্যাকাউন্টে রয়েছে, যা যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করে পরিশোধ করা হবে।

এই পরিস্থিতিতে এসে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলো দাবি তুলছে যে, সিবিএর সঙ্গে সমঝোতা করে গ্রামীণ টেলিকম ডাব্লিউপিপিএফর টাকা শ্রমিক-কর্মচারীদেরকে সরাসরি পরিশোধ করেছে, যার কোনো বিধান শ্রম আইন ২০০৬ এ নেই। সুতরাং, ডাব্লিউপিপিএফ বাবদ টাকা পরিশোধ করা বে-আইনি এবং গ্রামীণ টেলিকমের বিরুদ্ধে ফৌজদারি অপরাধ দায়ের প্রক্রিয়া চালু করেছে।

গ্রামীণ টেলিকম ইচ্ছাকৃতভাবে ডাব্লিউপিপিএফর অর্থ পরিশোধ করেনি। পারিপার্শ্বিক বিরূপ পরিস্থিতিসহ ভয়ের-কারণে ডাব্লিউপিপিএফর অর্থ বিতরণে গ্রামীণ টেলিকম বাধ্য হয়েছে।

দুদক উপ-পরিচালক গুলশান আনোয়ার বাদী হয়ে গত ৩০ মে ড. ইউনূস ও আরও সাত জন বোর্ড মেম্বারের বিরুদ্ধে মানিলন্ডারিংয়ের মাধ্যমে ২৫ কোটি ২২ লাখ ৬ হাজার ৭৮০ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে মামলা করে। এজাহারে বলা হয়, ড. ইউনূস ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. নাজমুল ইসলামসহ গ্রামীণ টেলিকম বোর্ডের সদস্যদের উপস্থিতিতে ২০২২ সালের ৯ মে গ্রামীণ টেলিকমের ১০৮তম বোর্ড সভায় ঢাকা ব্যাংক লিমিটেডের গুলশান শাখায় একটি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খোলার সিদ্ধান্ত হয়। তবে হিসাব খোলার এ সিদ্ধান্ত গ্রহণের একদিন আগেই ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খোলা হয়। গ্রামীণ টেলিকমের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বাৎসরিক নীট মুনাফা ডাব্লিউপিপিএফর ৫ শতাংশ পাওনা পরিশোধের জন্য গ্রামীণ টেলিকম শ্রমিক-কর্মচারীদের সঙ্গে ২০২২ সালের ২৭ এপ্রিল চুক্তির মধ্যে ৯ মে তারিখের খোলা ব্যাংক অ্যাকাউন্টটি দেখানো হয়েছে, যা বাস্তবে অসম্ভব। এমন ভুয়া সেটেলমেন্ট চুক্তির শর্ত অনুযায়ী ও বোর্ডের সিদ্ধান্ত মোতাবেক গ্রামীণ টেলিকম বিভিন্ন সময়ে উল্লেখিত ব্যাংক অ্যাকাউন্টে ২৬ কোটি ২২ লাখ ৬ হাজার ৭৮০ টাকা স্থানান্তর করে। কিন্তু কর্মচারীদের ৫ শতাংশ লভ্যাংশ বিতরণের আগেই তাদের প্রাপ্য অর্থ তাদেরকে না জানিয়ে আসামিরা আত্মসাৎ করেন। অ্যাডভোকেট ফি হিসেবে প্রকৃত পক্ষে হস্তান্তর করা হয়েছে এক কোটি টাকা। বাকি ২৫ কোটি ২২ লাখ ৬ হাজার ৭৮০ টাকা গ্রামীণ টেলিকমের চেয়ারম্যান, ব্যবস্থাপনা পরিচালক, বোর্ড সদস্যদের সহায়তার গ্রামীণ টেলিকমের সিবিএ নেতা ও অ্যাডভোকেটসহ সংশ্লিষ্টরা জালিয়াতির মাধ্যমে আত্মসাৎ করেছেন।

এ বিষয়ে নিজেদের ব্যাখ্যায় গ্রামীণ টেলিকম বলছে, সমঝোতা স্মারকের অন্যতম শর্ত ছিল কর্মকর্তা-কর্মচারীরা গ্রামীণ টেলিকম থেকে সম্মিলিতভাবে ৪৩৭ কোটি ১ লাখ ১২ হাজার ৬২১ টাকা পাবেন। পুনরায় হিসাব করলে দেখা যায়, সঠিক হিসাব অনুযায়ী ৪০৯ কোটি ৬৯ লাখ ২২ হাজার ৭৮৯ টাকা পাবেন তারা। শ্রমিক ইউনিয়নও এই হিসাবটি সঠিক বলে মেনে নেয়। চুক্তির শর্ত অনুযায়ী এই টাকা নির্ধারিত ব্যাংক হিসাবে হস্তান্তর করা হয়। দুদক কোনো প্রমাণ ছাড়াই এই টাকা আত্মসাতের অভিযোগ করছে। এই অভিযোগ সম্পূর্ণ বাস্তবতা বিবর্জিত, কাল্পনিক ও সর্বৈব মিথ্যা।

দুদকের অভিযোগ অনুযায়ী, গ্রামীণ টেলিকম থেকে ১ কোটি ৬৩ লাখ ৯১ হাজার ৩৮৯ টাকা অতিরিক্ত প্রদান করা হয়েছে। কিন্তু প্রকৃত সত্য হলো, সমঝোতা চুক্তি অনুযায়ী সমঝোতার জন্য নির্ধারিত মোট টাকা ব্যাংক অ্যাকাউন্টে হস্তান্তরের পর পুনরায় হিসাবের মাধ্যমে মোট প্রদেয় টাকার পরিমাণ কমে যায়। অর্থ গ্রহণের আগে সব কর্মকর্তা ও কর্মচারী তাদের প্রাপ্য টাকা থেকে ৬ শতাংশ তাদের মামলা পরিচালনাকারী আইনজীবীদের ফি ও বিবিধ খরচ বাবদ ইউনিয়নকে দিতে লিখিত অঙ্গীকারনামা দিয়েছে।

শ্রমিক-কর্মচারী ইউনিয়ন মোট প্রদেয় ৪৩৭ কোটি ১ লাখ ১২ হাজার ৬২১ টাকার স্থলে ৪০৯ কোটি ৬৯ লাখ ২২ হাজার ৭৮৯ টাকা মেনে নিলেও আইনজীবী তার ফি ও বিবিধ খরচ বাবদ পূর্বের হিসাবকৃত ৪৩৭ কোটি ১ লাখ ১২ হাজার ৬২১ টাকার ওপর দাবি করে এবং ৪০৯ কোটি ৬৯ লাখ ২২ হাজার ৭৮৯ টাকার ওপর ৬ শতাংশ অর্থ নিতে অস্বীকৃত জানান। গ্রামীণ টেলিকম কর্তৃপক্ষ নতুন করে বিবাদ এড়াতে সমঝোতার মাধ্যমে পূর্বের নির্ধারিত মোট প্রদেয় টাকার ওপর ফি পরিশোধ করে। যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করে ও যাবতীয় বিষয়াদি লিপিবদ্ধ করে এই টাকা হস্তান্তর করা হয়।

এজাহারে বর্ণিত আছে, ইউনিয়নের নেতারা এই টাকার কিছুটা আইনজীবীদের দিয়ে বাকিটা আত্মসাৎ করেছেন। এটি সত্য হলে তা দুঃখজনক। কিন্তু গ্রামীণ টেলিকমের চেয়ারম্যান বা বোর্ড সদস্যদের এই লেনদেনের সঙ্গে কোনো সম্পর্ক ছিল না। কেননা, এই টাকা সেটেলমেন্ট অ্যাকাউন্ট থেকে সব কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের লিখিত অঙ্গীকারনামা অনুযায়ী ইউনিয়নের অ্যাকাউন্টে হস্তান্তর করা হয়েছে, যে অ্যাকাউন্টে গ্রামীণ টেলিকম বা এর বোর্ড সদস্যদের কোনো কর্তৃত্ব নেই।

দুদক তাদের অভিযোগে বলেছে, গ্রামীণ টেলিকমের সঙ্গে শ্রমিক-কর্মচারী ইউনিয়নের চুক্তি হয়েছে ২০২২ সালের ২৭ এপ্রিল এবং টাকা প্রদানের জন্য ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খোলা হয়েছে ২০২২ সালের ৮ মে। সুতরাং সমঝোতা চুক্তিপত্রটি ভুয়া ও জালিয়াতির মাধ্যমে এই টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে।

এ বিষয়ে গ্রামীণ টেলিকমের বক্তব্য হচ্ছে, চুক্তিটি ২০২২ সালের ২৭ এপ্রিল কম্পিউটার কম্পোজের মাধ্যমে তৈরি করা হয় এবং ব্যাংক অ্যাকাউন্ট নম্বর লিপিবদ্ধ করার জায়গা ফাঁকা রাখা ছিল। পরবর্তীতে ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খোলার পর উভয়পক্ষের সম্মতিতে তা হাতে লিখে যুক্ত করা হয়। এ বিষয়ে ২০২২ সালের ৯ মে বোর্ড সভার সিদ্ধান্তের পরই ব্যাংকে টাকা হস্তান্তর করা হয়। উভয় পক্ষের সম্মতিতে হাতে লিখে ব্যাংক হিসাব নম্বর চুক্তিপত্রে যোগ করার কারণে তা আইনত জাল বা ভুয়া বলে বিবেচিত হয় না। সমঝোতা চুক্তিটি চলমান কোম্পানি ম্যাটারের মামলায় জমা প্রদান করা হলে হাইকোর্ট বিনা প্রশ্নে সমঝোতা স্মারকটি আমলে নিয়ে বিষয়টি নিষ্পত্তি করেছেন।

দায়েরকৃত এজাহারের বিভিন্ন প্রসঙ্গে 'ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নির্দেশে' কথাটি যুক্ত করা হয়েছে। অজ্ঞতা বা ভ্রান্ত ধারণা থেকে এটি বলা হয়েছে। কারণ, গ্রামীণ টেলিকমের যাবতীয় বিষয় মিটিংয়ে আলোচনার মাধ্যমে বোর্ড সদস্যদের সম্মতিক্রমে সিদ্ধান্ত হিসেবে গৃহীত বা বর্জিত হয়।

প্রফেসর ইউনূসের কর ফাঁকির অভিযোগ

প্রফেসর ইউনূসের আয়ের উৎস প্রধানত তার বক্তৃতার ওপর প্রাপ্ত ফি, বই বিক্রির রয়্যালিটি ও পুরস্কারের টাকা। এর প্রায় পুরোটাই বিদেশে অর্জিত। এই টাকা বৈধভাবে ব্যাংকিং চ্যানেলে দেশে আনা হয়েছে এবং কর বিভাগ তা অবহিত আছে। কারণ, সব টাকার হিসাব তার আয়কর রিটার্নে উল্লেখ থাকে।

তিনি মালিকানামুক্ত থাকতে চান বলে কোথাও তার মালিকানায় কোনো সম্পদ নেই। তিনি তার উপার্জনের টাকা দিয়ে দুটি ট্রাস্ট গঠন করেছেন। আয়ের ৯৪ শতাংশ টাকা দিয়ে গঠন করেছেন প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস ট্রাস্ট এবং বাকি ৬ শতাংশ আয় দিয়ে উত্তরসূরিদের কল্যাণের জন্য করেছেন ইউনূস ফ্যামিলি ট্রাস্ট। ফ্যামিলি ট্রাস্টের বিধান অনুযায়ী, তার পরবর্তী এক প্রজন্ম পরে এই ট্রাস্টের অবশিষ্ট টাকা স্বয়ংক্রিয়ভাবে প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস ট্রাস্টে ফিরে যাবে।

এসব টাকা নিজের নামে রাখলে তাকে কম কর দিতে হতো, কারণ ব্যক্তিগত করের হার প্রাতিষ্ঠানিক করের চেয়ে কম।

এ বিষয়ে আইন পরামর্শক বলছেন, ট্রাস্ট গঠনের কারণে ড. ইউনূসকে দানকর দিতে হবে না। কারণ প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস ট্রাস্টটি জনকল্যাণের জন্য প্রতিষ্ঠিত। ফ্যামিলি ট্রাস্টের ব্যাপারেও একই পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। এর ভিত্তিতেই ট্রাস্টে টাকা স্থানান্তরের সময় প্রফেসর ইউনূস কোনো কর দেননি।

কিন্তু আয়কর রিটার্ন দাখিল করার পর কর বিভাগের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা জানালেন, এ ক্ষেত্রে তাকে কর দিতে হবে। রিটার্নের তিনি দানের তথ্য উল্লেখ করলেও সংশ্লিষ্ট কর কর্মকর্তা তার ওপর দানকর ধার্য করেন।

আইন পরামর্শকের সঙ্গে পরামর্শ করে প্রফেসর ইউনূস এ ব্যাপারে আদালতের সিদ্ধান্ত চাইলে আদালত কর দেওয়ার পক্ষে মত দিয়েছেন।

এখানে কর ফাঁকি দেওয়ার কোনো প্রশ্নই নেই। কর দিতে হবে কি না, এ ব্যাপারে ড. ইউনূস নিজেই আদালতের সিদ্ধান্ত জানতে চেয়েছেন। আদালতে সরকার যায়নি, প্রফেসর ইউনূস গিয়েছেন। কর বিভাগ কোনো পর্যায়ে বলেনি যে প্রফেসর ইউনূস কর ফাঁকি দিয়েছেন।

গ্রামীণ ব্যাংকের এমডির পদ

প্রফেসর ইউনূস কখনোই গ্রামীণ ব্যাংকের এমডি পদ ধরে রাখার জন্য উৎসুক ছিলেন না। সরকারি ব্যাংকের মতো এই ব্যাংকের এমডির জন্য কোনো বয়সসীমা ছিল না। পরিচালনা পরিষদের সদস্যদের অনুরোধেই তিনি এই দায়িত্ব পালন করেছেন।

১৯৯০ সালে গ্রামীণ ব্যাংকে সরকারের শেয়ার ৬০ শতাংশ থেকে ২৫ শতাংশে নামিয়ে আনা হয় এবং ঋণগ্রহীতাদের শেয়ার ৪০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৭৫ শতাংশ করা হয়। সংশোধিত অধ্যাদেশ অনুযায়ী ব্যাংকটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক নিয়োগের ক্ষমতা বাংলাদেশ ব্যাংকের পূর্বানুমোদন সাপেক্ষে পরিচালনা পরিষদের ওপর ন্যস্ত করা হয়। ব্যাংকের সব নিয়মনীতি তৈরির ক্ষমতা পরিচালনা পরিষদকে দেওয়া হয়। ১৩ সদস্য বিশিষ্ট পরিচালনা পরিষদে চেয়ারম্যানসহ তিন জন সদস্য নিয়োগ দেওয়া ছাড়া আর কোনো ক্ষমতাই সরকারের কাছে রাখা হয়নি। সরকারি চাকরিবিধি অনুসরণ করার কোনো বাধ্যবাধকতা গ্রামীণ ব্যাংকে রাখা হয়নি। অন্যান্য ব্যাংকের মতোই এই ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের নিয়োগ দেওয়ার ক্ষমতা ছিল বোর্ডের এবং কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অনুমোদন সাপেক্ষে।

বাংলাদেশ ব্যাংক অবসরে যাওয়ার বয়সের প্রশ্ন তুলে প্রফেসর ইউনূসকে পদত্যাগ করতে নির্দেশ দেয় ২০১১ সালে। প্রফেসর ইউনূসকে এমডির পদ থেকে যখন সরানো হয়, তখন গ্রামীণ ব্যাংকের ঋণগ্রহীতাদের মালিকানা ছিল ৯৭ শতাংশ আর সরকারের ছিল ৩ শতাংশ। এ সময়ে প্রফেসর ইউনূস হাইকোর্টে রিট পিটিশন দাখিল করেন। হাইকোর্ট শুনানির জন্য তার রিট আবেদন এই মর্মে প্রত্যাখ্যান করেন যে এই পিটিশন দাখিলযোগ্য নয়। এরপর তিনি আপিল বিভাগে যান এবং আপিল বিভাগও একই মর্মে তার আবেদন প্রত্যাখ্যান করেন। প্রফেসর ইউনূস আদালতের সিদ্ধান্ত মেনে নিয়ে গ্রামীণ ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের পদ থেকে সরে দাঁড়ান।

গ্রামীণ টেলিকমের ভাষ্য, 'কোনোরূপ তথ্য-প্রমাণ ছাড়াই মামলাটি গ্রামীণ টেলিকমের চেয়ারম্যান ও বোর্ড সদস্যদের দীর্ঘদিনের অর্জিত সুনামে কালিমা লেপনের জন্যই দায়ের করা হয়েছে। সুতরাং একের পর এক মিথ্যা মামলা দায়ের করে গ্রামীণ টেলিকমের চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও বোর্ড সদস্যদের ব্যস্ত রাখার মাধ্যমে তাদের পরিচালিত জনকল্যাণমূলক কাজে বিঘ্ন সৃষ্টি করার মাধ্যমে তাদের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করার অপপ্রয়াস মাত্র।'

 

Comments