৮২১ কোটি টাকা পাচারে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে: টিআইবি

বাজেটে কালো টাকা সাদা করার সুযোগ

রপ্তানি-আমদানি বাণিজ্যের আড়ালে ৮২১ কোটি টাকা পাচারের সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিতের আহ্বান জানিয়েছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। 

গত ৬ বছরে ৩৩টি তৈরি পোশাক কারখানা ও বায়িং হাউজ রপ্তানি-আমদানি বাণিজ্যের আড়ালে কমপক্ষে ৮২১ কোটি টাকা পাচার করেছে বলে সম্প্রতি কাস্টমস গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর (সিআইআইডি) জানিয়েছে। এসব পোশাক কারখানা ও বায়িং হাউজের সংশ্লিষ্টদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিতের পাশাপাশি অর্থপাচারের ঘটনার আরও গভীর ও বিস্তৃত তদন্তের দাবি জানিয়েছে টিআইবি।

অর্থপাচারের এ ঘটনা প্রকাশ করায় সিআইআইডিকে সাধুবাদ জানিয়ে আজ মঙ্গলবার টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, 'এই ঘটনা প্রমাণ করে যে, বাণিজ্যভিত্তিক অর্থপাচারের ঘটনা খুঁজে বের করে তা প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণের সক্ষমতা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের আছে। তবে ৮২১ কোটি টাকা পাচারের ঘটনা আসলে হিমশৈলের চূড়ামাত্র। গ্লোবাল ফিন্যান্সিয়াল ইনটেগ্রিটির (জিএফআই) ২০১৮ সালের তথ্য অনুযায়ী, আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের মাধ্যমে বাংলাদেশ থেকে প্রতিবছর গড়ে ৭৫৩ কোটি ৩৭ লাখ ডলার পাচার হয়, টাকার অঙ্কে তা প্রায় ৮০ হাজার কোটি টাকা।'

তিনি বলেন, 'হালনাগাদ করা হলে দেশ থেকে শুধু আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে মিস-ইনভয়েসিংয়ের মাধ্যমে পাচার করা অর্থের পরিমাণ হবে বছরে কমপক্ষে ১ হাজার কোটি ডলার। অথচ, সরকারকে বৈদেশিক মুদ্রা সংকট মোকাবিলা করতে আইএমএফ থেকে সাড়ে ৩ বছরের জন্য ৪৭০ কোটি ডলার ঋণ করতে হয়েছে, যা সুদসহ পরিশোধ করতে হবে।'

'অর্থপাচার নিয়ন্ত্রণ করা গেলে যেমন বাংলাদেশকে আইএমএফের দ্বারস্থ হতে হতো না, তেমনি দেশে রিজার্ভ সংকটও তৈরি হতো না,' বলেন তিনি।

এ অবস্থায় অর্থপাচার প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণে দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠানগুলোকে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে টিআইবি।

বাণিজ্যভিত্তিক অর্থপাচারে জড়িতদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানিয়ে ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, 'আন্তর্জাতিক বাণিজ্য সংশ্লিষ্ট সংগঠনগুলো ও তাদের সদস্যদের শুদ্ধাচার চর্চায় উদ্যোগী হওয়া জরুরি। অন্যদিকে, দেশে অনেক সময়ই অর্থপাচারের ঘটনা উন্মোচন হলেও জড়িত ব্যক্তিরা পরিচয় ও অবস্থানের বলে পার পেয়ে যান।'

তিনি বলেন, 'বিত্তশালী, রাজনৈতিক আনুকূল্য বা অন্যভাবে প্রভাবশালী হওয়ার কারণে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব হয় না, যার দৃষ্টান্ত অতি সম্প্রতিও হতাশাজনকভাবে দেখতে হয়েছে। ৮২১ কোটি টাকা পাচারের ঘটনায় যাদের সম্পৃক্ততার অভিযোগ উত্থাপিত হলো, তাদের ক্ষেত্রেও এর পুনরাবৃত্তি হবে না, দেশবাসীর এই প্রত্যাশা।'

'সব ধরনের অনুকম্পা বা ভয়ের ঊর্ধ্বে থেকে, পরিচয় ও অবস্থান নির্বিশেষে আইনানুগভাবে সৎসাহস ও দৃঢ়তার পরিচয় দিয়ে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে। সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলো যদি অর্পিত দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করতে পারে তবে পাচারের জন্য প্রযোজ্য শাস্তির পাশাপাশি পাচারকৃত অর্থ বিদেশ থেকে ফেরত আনা সম্ভব, যা কর্তৃপক্ষের অজানা নয়। আইনের যথাযথ প্রয়োগ ও প্রাতিষ্ঠানিক ব্যর্থতা অব্যাহত থাকলে এ ধরনের ঘোরতর অপরাধ আরও ব্যাপক আকার ধারণ করবে,' যোগ করেন তিনি।  

অর্থপাচার প্রতিরোধে দুর্নীতি দমন কমিশনের মতো বিশেষায়িত প্রতিষ্ঠানের ক্ষমতা খর্ব করার সমালোচনা করে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক বলেন, 'অর্থপাচারের সঙ্গে জড়িত অনেকগুলো অপরাধের অনুসন্ধান ও তদন্ত দুদকের এখতিয়ার থেকে সরিয়ে নেওয়ার ফলে অর্থপাচারের ক্ষেত্রে দুদক তার প্রত্যাশিত ভূমিকা পালন করতে পারছে না। মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ বিধিমালা ২০১৯ সংশোধন করে দুদকের ক্ষমতা ফিরিয়ে দেওয়ার জোর দাবি জানাচ্ছি।' 

 

Comments

The Daily Star  | English

Jatrabari turns into battlefield as students clash

Scores of people were injured as students of three colleges clashed at Dhaka's Jatrabari today, turning the area into a battlefield

1h ago