এশিয়া কাপ নাকি আরেকটি ‘ছদ্মবেশী’ ভারত-পাকিস্তান সিরিজ?

ছবি: এএফপি

জীবনে তিনটি বিষয় নিশ্চিত: মৃত্যু, কর দেওয়া আর এশিয়া কাপে ভারত ও পাকিস্তানের একই গ্রুপে পড়া!

গতকাল শনিবার এশিয়ান ক্রিকেট কাউন্সিল (এসিসি) ঘোষিত এশিয়া কাপের ১৭তম আসরের সূচিতে আবারও দেখা গেল, টানা চতুর্থবারের মতো ভারত ও পাকিস্তানকে একই গ্রুপে রাখা হয়েছে।

এই সিদ্ধান্তের পেছনের উদ্দেশ্য খুবই পরিষ্কার— ভারত-পাকিস্তান ম্যাচ ক্রিকেটের যে কোনো ইভেন্টের চেয়ে বেশি দর্শক আকর্ষণ করে। আর যত বেশি মানুষ খেলা দেখবে, তত বেশি টাকা আয়ের সুযোগ তৈরি হবে।

এক যুগের বেশি সময় ধরে ভারত ও পাকিস্তান নিজেদের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক সিরিজ খেলছে না। প্রতিবেশী দেশ দুটির মধ্যকার সাম্প্রতিক সংঘাতের কারণে বলা যায়, নিকট ভবিষ্যতে এই অচলাবস্থার পরিবর্তনের কোনো সম্ভাবনাও নেই। এই বাস্তবতা তাদের লড়াইকে আরও বেশি লাভজনক ও আকর্ষণীয় করে তুলেছে।

কিন্তু কীভাবে এসিসি নিশ্চিত করে যে, প্রতিবারই ভারত ও পাকিস্তান একই গ্রুপে পড়বে? উত্তরটা ভীষণ সহজ— খেলাধুলার অন্যান্য বড় টুর্নামেন্টের মতো লটারির মাধ্যমে গ্রুপ নির্ধারণের প্রথা এড়িয়ে গিয়ে তারা নিজেরাই গ্রুপ তৈরি করে। এতে কোনো কিছুই আর ভাগ্যের ওপর নির্ভর করে না।

তদুপরি, গ্রুপ পর্বে ভারত ও পাকিস্তানকে তুলনামূলকভাবে দুর্বল দলের বিপক্ষে সচেতনভাবেই রাখে এসিসি। ফলে সুপার ফোর পর্বে এই দুটি দলের মধ্যে আরেকটি ম্যাচ আয়োজন করা যায় এবং আবারও এই হাইভোল্টেজ দ্বৈরথ থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ উপার্জনের সুযোগ মেলে।

এশিয়া কাপের গত তিনটি আসর ছিল ছয় দলের টুর্নামেন্ট। সেখানে দুই গ্রুপে তিনটি করে দল প্রথম রাউন্ডে অংশ নিত।

আর গত তিনটি আসরেই বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কা ও আফগানিস্তান— এই তিনটি টেস্ট খেলুড়ে দেশকে একই গ্রুপে রাখা হয়েছিল। পরবর্তী পর্বে উঠতে দুটি স্থানের জন্য তাদেরকে তীব্র লড়াই করতে হয়েছে। অন্যদিকে, ভারত ও পাকিস্তান তুলনামূলক সহজ পথে সুপার ফোরে পৌঁছানোর সুযোগ পেয়েছে। কারণ, ২০১৮ ও ২০২২ সালে তাদের প্রতিপক্ষ ছিল হংকং ও ২০২৩ সালে নেপাল।

এই বছরের এশিয়া কাপে অংশ নিচ্ছে মোট আটটি দল। পাঁচটি টেস্ট খেলুড়ে দেশের সঙ্গে খেলবে স্বাগতিক সংযুক্ত আরব আমিরাত, ওমান ও হংকং।

এবারও আগের মতোই বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কা ও আফগানিস্তানকে একসঙ্গে 'বি' গ্রুপে রাখা হয়েছে, সঙ্গে নতুন সংযোজন হংকং। অন্যদিকে, ভারত ও পাকিস্তানের সঙ্গে 'এ' গ্রুপে রয়েছে ওমান ও আরব আমিরাত।

এই ছকের মাধ্যমে ভারত ও পাকিস্তানের পরবর্তী রাউন্ডে পৌঁছানোর সম্ভাবনা অনেকটা বাড়িয়ে দিয়েছে এসিসি। অর্থাৎ তাদের মধ্যে আরও একটি ম্যাচ দেখার সুযোগ পেতে পারেন দর্শকরা।

সব মিলিয়ে ধারণা করা যায়, গত তিন আসর ধরে এসিসি ও সমস্ত আর্থিক অংশীদাররা নিঃসন্দেহে একটা জিনিসই চাইছেন ও প্রার্থনা করছেন— চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী দল দুটি যেন এশিয়া কাপের ফাইনালে পৌঁছায়। তবে এই টুর্নামেন্টের ইতিহাসে এখন পর্যন্ত এমন কিছু ঘটেনি।

গত তিনটি আসরকে বিবেচনায় নিলে, ২০১৮ ও ২০২৩ সালে ফাইনালে পৌঁছে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল ভারত। মাঝে ২০২২ সালে পাকিস্তান শিরোপা নির্ধারণী মঞ্চে গেলেও রানার্সআপ হয়েছিল শ্রীলঙ্কার কাছে হেরে।

আসন্ন আসরে যদি উভয় দল ফাইনালে পৌঁছায়, তাহলে সেটা হবে তাদের তৃতীয়বারের মতো মুখোমুখি হওয়া। অর্থাৎ তারা এশিয়া কাপে অংশ নেওয়ার মাঝেই কার্যত একটি তিন ম্যাচের দ্বিপাক্ষিক সিরিজ খেলে ফেলবে।

ভারত-পাকিস্তানের একাধিক ম্যাচ বিজ্ঞাপনদাতা ও আর্থিক অংশীদারদের জন্য নিশ্চয়ই খুব লাভজনক। তবে এই ধরনের গ্রুপিং পদ্ধতি টুর্নামেন্টটির জন্যই ক্ষতিকর।

কোনো বহুদলীয় টুর্নামেন্টের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো— কোনো কিছুই নিশ্চিত নয়। লটারির মাধ্যমে গ্রুপ পর্বেই ভীষণ শক্তিশালী দলের সঙ্গে খুবই দুর্বল দল থাকতে পারে কিংবা দুটি বড় দল মুখোমুখি হতে পারে।

এই অনিশ্চয়তার উপাদানই যে কোনো বৈশ্বিক ক্রীড়া ইভেন্টের আকর্ষণ বাড়ায়, যা দীর্ঘদিন ধরে এশিয়া কাপে অনুপস্থিত।

আসলে একটা সময় ছিল, যখন এশিয়া কাপে ভারত ও পাকিস্তানকে একই গ্রুপে রাখা হতো না। ২০০৪ সালের আসরে এমনটা হয়েছিল। তখন এক দেশ নিয়মিত আরেক দেশে সফর করত। তাই ভক্তরা ভারত-পাকিস্তানের মধ্যকার দ্বৈরথ উপভোগ করার স্বাদ পেতেন এবং কোনো টুর্নামেন্টে জোরপূর্বক ম্যাচ আয়োজনের দরকার পড়ত না।

এরপর থেকে রাজনৈতিক কারণে দুই দেশের সম্পর্কের অবনতি এশিয়া কাপকে এখনকার গ্রুপিং পদ্ধতি চালুর দিকে নিয়ে এসেছে। ফলে টুর্নামেন্টটি এক ধরনের 'ছদ্মবেশী' ভারত-পাকিস্তান সিরিজে পরিণত হয়েছে— যেখানে তাদের মধ্যে দুটি ম্যাচ প্রায় নিশ্চিত এবং তৃতীয় আরেকটি ম্যাচেরও সম্ভাবনা থাকে।

Comments

The Daily Star  | English
Kudos for consensus in some vital areas

Kudos for consensus in some vital areas

If our political culture is to change, the functioning of our political parties must change dramatically.

2h ago