চাঁদের আলোয় আমরা কজন... 

ছবি: নাদিয়া রহমান

বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের 'আরণ্যক' বইয়ের অন্যতম চরিত্র, প্রোটাগনিস্ট সত্যচরণের বর্ণনার সঙ্গে তুলনা দেওয়া যায়! যেখানে নির্জন জ্যোৎস্নাশোভিত রাত্রির রহস্যময়তার বর্ণনা করা হয়েছে নিপুণভাবে। 

যেখানে আধুনিক কলকাতার এক যুবক অরণ্যের সুবিশাল প্রান্তরে খুঁজে পেয়েছিল আদিমতম জীবনের এক গাঢ় রূপ।
 
অবশ্যই 'আরণ্যক' বইয়ের সেই বিস্তীর্ণ প্রান্তরের সঙ্গে আমার পরিচয় হয়নি। বরাবরই আমার বহুতল দালানঘেরা শহরে বেড়ে ওঠা। তারপরও বইয়ের জগত বলেও তো একটা জগত থাকে, যার মধ্য দিয়ে বিচরণ করা যায় শত বছরের পুরনো দিনগুলোতেও। 

আধুনিক যুগের অন্যতম এক আধুনিক শহর আমার এই বর্তমান ঠিকানা, লেক্সিংটন শহর। ঠিক যতবারই এই শহরে পূর্ণিমা বা 'ফুল মুন' দেখেছি ততবারই মনে পড়েছে 'আরণ্যক' বইয়ের এইসব বর্ণনা। 

এখানে আকাশ বেশ স্বচ্ছ। যত স্বচ্ছ এবং বিশাল চাঁদ দেখেছি এখানে, এমন রূপে নিজ দেশের আকাশে দেখা হয়নি। গ্রীষ্মের বেলা শেষে আর একটানা ঝিঁঝিঁ পোকার ডাকের পর, আকাশটা যখন শান্তভাবে বেগুনি-গোলাপি হয়ে আসে, ঠিক তখনই ডর্মের সামনের ছোট্ট বারান্দা বা 'পর্চে' দাঁড়িয়ে দেখা যায় বেশ স্বচ্ছ এই চাঁদ। এমনো হয়েছে, রাত জেগে পড়বার টেবিলে বসে কাজ করবার পর যারপরনাই ক্লান্ত, তখন ঘরের বাতি নিভিয়ে শুধু চাঁদের আলোয় পর্যবেক্ষণ করেছি সামনের সুবিশাল মাঠ। বিকেলেও যেখানে কেউ বাস্কেটবল কিংবা সাইক্লিং করে গেছে, সেই একই মাঠ-প্রান্তর কত ভিন্ন দেখাতে পারে স্নিগ্ধ চাঁদের আলোয়। আলোর রহস্যময়ী সহোদরা যে কত বিচিত্র হতে পারে তাই এই একেবারে নিশ্চুপ পূর্ণিমা ছাড়া যাচাই করা হত না।
 
সব থেকে উপভোগ করা হয়, রাতের বেলা এই চাঁদের আলোয় যখন হাঁটতে বের হই। আমাদের ডর্ম ঘিরে কেন্টাকির স্টেট গার্ডেন 'আরবোরেটাম'। এখানে বাগান বলা হলেও দেশে হয়তো একে বনই বলা হতো। ভাগ্যক্রমে আমার মতো কয়েকজন গ্রাজুয়েট শিক্ষার্থী পাওয়া গেছে যাদের সঙ্গে মাঝ রাতে চাঁদের আলোয় হাঁটতে বেরুবার পরিকল্পনা করা হয় প্রায়শই। ভরা পূর্ণিমায় সোডিয়াম বাতি আর জোনাকি পোকার আলো ছাড়া যান্ত্রিক শহুরে জীবনের তেমন কোনো আলো আর চোখে পড়ে না এই বাগানের মধ্যে। গ্রীষ্মের প্রখর রোদের পর যখন শান্ত ঝিরিঝিরি বাতাস বইতে থাকে, তার মধ্যেই বিশাল মাঠে পূর্ণিমায় চাঁদর পেতে কয়েকজনকে বসতে দেখা যায়। নিরাপত্তা নিয়ে ভাবনা নেই, যে যার মতো একই পূর্ণিমাকে নিজের ফ্রেমে সাজিয়ে নিতে পারে। 

শীতের মৌসুমে যখন ক্লাস থেকে ফিরতে প্রায় রাত হতো, তখন নির্জন পথে পূর্ণিমা রাতে কুয়াশায় একাকী হেঁটে যাবার সময় প্রতিবারই মনে পড়েছে সত্যচরণের কিছু স্বভাষণ, 'নির্জনতা, নক্ষত্রভরা আকাশের মোহ আমাকে এমনভাবে পেয়ে বসেছে যে, আধুনিক প্রযুক্তির এই পিচঢালা রাস্তার গণ্ডি পেরিয়ে বেড়িয়ে পড়ি অরণ্যের পর অরণ্যে। যখন গভীর ঘুমের মাঝে বনের শত বিচিত্র শব্দের প্রহর-ঘোষণা শোনা যায়!'

নাদিয়া রহমান: প্রভাষক, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ, বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালস (বিইউপি) ও যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব কেন্টাকির মাস্টার্সের শিক্ষার্থী।

 

Comments

The Daily Star  | English

DU JCD leader stabbed to death on campus

Shahriar Alam Shammo, 25, was the literature and publication secretary of the Sir AF Rahman Hall unit of Jatiyatabadi Chhatra Dal

2h ago