ড. ইউনূসের মামলা প্রসঙ্গে যা বললেন আইনমন্ত্রী

সচিবালয়ে সংবাদ সম্মেলনে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। ছবি: টেলিভিশন থেকে নেওয়া

ড. ইউনূসের বিরুদ্ধে করা মামলা ঘুষ দিয়ে আপসের চেষ্টা হয়েছিল বলে মন্তব্য করেছেন করেছেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক।

তিনি বলেন, 'ড. ইউনূসকে হয়রানির জন্য সরকার কিছু করছে না। শ্রমিকের অধিকার রক্ষায় সরকারি দপ্তর দায়িত্ব পালন করছে।'

আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে সচিবালয়ের মন্ত্রী তার নিজ দপ্তরে সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন।

সংবাদ সম্মেলনের শুরুতেই আইনমন্ত্রী বলেন, 'বিচারাধীন বিষয় নিয়ে সাধারণত আমি কোনো মন্তব্য করি না। কিন্তু নোবেল জয়ী ড. ইউনূসের মামলাকে কেন্দ্র করে সরকার ও দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র চলছে। তাই এই বিচারাধীন বিষয় নিয়ে আমি আজ কথা বললাম।'

আইনমন্ত্রী বলেন, 'এ নিয়ে বিদেশে মিথ্যা ছড়ানো হচ্ছে। অপপ্রচার হচ্ছে।'

তিনি বলেন, 'আমরা কারো অঙ্গুলি হেলনে চলি না। দেশে আইন আছে, আমরা সেই আইনে দেশ চালাব। অকাট্য প্রমাণ থাকার পরেও বিদেশে ছড়ানো হচ্ছে তার (ড. ইউনূস) বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ সেগুলো নাকি মিথ্যা এবং বলা হচ্ছে হয়রানির জন্য নাকি এটি করা হয়েছে, এসব অভিযোগ সত্য নয়।'

আইনমন্ত্রী বলেন, 'দেশের আদালত, বিচার বিভাগ এবং বাংলাদেশের মর্যাদা, গণতন্ত্র ও ন্যায় বিচারের ধারাবাহিকতাকে ক্ষুণ্ণ করার জন্য একটি মামলাকে কেন্দ্র করে অপ্রচার হচ্ছে।'

তিনি বলেন, 'রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে যে ষড়যন্ত্র হচ্ছে, যেভাবে হচ্ছে সেটি মোকাবিলা করার জন্যই আজকে সংবাদ সম্মেলন ডেকেছি। সংবাদ মাধ্যমে আমরা সত্য তুলে ধরব।'

নোবেল পুরস্কারজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নামে শ্রম আইন লঙ্ঘনের মামলা ও সাজার বিষয়ে আনিসুল হক বলেন, সরকার ড. ইউনূসকে হয়রানি করার জন্য কিছু করছে না। সরকার তার বিরুদ্ধে কোনো মিথ্যা মামলা দিয়েও হয়রানি করছে না। যে মামলা হয়েছিল সেটি শ্রমিকেরা করেছিলেন, তারপরে শ্রমিকদের অধিকার সুরক্ষার জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত অধিদপ্তর তার বিরুদ্ধে মামলা করেছে।

আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, নির্বাহী বিভাগ, আইন সভা, বিচার বিভাগ এ দেশের সব মানুষের। এদেশের মানুষেরই দায়িত্ব এগুলোকে রক্ষা করা এবং এগুলোর কাজ সঠিকভাবে চলতে দেওয়া। কেউ আইনের ঊর্ধ্বে নন, অপরাধ করলে সকলকেই আইনের মাধ্যমে বিচারের সম্মুখীন হতে হবে।'

ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নামে শ্রম আইন লঙ্ঘনের মামলা ও সাজা পরবর্তী ঘটনার বিষয়গুলো তুলে ধরতে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয় উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, যেখানে সরকার , বিচার বিভাগ এবং দেশের ব্যাপার জড়িত এবং  যখন দেশের মর্যাদা হেয় করার প্রচেষ্টা চলে, তখন সরকার নিশ্চুপ থাকতে পারে না। সেজন্যই  ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বিরুদ্ধে শ্রম আইনে যে মামলা হয়েছিল তার কার্যাবলি ও পরিপ্রেক্ষিত ব্যাখা করার জন্যই মন্ত্রীকে সংবাদ সম্মেলন ডাকতে হয়েছে।'

আনিসুল হক বলেন, ২০১৭ সালে শ্রমিকরা অধিকার ক্ষুণ্ন হচ্ছে ও ন্যায্য প্রাপ্যতা দেওয়া হচ্ছে না অভিযোগ তুলে ড. ইউনূসের বিরুদ্ধে শ্রম আদালতে শতাধিক মামলা করেন। পরে নায্য প্রাপ্যতা দেওয়ার আশ্বাস দেওয়ায় তারা এই মামলা প্রত্যাহার করে। কিন্তু শ্রম অধিদপ্তরের কাছে মনে হয় যে শ্রমিকরা যে অভিযোগ করেছেন, তাতে ওই প্রতিষ্ঠানে শ্রম অধিকার ক্ষুণ্ন হচ্ছে। সেই কারণে তারা তদন্ত করে এবং শ্রম দপ্তরের তদন্তে শ্রম অধিকার ক্ষুণ্ন হওয়ার একাধিক ঘটনা উঠে আসে। এরপর শ্রম দপ্তর মামলা করেছে।

তিনি বলেন, 'এই মামলার বিষয়ে ড. ইউনূস হাইকোর্টে এবং আপিল বিভাগে আবেদন করেছিলেন যে, এই মামলা চলতে পারে না। দুই জায়গা থেকেই আবেদন খারিজ হয়ে গেছে। এর অর্থ হচ্ছে দেশের সর্বোচ্চ আদালত এই মামলা পরিচালনার অনুমোদন দিয়েছেন। এরপর আর কিছু বলার থাকে না।'

আইনমন্ত্রী বলেন, 'এখন যে বলা হচ্ছে, সরকার তাকে হয়রানি করছে, শ্রমিকরা মামলা করেনি; এগুলো দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র।'

আরেক প্রশ্নের জবাবে আইনমন্ত্রী বলেন, 'কর ফাঁকির বিষয়ে ড. ইউনূস আপিল বিভাগ পর্যন্ত গিয়েছিলেন। তিনি হেরেছেন এবং ১২ কোটি টাকা কর পরিশোধ করেছেন। কেউ ফাঁকি না দিলে কোটি কোটি টাকা পরিশোধ করে না।'

তিনি বলেন, 'বিজ্ঞ বিচারিক আদালত সাক্ষ্য প্রমাণ সাপেক্ষে দোষী সাব্যস্ত হওয়ায় তাকে শাস্তি দিয়েছেন।'

শ্রম অধিকার বিষয়ক এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, 'আমাকে প্রায়ই আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার সঙ্গে কথা বলতে হচ্ছে। তারাও বাংলাদেশের শ্রম অধিকার নিশ্চিত করার বিষয়ে কাজ করছে। আমরাও কাজ করে যাচ্ছি ।'

Comments

The Daily Star  | English
Drug sales growth slows amid high inflation

Drug sales growth slows amid high inflation

Sales growth of drugs slowed down in fiscal year 2023-24 ending last June, which could be an effect of high inflationary pressure prevailing in the country over the last two years.

17h ago