গর্ভাবস্থার দ্বিতীয় ৩ মাসের ডায়েট ও কিছু জরুরি টিপস

গর্ভাবস্থার দ্বিতীয় ৩ মাসের ডায়েট ও কিছু জরুরি টিপস
ছবি: সংগৃহীত

গর্ভাবস্থার ১৩ সপ্তাহ থেকে ২৭ সপ্তাহ পর্যন্ত সময়কালকে বলা হয় সেকেন্ড ট্রাইমেস্টার বা দ্বিতীয় ত্রৈমাসিক কাল৷ এই সময় শরীরে আরও কিছু শারীরিক ও মানসিক পরিবর্তন আসতে থাকে৷ শরীরের ওজন কিছুটা বাড়তে শুরু করে, মানসিক আবেগ কিছুটা হলেও কম হয়।

মর্নিং সিকনেস বা বমি বমি ভাব এই সময় অনেকটাই কমে আসে৷ তবে অনেক মায়ের ক্ষেত্রে এই বমি ভাব আরও কিছুদিন থাকে৷ প্রথম ৩ মাসের পর গর্ভপাত হওয়ার আশঙ্কা অনেকটা কমে আসে এবং এই সময় ভ্রুণ প্রতিস্থাপিত হয়৷ প্রথম ৩ মাসের মতো এই সময়ও আপনাকে সঠিক খাদ্যাভ্যাস মেনে চলতে হবে৷ প্রোটিন, কার্বোহাইড্রেট, ক্যালশিয়াম, ভিটামিন ডি, ফোলেট সমৃদ্ধ খাবার খেতে হবে৷

ঢাকা মেডিকেল কলেজ অ্যান্ড হাসপাতালের স্ত্রীরোগ ও প্রসূতি বিশেষজ্ঞ ডাক্তার ইশরাত জেরিনের কাছ থেকে চলুন জেনে নেওয়া যাক এই সময় কী ধরনের খাদ্যাভ্যাস মেনে চলতে হবে।

তবে মনে রাখবেন, প্রতিটি মানুষের শরীর আলাদা ধরনের। তাই গর্ভধারণের পর খাদ্যাভ্যাসের বিষয়ে একবার আপনার নিয়মিত চিকিৎসকের সঙ্গে কথা বলে নেবেন।

কী কী খাবেন

● এই সময় ভ্রুণের শরীর ও মস্তিষ্কের কলা গঠন করতে সাহায্য করে প্রোটিন। এ ছাড়া ভ্রুণের শরীরে এন্টিবডি, হরমোন ও এনজাইম তৈরিতেও প্রোটিন সাহায্য করে। মায়ের ইউটেরাস ও স্তনের কলা গঠনেও সহায়তা করে এটি৷ তাই একজন গর্ভবতী মায়ের এই সময় প্রতিদিন কমপক্ষে ১০০ গ্রামের মতো প্রোটিন গ্রহন করা উচিত। ডাল, মাছ, মাংস, ডিম, দুধ, দই, পনির ইত্যাদি প্রোটিনের খুব ভালো উৎস।

● কার্বোহাইড্রেট গর্ভাবস্থায় মা ও শিশুকে প্রয়োজনীয় শক্তি প্রদান করে৷ কার্বোহাইড্রেট হলো শ্বেতসার বা জটিল শর্করা যা শরীরে ভেঙে গিয়ে সরল শর্করা বা গ্লুকোজে পরিণত হয়। এই গ্লুকোজ ভ্রুণের বৃদ্ধির জন্য শক্তির যোগান দেয়। একজন গর্ভবতী মায়ের প্রতিদিন ১৭৫ গ্রাম থেকে ২১০ গ্রাম কার্বোহাইড্রেট প্রয়োজন, যা আপনি ভাত, রুটি, আলু, ভুট্টা ইত্যাদি থেকে সহজেই পেয়ে যাবেন।

● গর্ভাবস্থায় ক্যালসিয়াম ও আয়রন এই ২টি খনিজ উপাদানের প্রয়োজনীয়তা সবচেয়ে বেশি৷ ক্যালসিয়াম ভ্রুণের দাঁত ও হাড় গঠন করে, মায়ের অস্টিওপরোসিস রোগ প্রতিরোধ করে, দাঁতের ক্ষয়রোধ করে। এই সময় মায়ের শরীর থেকে শিশু প্রচুর ক্যালসিয়াম নেয়, তাই দাঁতের ডাক্তার দেখান যে দাঁতে কোনো ক্ষয় হচ্ছে কি না৷ শুধু খাদ্য উৎস থেকে এই সময় ক্যালসিয়ামের চাহিদা পূরণ সম্ভব না। তাই ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী সাপ্লিমেন্ট গ্রহণ করতে হবে। দুধ বা যে কোনো দুধজাতীয় খাবার, কাটাযুক্ত মাছ, মাংস, কাজুবাদাম, তিল ইত্যাদি ক্যালসিয়ামের খুব ভালো উৎস।

● ভিটামিন ডি শরীরে ক্যালশিয়ামের শোষণ ক্ষমতা বাড়িয়ে শিশুর দাঁত ও হাড়ের গঠনে সাহায্য করে। এই ভিটামিন এর খাদ্য উৎস খুবই কম। চর্বিযুক্ত মাছ, বাঁধাকপি, ডিম, চীজ ইত্যাদি ভিটামিন ডি এর খাদ্য উৎস। তবে এই সময় ক্যালসিয়াম সাপ্লিমেন্টের পাশাপাশি ভিটামিন ডি সাপ্লিমেন্টও গ্রহণ করতে হবে। এরসঙ্গে অবশ্যই প্রতিদিন অন্তত ১০-১৫ মিনিট গায়ে রোদ লাগাতে হবে।

● আয়রন মায়ের শরীরে অক্সিজেন ধারণ ক্ষমতা বাড়ায়। ভ্রুণের বৃদ্ধিতে সহায়তা করে, অ্যানিমিয়া প্রতিরোধ করে। এ ছাড়া সময়ের আগে শিশুর জন্মানোর আশঙ্কা কমায়। বীট, কলা, খেজুর, পালং শাক, ছোলা, কাজু বাদাম, ডিম, মাংস ইত্যাদি আয়রনের খাদ্য উৎস। তবে গর্ভাবস্থায় শুধু খাদ্য উৎস থেকে আয়রনের চাহিদা পূরণ সম্ভব নয়। তাই এই সময় চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে আয়রন সাপ্লিমেন্টও গ্রহণ করতে হবে।

● ওমেগা ৩ ফ্যাটি এসিড মা ও শিশু উভয়ের জন্যই উপকারী। এই প্রয়োজনীয় ফ্যাটি এসিড ভ্রুণের মস্তিষ্ক, চোখ, হৃৎপিণ্ড,স্নায়ুতন্ত্র গঠনে মুখ্য ভূমিকা পালন করে। এ ছাড়া প্রসব পরবর্তী সময় হওয়া ডিপ্রেশন কমাতেও সাহায্য করে। একজন গর্ভবতী মায়ের প্রতিদিন ৬৫৯ মিলিগ্রাম ওমেগা ৩ ফ্যাটি এসিড প্রয়োজন। এর খাদ্য উৎস হলো মাছ, চিয়া সীড, আখরোট, এভোকাডো ইত্যাদি।

● ফলিক এসিড গর্ভাবস্থায় কতটা জরুরি আমরা জানি। ফলিক এসিড শিশুর জন্মগত ত্রুটি রোধ করে, সময়ের আগে শিশু জন্মানোর আশঙ্কা কমায়, গর্ভের শিশুর ওজন বাড়াতে সাহায্য করে। শিশুর কাটা ঠোঁট ও কাটা তালুর মতো জন্মগত ত্রুটি প্রতিরোধ করতে পারে, ভ্রুণের বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। ফলিক এসিড মায়ের হার্টের অসুখ, স্ট্রোক, এমনকি কিছু ক্যান্সার ও প্রতিরোধ করে৷ গর্ভাবস্থায় প্রতিদিন ৬০০ এমসিজি ফলিক এসিড প্রয়োজন। কমলালেবু, ডিম, ব্রোকলি, বিট, লেবু, দুধ, পেস্তা বাদাম ইত্যাদি ফলিক এসিডের খাদ্য উৎস।

কী কী খাবেন না

● সামুদ্রিক মাছে পারদের পরিমাণ বেশি থাকে। তাই এই সময় সামুদ্রিক মাছ এড়িয়ে চলাই ভালো। পারদ ভ্রুণের মস্তিষ্কের ক্ষতি করে ও বৃদ্ধি ব্যাহত করে।

● কফি, ডার্ক চকলেট, এনার্জি ড্রিংকস ইত্যাদিতে ক্যাফেইন প্রচুর থাকে। তাই এইসব খাবার এড়িয়ে চলুন। অতিরিক্ত ক্যাফেইন ভ্রুণের ক্ষতি করতে পারে, এমনকি গর্ভপাতও ঘটাতে পারে৷

● এই সময় ডিম হোক বা মাংস বা মাছ, ভালো করে সেদ্ধ করে খেতে হবে। আধাসেদ্ধ প্রোটিন খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। এই সব প্রোটিনে বিভিন্ন ব্যাকটেরিয়া থাকে যা ভ্রুণের ক্ষতি করতে পারে, এমনকি গর্ভপাতও ঘটাতে পারে।

● দুধ ভালো করে না ফুটিয়ে খাবেন না।

● আনারসে ব্রোমেলিন থাকে যা জরায়ুর সংকোচন ঘটাতে পারে, জরায়ু নরম করতে পারে। এর ফলে মিসকারেজ বা সময়ের আগে শিশুর জন্ম হতে পারে। এ ছাড়াও আনারসে থাকা টক বদহজম ও এসিড তৈরি করতে পারে৷ তাই আনারস খাওয়ার ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে।

Comments

The Daily Star  | English

Are battery-run rickshaws Dhaka’s newest traffic menace? Hear what city dwellers think!

Dhaka's battery-run rickshaws spark debate over efficiency versus safety. Critics cite accidents, recklessness, and safety concerns, while supporters highlight cost-effectiveness. A High Court ban fuels tensions, affecting livelihoods and intensifying calls for regulation over elimination.

2h ago