গর্ভধারণের আগে স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস

ছবি: সংগৃহীত

প্রত্যেক নারীর জীবনেই গর্ভাবস্থা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি সময়। অনেকেই গর্ভধারণ করার পর ডাক্তার বা পুষ্টিবিদের পরামর্শ মেনে খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন করেন বা খাবারের প্রতি বেশ সচেতন হয়ে থাকেন। কিন্তু গর্ভধারণ করার আগেও কি খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তনের প্রয়োজন আছে? অবশ্যই আছে৷ যখন আপনি গর্ভধারণের সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন তখন থেকেই যদি খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন করেন এবং সঠিক খাদ্যাভাস শুরু করেন তাহলে সেটি আপনাকে নানাভাবে সাহায্য করতে পারে। সঠিক ও সুষম খাদ্যাভ্যাস আপনার গর্ভস্থ শিশুর জন্মকালীন বিভিন্ন জটিলতা প্রতিরোধ করতে পারে।

ঢাকা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের স্ত্রীরোগ ও প্রসূতি বিশেষজ্ঞ ডাক্তার ইশরাত জেরিনের কাছ থেকে চলুন জেনে নেওয়া যাক গর্ভধারণের আগে কী ধরনের খাবার আপনার খাদ্যতালিকায় যোগ করতে পারেন।

তবে প্রতিটি মানুষের শরীর আলাদা ধরনের। তাই গর্ভধারণের আগে খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন আনার সময় একবার আপনার নিয়মিত চিকিৎসকের সঙ্গে কথা বলে নেবেন। 

ফলিক এসিড

গর্ভাবস্থায় নারীদের জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ একটি পুষ্টি উপাদান হলো ফলিক এসিড। ফলিক এসিড হলো এক ধরনের ভিটামিন বি (ভিটামিন বি ৯)। হবু মায়েদের গর্ভধারণের ১-২ মাস থেকে গর্ভধারণের প্রথম ৩ মাস অবশ্যই ফলিক এসিডযুক্ত খাবার বা ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে সাপ্লিমেন্ট হিসেবে খেতে হবে। গর্ভবতী হওয়ার পর তা মায়ের জানতে প্রায় ৪-৫ সপ্তাহ লেগে যায়। আর প্রথম ৪ থেকে ৮ সপ্তাহেই ভ্রূণের প্রাথমিক গঠনের সময় ফলিক এসিড সবচেয়ে বেশি জরুরি হয়।

কারণ বেশিরভাগ জন্মগত ত্রুটি এই প্রথম কয়েক সপ্তাহেই তৈরি হয়ে থাকে। তাই মায়ের শরীরে যদি আগে থেকে ফলিক অ্যাসিড যথেষ্ট পরিমাণ মজুদ না থাকে তাহলে ভ্রূণের গঠনে সমস্যা দেখা দিতে পারে। বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, পর্যাপ্ত পরিমাণে ফলিক অ্যাসিড গ্রহণ মেয়েদের সন্তান ধারণক্ষমতা বৃদ্ধি করতে পারে ও বন্ধ্যাত্বের হার হ্রাস করতে পারে। যখন আপনি সন্তান ধারণের চেষ্টা করছেন তার অন্তত ২ মাস আগে থেকে ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে আপনাকে ফলিক অ্যাসিড খেতে হবে।

ফলিক এসিডের উৎস

ডাল- ছোলা,মুগ,মটর, রাজমা ডাল, চানা ডাল ইত্যাদি

শস্য- গম,গমের আটা বা ময়দা

সবুজ শাক সবজি- পালং শাক, ব্রকলি, বীট, শিম, লেটুস পাতা, শতমূলী, অ্যাভোকাডো 

বাদাম- চিনা বাদাম, আখরোট, ফ্লাক্স সিড, পেস্তা বাদাম,আমন্ড বাদাম , সূর্যমুখী বীজ 

প্রাণিজ উৎস - ডিম, গরুর কলিজা, দুধ, গরু,খাসি বা মুরগির মাংস, দই, ইস্ট

ফল- কমলালেবু, মৌসুমি লেবু, আঙুর, পেপে, কোলা, জাম্বুরা, পেয়ারা 

আয়রন

শরীরে অক্সিজেন ধারণ ক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য আয়রন প্রয়োজন। আয়রনের ঘাটতি হলে শরীরে রক্তশূন্যতা দেখা দিতে পারে। যে মেয়েদের শরীরে আয়রনের পরিমাণ সঠিক মাত্রায় থাকে, তাদের গর্ভবতী হওয়ার সম্ভাবনা যাদের আয়রন ঘাটতি আছে তাদের তুলনায় বেশি থাকে। গর্ভাবস্থায় মায়ের শরীরে অক্সিজেন কমে গেলে শিশুর শরীরেও অক্সিজেন কম পৌঁছাবে। ফলে শিশুর বৃদ্ধি বিঘ্নিত হওয়া ও সময়ের আগেই বাচ্চা জন্ম নেওয়ার মতো সমস্যা তৈরি হতে পারে। তাই আয়রন জাতীয় খাবার অবশ্যই আপনার খাদ্যতালিকায় রাখতে হবে।

আয়রনের উৎস

প্রাণিজ উৎস- গরু/খাসি/মুরগির মাংস, ডিম,কলিজা ইত্যাদি 

উদ্ভিজ উৎস- পালংশাক, ডাল, ছোলা, আমন্ড, সবুজ মটর,বীট, ডুমুর, টমেটো, লাল শাক ,মিষ্টি আলু, মাটির নিচের আলু, বাঁধাকপি, ব্রোকলি, কচু, কচু শাক,ডালিম,আম, খেজুর, কলা 

ফাইবার

যেহেতু গর্ভধারণের পর স্বাভাবিকভাবেই কিছু ওজন বৃদ্ধি পায় তাই গর্ভধারণের আগেই ওজন রাখা উচিত। কারণ অতিরিক্ত ওজন বেড়ে গেলে তা গর্ভকালীন বিভিন্ন জটিলতা তৈরি করতে পারে। ফাইবার আপনার ওজন নিয়ন্ত্রণে রেখে গর্ভধারণের সম্ভাবনা বাড়ায়। ফাইবার রক্তে শর্করা ও ইনসুলিনের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করেও সন্তান ধারণক্ষমতা বাড়ায়।

ফাইবারের উৎস

দানা শস্য-লাল চালের ভাত, লাল আটার রুটি বা পাউরুটি

সবুজ শাক সবজি- পালং, মটর, ভুট্টা, ব্রকোলি, সব ধরনের শাক

ফল- কলা, আপেল, বেরি, কমলালেবু,জাম্বুরা্‌ ,পেয়ারা, আম ,কাঁঠাল

ডাল- ছোলা, গোটা মুগ, মুসুর ডাল, রাজমা ডাল

ফ্যাটি এসিড

ওমেগা-৩ ও ওমেগা-৬ ফ্যাটি এসিড গর্ভধারণের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। শিশুর মস্তিষ্ক ও বুদ্ধি বিকাশে এই ২টি ফ্যাটি এসিড সহায়তা করে। তাই গর্ভধারণের এর আগে থেকেই শরীরে ফ্যাটি এসিড মজুত রাখা জরুরি। ওমেগা ৩ ফ্যাটি অ্যাসিড ডিম্বাণু নিঃসরণকারী হরমোনের ভারসাম্য বজায় রেখে সন্তান ধারণক্ষমতা বৃদ্ধি করে।

ফ্যাটি এসিডের উৎস

আমিষ উৎস- ডিম, সামুদ্রিক মাছ ও মিষ্টি পানির চর্বিযুক্ত মাছ

নিরামিষ উৎস- আখরোট, চিয়া সীড, ফ্ল্যাক্স সিড,অ্যাভোকাডো, সয়াবিন (খুবই অল্প পরিমাণে খাবেন ,অতিরিক্ত সয়া খারাপ প্রভাব ফেলতে পারে)।

আয়োডিন

গর্ভধারণের পরিকল্পনা করার আগে থাইরয়েড হরমোনের ভারসাম্য বজায় রাখা জরুরি। আয়োডিন থাইরয়েড হরমোনের ভারসাম্য নিয়ন্ত্রণ করে। আয়োডিনের ঘাটতির ফলে হাইপোথাইরয়েডিজম রোগ হয়। থাইরয়েডের সমস্যা আপনার ঋতুচক্রকে ব্যাহত করতে পারে। মাসিকের সময় বেশি রক্তক্ষরণ হতে পারে, যার ফলে ডিম্বাণু নিঃসরণ, ভ্রূণের ধারণ ও রোপণে কিছু সমস্যা দেখা দেবে। আর এসব অসুবিধা আপনার গর্ভধারণে বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে।    

ফ্যাটি এসিডের উৎস

আয়োডিনযুক্ত লবণ, দুধ, দই, চিজ, ডিম, সিম বীজ, খোসাসহ আলু সেঁকা বা পোড়া, চিংড়ি ইতাদি আয়োডিনের গুরুত্বপূর্ণ উৎস। এ ছাড়া গর্ভধারণের আগে আপনার খাদ্যতালিকায় প্রোটিন ও ক্যালশিয়াম সমৃদ্ধ খাদ্য রাখতে হবে।

Comments

The Daily Star  | English

Beyond development paradox & unnayan without democracy

As Bangladesh seeks to recalibrate its path in the aftermath of recent upheavals, the time is ripe to revisit an oft-invoked but under-examined agenda: institutional reform. Institutions are crucial to understand, as they are foundational for governance, transformation, and economic development.

17h ago