ড. ইউনূসের কর ফাঁকি দেওয়ার কোনো প্রশ্নই নেই: ইউনূস সেন্টার

‘প্রশ্ন তোলা হয়েছে যে প্রফেসর ইউনূস ট্রাস্টের বিপুল পরিমাণ অর্থ বিদেশ ভ্রমণে ব্যয় করেন। বিষয়টি মোটেই সত্য নয়। তার বিদেশ ভ্রমণের সব ব্যয় আমন্ত্রণকারী প্রতিষ্ঠান বহন করে।’
ড. মুহাম্মদ ইউনূস। ছবি: সংগৃহীত

গণমাধ্যমে নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূসের টাকা নিয়ে যে প্রতিবেদন প্রকাশ হচ্ছে, সেই টাকা তার বক্তৃতার ওপর প্রাপ্ত ফি, বই বিক্রি থেকে পাওয়া ও পুরস্কারের, যার পুরোটাই বিদেশে অর্জিত এবং বৈধভাবে ব্যাংকিং চ্যানেলে দেশে আনা হয়েছে।

আজ শুক্রবার ইউনূস সেন্টার থেকে দেওয়া সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

এতে বলা হয়েছে, প্রফেসর ইউনূসের যে টাকা নিয়ে পত্র-পত্রিকা ও টেলিভিশনে আলাপ চলছে, তার পুরোটাই প্রফেসর ইউনূসের অর্জিত টাকা। তার উপার্জনের সূত্র প্রধানত তার বক্তৃতার ওপর প্রাপ্ত ফি, বই বিক্রি লব্ধ টাকা এবং পুরস্কারের টাকা। এর প্রায় পুরো টাকাটাই বিদেশে অর্জিত টাকা। এই টাকা বৈধভাবে ব্যাংকিং চ্যানেলে আনা হয়েছে। কর বিভাগ তা অবহিত আছে। কারণ সব টাকার হিসাব তার আয়কর রিটার্নে উল্লেখ থাকে।

এত টাকা দিয়ে প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস কী করবেন, সেই বিষয়ে বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, তিনি জীবনে কোনো সম্পদের মালিক হতে চাননি। তিনি মালিকানামুক্ত থাকতে চান। কোথাও তার মালিকানায় কোনো সম্পদ নেই (বাড়ি, গাড়ি, জমি বা শেয়ার ইত্যাদি)। তাই তিনি সিদ্ধান্ত নেন তার উপার্জনের টাকা দিয়ে ২টি ট্রাস্ট গঠন করবেন। তিনি তাই করেছেন।

একটি ট্রাস্ট করলেন প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস ট্রাস্ট এবং অল্প কিছু টাকা দিয়ে (মোট টাকার ৬ শতাংশ) উত্তরসূরীদের কল্যাণের জন্য করলেন ইউনূস ফ্যামিলি ট্রাস্ট। ফ্যামিলি ট্রাস্টের মূল দলিলে এই রূপ বিধান রেখে দিলেন যে তার পরবর্তী এক প্রজন্ম পরে এই ট্রাস্টের অবশিষ্ট টাকা স্বয়ংক্রিয়ভাবে মূল ট্রাস্টে ফিরে যাবে। তিনি এটা করলেন যাতে তার বর্তমানে ও অবর্তমানে টাকাটা ট্রাস্টিদের তত্ত্বাবধানে নিরাপদে থাকে এবং তারা ট্রাস্ট ২টির লক্ষ্য বাস্তবায়নে তৎপর থাকে।

দানকর দেওয়ার বিষয়ে বলা হয়েছে, ড. ইউনূসের নিজের টাকা নিজের কাছে রেখে দিলে তাকে কম ট্যাক্স দিতে হতো। কারণ ব্যক্তিগত করের হার প্রতিষ্ঠানিক করের হারের চেয়ে কম। দানকরের প্রসঙ্গটি তুলেছেন তার আইনজীবী। আইনপরামর্শক বলেন, ট্রাস্ট গঠনের কারণে তাকে দানকর দিতে হবে না। কারণ বড় ট্রাস্টটি জনকল্যাণের জন্য প্রতিষ্ঠিত। ফ্যামিলি ট্রাস্টের ব্যাপারে তিনি পরামর্শ দিলেন যে, এরকম ক্ষেত্রে (অর্থাৎ প্রফেসর  ইউনূসের অবর্তমানে তার সম্পদের কী হবে, সে চিন্তায় যদি তিনি কোনো ব্যবস্থা নিয়ে থাকেন তবে সেক্ষেত্রে) তাকে কোনো কর দিতে হবে না। কারণ এটা হবে তার অর্জিত টাকার একটি সুব্যবস্থা করে যাওয়া।

আইনজীবীর পরামর্শের ভিত্তিতে টাকা স্থানান্তর করার সময় প্রফেসর ইউনূস কোনো কর দেননি। কিন্তু তিনি আয়কর রিটার্ন দাখিল করার পর কর বিভাগের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা জানালেন যে, এক্ষেত্রে তাকে কর দিতে হবে। রিটার্নের যেখানে তিনি দানের তথ্যটি উল্লেখ করেছিলেন, সংশ্লিষ্ট কর কর্মকর্তা তার ওপর দানকর ধার্য করে দিলেন। তিনি টাকার অঙ্কটা রিটার্নসে উল্লেখ করায় কর কর্মকর্তা তা দেখে কর আরোপ করেছেন। আইন পরামর্শকের সঙ্গে পরামর্শ করে প্রফেসর ইউনূস এ ব্যাপারে আদালতের সিদ্ধান্ত চাইলেন। আদালত কর দেওয়ার পক্ষে মত দিয়েছেন।

এখানে তার কর ফাঁকি দেওয়ার কোনো প্রশ্নই নেই। কর দিতে হবে কি না, এ ব্যাপারে তার পক্ষ থেকেই আদালতের সিদ্ধান্ত জানতে চাওয়া হয়েছিল। আদালতে সরকার যায়নি, প্রফেসর ইউনূস গিয়েছেন। কর বিভাগ কোনো পর্যায়ে বলেনি যে প্রফেসর ইউনূস কর ফাঁকি দিয়েছেন। এখানে কর ফাঁকি দেওয়ার কোনো প্রশ্ন উঠেনি। প্রশ্ন ছিল আইনের প্রয়োগযোগ্যতা নিয়ে। এখন প্রফেসর ইউনূস বিবেচনা করবেন তিনি কর পরিশোধ করবেন নাকি উচ্চ আদালতের সিদ্ধান্ত চাইবেন। করের আইন যদি এক্ষেত্রে প্রয়োগযোগ্য না হয়, প্রফেসর ইউনূস তাহলে সে টাকাটা জনহিতকর কাজে ব্যবহার করার সুযোগ পাবেন। এই হলো কর নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করার পেছনে তার উদ্দেশ্য, ব্যক্তিগতভাবে লাভবান হওয়ার জন্য নয়।

বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়েছে, প্রশ্ন তোলা হয়েছে যে প্রফেসর ইউনূস ট্রাস্টের বিপুল পরিমাণ অর্থ বিদেশ ভ্রমণে ব্যয় করেন। বিষয়টি মোটেই সত্য নয়। তার বিদেশ ভ্রমণের সব ব্যয় আমন্ত্রণকারী প্রতিষ্ঠান বহন করে। শুধু তাই নয়, প্রতি ভ্রমণে একজন অতিরিক্ত ব্যক্তিকে সফরসঙ্গী হিসেবে সঙ্গে নিয়ে যাওয়ার ব্যয়ও আমন্ত্রণকারী প্রতিষ্ঠান বহন করে। প্রফেসর ইউনূসের বিদেশ ভ্রমণের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কোনো ব্যয় তার কোনো ট্রাস্টকে বা তাকে বহন করতে হয় না। কখনো কখনো তাকে নিয়ে যাওয়ার জন্য প্রাইভেট উড়োজাহাজ পাঠিয়ে দেওয়া হয়। বিদেশ ভ্রমণ নিয়ে টাকা খরচের চিন্তা তাকে কখনো করতে হয় না।

Comments

The Daily Star  | English

Quota protests: Bhashani univ students lift blockade on Dhaka-Tangail highway

Hundreds of students from Mawlana Bhashani Science and Technology University today briefly blocked the Dhaka-Tangail highway to protest the reinstatement of the quota system in government jobs

43m ago