কেমন হবে হবু মায়ের পোশাক, পাবেন কোথায়

ছবি ও পোশাক: আড়ং তাগা

মাতৃত্ব এমন এক অনুভূতি, যা জীবনে একটি নতুন অধ্যায় খুলে দেয় ও নতুন এক অভিজ্ঞতার সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেয়। গর্ভকালীন এই সময়টায় মানসিক ও দৈহিক উভয় পরিবর্তন আসে। এ সময় দরকার হয় বাড়তি যত্নের।

গর্ভাবস্থায় মায়ের শারীরিক পরিবর্তনগুলোর জন্য দৈনন্দিন জীবনটাও হয়ে উঠে একটু অন্য রকম। গর্ভধারণের ৩ মাস পর থেকেই শারীরিক পরিবর্তনের কারণে পোশাক নিয়ে হবু মায়েদের পড়তে হয় খানিকটা সমস্যায়। আগের পোশাকগুলো আর আরামদায়ক মনে হয় না এবং ফিটও হয় না। তাছাড়া অনেকের এ সময় ত্বক বেশ স্পর্শকাতর হয়ে উঠে। সবমিলিয়ে তখন আরামটাই মুখ্য হয়ে উঠে। সে অনুযায়ী পোশাক দরকার হয় তখন।

আবার কর্মজীবী হবু মায়েরা পোশাক নিয়ে আরও বেশি বিড়ম্বনায় পড়েন। যেহেতু বাইরে যেতে হয়, আরামের সঙ্গে ফ্যাশনের বিষয়টিও সমন্বয় করতে চান তারা।

কেমন হবে হবু মায়ের পোশাক

গর্ভকালে শারীরিক পরিবর্তন আসে বলে দৈনন্দিন জীবনের ছন্দে আসে পরিবর্তন। শাড়ি, সালোয়ার কামিজ, কুর্তি বা নিজের স্বাচ্ছন্দ্য অনুসারে অন্য যেকোনো পোশাকই পরা যাবে এ সময়। তবে তা যেন ঢিলেঢালা ও আরামদায়ক হয় খেয়াল রাখবেন। কাপড়ের ক্ষেত্রে সুতি, লিলেনের মতো আরামদায়ক কাপড়কে প্রাধান্য দিতে পারেন। তবে চাইলে অন্যান্য কাপড়ের তৈরি পোশাকও পরা যেতে পারে, যদি তা অস্বস্তি তৈরি না করে।

ঢোলা প্যান্ট, পালাজ্জো, ঢোলা পায়জামা পরতে পারেন। সালোয়ারে ইলাস্টিকের বদলে ফিতা ব্যবহার করা ভালো, তাহলে পেটে চাপ লাগবে না। জিন্স বা অন্যান্য প্যান্ট পরতে চাইলে খুব আঁটসাঁট নয়, ঢিলেঢালা পরার চেষ্টা করবেন। আজকাল হবু মায়েদের জন্য আলাদা বটমওয়্যার পাওয়া যায়। সেগুলো বেছে নিতে পারেন অথবা কাপড় কিনে সেভাবে বানিয়েও নিতে পারেন।

হবু মায়েদের পোশাকে আরামের বিষয়টি প্রাধান্য পেলেও, ফ্যাশনের বিষয়টি মাথায় রেখেও কিন্তু সেটি করা সম্ভব। হলিউড বা বলিউড তারকাদের মাতৃত্বকালীন বিভিন্ন পোশাক দেখলেই কিন্তু সেটি বোঝা যায়। শাড়ির ক্ষেত্রে হালকা কাপড়ের আরামদায়ক শাড়ির সঙ্গে বেছে নিতে পারেন ঢিলেঢালা ধরনের কোনো স্টাইলিশ ব্লাউজ। সালোয়ার-কামিজ বা কুর্তির ক্ষেত্রে পেটের অংশটায় যথেষ্ট জায়গা থাকে বা চেপে থাকে না এমন বেছে নিন। আরেকটি ভালো পছন্দ হতে পারে গাউন। নানা ডিজাইনের গাউন বেছে নিতে পারেন এ সময়টায় ফ্যাশনের সঙ্গে আরামে থাকার জন্য। এ সময় ফ্যাশনেবল আরেকটি পোশাক হতে পারে ঢিলেঢালা কাফতান। এ সময়টা বিয়ের দাওয়াত বা এমন কোনো অনুষ্ঠানে গেলে অস্বস্তি ও দুর্ঘটনা এড়াতে খুব ভারি কাপড়ের পোশাক ও শাড়ি এড়িয়ে চলার চেষ্টা করবেন।  

বারডেম এর গাইনি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. মাসুমা জলিল বলেন, 'গর্ভকালীন সময়ে মায়েদের স্বাভাবিকভাবেই শ্বাস-প্রশ্বাসে সমস্যা হয়। এই সময় ঢিলেঢালা, পরিষ্কার পরিচ্ছন ও সুতি পোশাক নির্বাচন করা উচিত। সুন্দর ডিজাইনের পোশাক পরলে মায়েদের মনও প্রফুল্ল থাকে।'

তিনি বলেন, এই সময় অন্তর্বাস নির্বাচনে সুতি অন্তর্বাসকে প্রাধান্য দেওয়া উচিত। দীর্ঘক্ষণ আঁটসাঁট অন্তর্বাস যেমন এই সময় অস্বস্তি লাগবে, তেমনি ল্যাকটেশনে বাধা সৃষ্টি করবে।

'তামস ম্যাটারনিটি'র কর্ণধার ও ডিজাইনার তামান্না ফাইরোজ বলেন, 'মাতৃত্বের যাত্রাটা সুন্দর। নিজের গর্ভকালীন যাত্রায় ফ্যাশনেবল কিন্তু স্বাচ্ছন্দ্যে চলাফেরা করার উপযোগী পোশাকের পোশাকের অভাববোধ থেকেই কাজ শুরু করা। ঘরে ম্যাক্সি বা সুতি টিশার্ট পরে থাকলেও বাইরে বের হতে হলে আলাদা পোশাকের প্রয়োজন। মাতৃত্বকালীন সময়ে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে যেতে হলেও পোশাকের ব্যাপারে বিপাকে পরতে হয়। তাই ফ্যাশনধারার সঙ্গে মানানসই পোশাক তৈরির প্রচেষ্টা থাকে আমাদের সবসময়।'

হবু মায়ের জুতা

এই সময়ে প্রিয় উঁচু হিল জুতাটা তোলা থাকুক কিছুদিনের জন্য। গর্ভাবস্থায় ৬ মাসের পর অনেক মায়ের পায়ে পানি জমতে পারে। সেক্ষেত্রে আঁটসাঁট জুতা না পরে স্লিপার বা নরম আরামদায়ক জুতা নির্বাচন করতে পারেন। তাছাড়া জুতার ওজনও হালকা হওয়া দরকার। মোট কথা শরীরের ভারসাম্য রক্ষা করে এ ধরনের জুতোকে প্রাধান্য দেওয়া দরকার।

কোথায় পাবেন ম্যাটারনিটি পোশাক

আগে হবু মায়েদের জন্য পোশাক মানেই বড় সাইজের পোশাক বুঝানো হতো। মায়েদের জন্য আলাদভাবে কোনো উদ্যোগ নেওয়া হতো না। তবে এখন দৃশ্যপট বদলেছে। বিভিন্ন বুটিক হাউজ নজর দিচ্ছে মায়েদের পোশাকে। আড়ং, আড়ং তাগাতে হবু মায়েদের পোশাকে বিশেষ নজর দেওয়া হয়েছে। অফিসগামী মায়েদের জন্য ফ্যাশনেবল আর আরামের পোশাকের সমাহার রয়েছে সেখানে, যা আঁটসাঁট হয়ে থাকে না বলে অস্বস্তির কারণ হবে না। ঘুমানো, বিশ্রাম বা ঘরে পরে থাকার মতো ম্যাটারনিটি পোশাকও মিলবে এখানে।

এ ছাড়া, ছাড়া সাদাকালো, রঙ, সারার মতো ফ্যাশন হাউজগুলোতেও মিলছে ম্যাটারনিটি পোশাক। অনলাইন ভিত্তিক যে বুটিক হাউজগুলো রয়েছে তারাও যত্ন করে মায়েদের আরামের কথা মাথায় রেখে পোশাক ডিজাইন করছেন।

তাছাড়া উত্তরা মার্কেট, গাউছিয়া,নিউ মার্কেটে পাওয়া যাবে বিভিন্ন কাফতান আর ম্যাক্সি, যেগুলো দামও নাগালের মধ্যে। এই সময় চাইলে গজ কাপড় কিনে, লেস  দিয়ে নিজে ডিজাইন করে বানিয়ে নিতে পারেন আরামদায়ক জামা।

দরদাম

আড়ং ম্যাটারনিটি তাগায় হবু মায়েদের পোশাক মিলবে ১ হাজার ৫০ থেকে ৪ হাজার ৫০০ টাকার মধ্যে। বাসায় পরার ম্যাক্সি ৮৫০ থেকে ১ হাজার ৮৫০ টাকার মধ্যে পেয়ে যাবেন। তাছাড়া অন্যান্য বুটিক হাউজগুলোতে পোশাক মিলবে ১ হাজার ২০০ থেকে ৩ হাজার ৫০০ এর মধ্যেই। অনলাইনে হবু মায়ের বিভিন্ন কুর্তি, টপ পাবেন ৮০০ থেকে ৪ হাজার টাকার মধ্যে।

বাজেট একটু কম থাকলে শপিং মল থেকে ঘুরে দরদাম করে ম্যাটারনিটি পোশাক কেনা যাবে ৫০০ থেকে ২ হাজার টাকার মধ্যেই।

 

Comments

The Daily Star  | English

Finance adviser sees no impact on tax collection from NBR dissolution

His remarks came a day after the interim government issued an ordinance abolishing the NBR and creating two separate divisions under the finance ministry

3h ago