চন্দ্র জয়ের পর এবার সূর্যের দিকে ভারত
সম্প্রতি ইতিহাস সৃষ্টি করে চাঁদে সফলভাবে অবতরণ করেছে ভারতের মহাকাশযান চন্দ্রযান-৩। এবার দেশটির চোখ সূর্যের দিকে।
ভারতের সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি জানিয়েছে, শনিবার, অর্থাৎ ২ সেপ্টেম্বর থেকে শুরু হতে যাচ্ছে ভারতের সূর্য অভিযান।
কীভাবে এই অভিযান পরিচালিত হবে
ভারতের মহাকাশ গবেষণা প্রতিষ্ঠান আইএসআরও (ইসরো নামে বহুল পরিচিত) সূর্যে অভিযান পরিচালনার লক্ষ্যে আদিত্য-এল ১ নামের মহাকাশযান পাঠানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে।
সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে আগামীকাল শ্রীহরিকোটা থেকে মহাকাশযানটির উৎক্ষেপণের কথা রয়েছে। পোলার স্যাটেলাইট লঞ্চ ভেহিকল (পিএসএলভি) নামের একটি রকেট এটিকে বহন করে মহাকাশে নিয়ে যাবে।
PSLV-C57/Aditya-L1 Mission:
Aditya-L1, the first space-based Indian observatory to study the Sun ☀️, is getting ready for the launch.
The satellite realised at the U R Rao Satellite Centre (URSC), Bengaluru has arrived at SDSC-SHAR, Sriharikota.
More pics… pic.twitter.com/JSJiOBSHp1
— ISRO (@isro) August 14, 2023
তবে চাঁদের মতো সূর্যে অবতরণ করার কোনো সম্ভাবনা নেই আদিত্য এল ১ এর! এখনো সূর্যপৃষ্ঠের ১০ হাজার ৩৪০ ফারেনহাইট তাপমাত্রাকে জয় করে সেখানে অবতরণ করার মতো প্রযুক্তি মানব জাতি উদ্ভাবন করতে পারেনি। উল্লেখ্য, মার্কিন মহাকাশ সংস্থা নাসার দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, এর বায়ুমণ্ডলের তাপমাত্রা আরও ৩০০ গুণ বেশি, যা পার হয়েই সূর্যপৃষ্ঠে পৌঁছাতে হবে।
গবেষণার বৃত্তান্ত
সুনির্দিষ্ট দূরত্ব থেকে পর্যবেক্ষণের পাশাপাশি ভারতের এই মহাকাশযান সূর্যের বায়ুমণ্ডলের বিভিন্ন স্তর সম্পর্কেও বিস্তারিত গবেষণা করবে। এছাড়াও সৌরঝড় ও সূর্যের রহস্যময় 'করোনা স্তর' পর্যবেক্ষণ করবে এই যান। দীর্ঘমেয়াদে এই অভিযান থেকে পাওয়া তথ্যের মাধ্যমে পৃথিবীর জলবায়ুর উপর সূর্যের প্রভাব সম্পর্কে আরও স্পষ্ট ধারণা পাওয়া যাবে বলে আশাবাদ প্রকাশ করেছেন সংশ্লিষ্টরা।
আদিত্য এল-১ এর অভ্যন্তরে
সূর্যের আরেক নাম আদিত্য। তাই মহাকাশযানটির নাম প্রথমে রাখা হয়েছিল আদিত্য-১। কিন্তু যেহেতু এটি ল্যাগ্রন পয়েন্টে যাবে, তাই পরে নামের সঙ্গে 'এল ১' যুক্ত করা হয়।
মহাকাশযানটিতে বিশেষভাবে নির্মিত ৭টি অংশ রয়েছে। এর মধ্যে ৪টি দূর থেকে সূর্যকে পর্যবেক্ষণ করবে আর ৩টি সূর্যকে খুব কাছ থেকে পর্যবেক্ষণ ও গবেষণায় ব্যবহৃত হবে।
এই মহাকাশযান ৫ বছরেরও বেশি সময় ধরে গবেষণা চালাতে পারবে বলে আশা করা হচ্ছে।
ইসরোর এই মহাকাশযানটির আকার একটি রেফ্রিজারেটরের মতো হলেও এর ওজন প্রায় দেড় হাজার কেজি। মহাকাশের প্রতিকূল পরিস্থিতিতে টিকে থাকার জন্য মজবুত ও বিশেষ ধরনের ধাতু ব্যবহার করা হয়েছে এতে।
সোলার প্যানেল ও ব্যাটারির সাহায্যে কার্যক্রম পরিচালনা করবে আদিত্য-এল ১। সূর্যের ছবি তোলার জন্য এটিতে উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন ক্যামেরা বসানো হয়েছে।
অভিযানের বিস্তারিত
উৎক্ষেপণের পর ১৫ লাখ কিলোমিটার পাড়ি দিয়ে গন্তব্যে পৌঁছাবে আদিত্য-এল ১। ইসরোর প্রধান এস সোমানাথ বলেন, 'উৎক্ষেপণের পর যানটি ল্যাগ্রন পয়েন্ট ১-এ (সূর্য ও পৃথিবীর মাঝের একটি কক্ষপথ) পৌঁছাতে ১২৫ দিন সময় নেবে। ততদিন পর্যন্ত আমাদের অপেক্ষা করতে হবে।'
ল্যাগ্রন পয়েন্ট ১ 'এল ১' নামেও পরিচিত। এখান থেকে সূর্যকে পর্যবেক্ষণ করা সহজ। বিখ্যাত ইতালীয়-ফরাসী গণিতবিদ জোসেফ-লুই ল্যাগ্রনের নাম অনুসারে এই পয়েন্টের নামকরণ করা হয়েছে।
সূর্য অভিযানের সম্ভাব্য খরচ
কম খরচে মহাকাশ অভিযান পরিচালনার জন্য ইতোমধ্যে ইসরো সুনাম কুড়িয়েছে। সম্প্রতি চাঁদের রহস্যময় ও দুর্বোধ্য দক্ষিণ মেরুতে অবতরণ করা চন্দ্রযান ৩ অভিযানে ৬১৫ কোটি রুপি ব্যয় করেছে ইসরো, যা অনেক বলিউড সিনেমা নির্মাণ খরচের চেয়েও কম।
আদিত্য এল-১ তৈরিতে খরচ হয়েছে চন্দ্রযান ৩ এর অর্ধেক। ২০১৯ সালে ভারত সরকার এই অভিযানের জন্য ৩১৯ কোটি রুপি বরাদ্দ দেয়। যদিও ইসরো এখনো এই অভিযানের খরচ সম্পর্কে আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো মন্তব্য করেনি।
এটি হতে যাচ্ছে সূর্যে ভারতের প্রথম অভিযান।
সূত্র: এনডিটিভি
গ্রন্থনা: আহমেদ হিমেল
Comments