দেশের প্রথম শুল্ক নীতি প্রণয়ন

সিআইপি, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, টিপু মুনশি, এফবিসিসিআই,

২০২৬ সালে উন্নয়নশীল দেশে পরিণত হওয়ার পর আন্তর্জাতিক বাজারে স্থানীয় কোম্পানিগুলোর প্রতিযোগিতা বৃদ্ধিতে প্রথমবারের মতো শুল্ক নীতি প্রণয়ন করেছে বাংলাদেশ। গত ১০ আগস্ট বাণিজ্য মন্ত্রণালয় জাতীয় শুল্ক নীতিমালার গেজেট প্রকাশ করেছে।

জাতীয় শুল্ক নীতিমালার লক্ষ্য আমদানি শুল্ক কাঠামোকে যৌক্তিক করা, কারণ বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশের (এলডিসি) গ্রুপ থেকে বেরিয়ে যাওয়ার পর অগ্রাধিকারমূলক বাণিজ্য সুবিধা পাবে না।

এই শুল্ক নীতি দেশীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর অর্থনৈতিক কার্যক্রমের গতি বাড়াবে। এতে আরও কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে। ফলে, সরকার ধীরে ধীরে আমদানি শুল্কের ওপর নির্ভরতা কমাতে পারবে।

উদাহরণ হিসেবে বলা যেতে পারে, বাংলাদেশ স্থানীয় ও রপ্তানিমুখী শিল্পের জন্য গত অর্থবছরে চীন থেকে ২০ বিলিয়ন ডলারের কাঁচামাল ও মধ্যবর্তী পণ্য আমদানি করেছে। ফলে, সরকার এখান থেকে কয়েক হাজার কোটি টাকার শুল্ক পেয়েছে।

তবে, শুল্ক যৌক্তিক করার পর সরকার হয়তো চীনের কাঁচামাল ও মধ্যবর্তী পণ্যের আমদানি থেকে শুল্ক হিসেবে এতো রাজস্ব আদায় করতে পারবে না।

তবে আশা করা যায়, কম দামে আরও বেশি পণ্য আমদানি হবে। ফলে, স্থানীয় উদ্যোক্তারা রপ্তানি পণ্যে আরও লাভবান হবেন এবং আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিযোগিতা বাড়াতে পারবেন। এছাড়া, অর্থনৈতিক কার্যক্রম ও আয়ের পথ প্রশস্ত হবে।

বৈশ্বিক হারের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে শুল্ক নির্ধারণ করা হলে, বাংলাদেশে প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগের পরিমাণ বাড়তে পারে। কারণ, দেশে তখন উৎপাদন ব্যয় কমবে।

প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, গত কয়েক দশক ধরে সরকার রাজস্ব ক্ষতি পুষিয়ে নিতে এবং আন্তর্জাতিক প্রতিযোগীদের থেকে দেশীয় শিল্পকে রক্ষা করতে সম্পূরক ও সুরক্ষামূলক শুল্ক বাড়িয়েছে। এতে, স্থানীয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে প্রতিযোগিতামূলক করার প্রচেষ্টা ব্যাহত হয়েছে।

বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনের (বিটিটিসি) সাবেক সদস্য মোস্তফা আবিদ খান বলেন, শুল্ক নীতিমালার অন্যতম প্রধান উদ্দেশ্য আমদানি শুল্কের অনেক জটিলতার সমাধান করা। কারণ, কেউ কেউ বেশি সুবিধা ভোগ করে, আবার কেউ কেউ সুবিধা পান না।

'এছাড়াও বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে ও দেশীয় শিল্পের আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিযোগিতা বাড়াতে উচ্চ শুল্ক এখন আর কার্যকর নয়,' বলেন তিনি।

তিনি সতর্ক করে বলেন, এখনই প্রস্তুতি না নেওয়া হলে, এলডিসি পরবর্তী যুগে প্রস্তুত হওয়া কঠিন হয়ে পড়বে।

সরকারের মোট কর আয়ের ১০ শতাংশ আসে নিয়ন্ত্রক শুল্কসহ আমদানি শুল্ক থেকে।

তিনি বলেন, অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড বাড়লে ও আরও কর্মসংস্থান সৃষ্টি হলে অভ্যন্তরীণ বাজার থেকে একই পরিমাণ রাজস্ব আয় করা সম্ভব হবে।

একটি জাতীয় কমিটি পর্যায়ক্রমে এসব শিল্প নিয়ে পর্যালোচনা করবে এবং প্রয়োজনে সেগুলো রক্ষায় সরকারকে পরামর্শ দেবে।

তিনি আরও বলেন, কমিটি ইনফ্যান্ট শিল্পের অনুকূলে ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করবে, যেন সেগুলো উন্নতি করতে পারে এবং অর্থনীতিতে আরও অবদান রাখতে পারে।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব তপন কান্তি ঘোষ বলেন, বাংলাদেশ সবসময়ই একতরফাভাবে শুল্ক আরোপ করেছে, কিন্তু এলডিসি গ্রাজুয়েশনের পর একই প্রথা ধরে রাখা কঠিন হবে।

বাংলাদেশ এলডিসি গ্রাজুয়েশনের পর অগ্রাধিকারমূলক বাণিজ্য সুবিধা ধরে রাখতে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য চুক্তি স্বাক্ষরে প্রধান বাণিজ্যিক অংশীদারদের সঙ্গে আলোচনা করছে। কিন্তু, উচ্চ শুল্ক ব্যবস্থায় দেশগুলো এই ধরনের চুক্তি করতে রাজি নাও হতে পারে।

তপন কান্তি ঘোষ বলেন, শুল্ক যৌক্তিক করা ইঙ্গিত দেবে, বাংলাদেশ বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার নির্ধারিত মান বজায় রাখছে। কিন্তু শুল্ক যৌক্তিকের অর্থ এই নয় যে, সব শুল্ক শূন্য করা হবে। কিছু ক্ষেত্রে শুল্কহার কমানো হবে, অন্য ক্ষেত্রে সরকার সংবেদনশীল তালিকা বজায় রেখে স্থানীয় শিল্পকে রক্ষা করবে।

এর মানে হলো সংবেদনশীল তালিকা বা নেতিবাচক তালিকায় থাকা অনেক দেশীয় শিল্প সুরক্ষা সুবিধা ভোগ করবে উল্লেখ করে সিনিয়র সচিব বলেন, ইনফ্যান্ট শিল্প নির্দিষ্ট বছরের জন্য এই সুবিধা পাবে।

পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশের নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর বলেন, শুল্ক যৌক্তিক করা বিষয়টি দীর্ঘদিন ধরে অপেক্ষায় আছে।

বাংলাদেশের সুরক্ষার হার ৩০ শতাংশের ওপরে, ভারতে এটি ৯ শতাংশেরও কম এবং অ্যাসোসিয়েশন অব সাউথ ইস্ট এশিয়ান নেশনসের ৪ দশমিক ৭ শতাংশ।

আহসান এইচ মনসুর জানান, তাই অন্য দেশগুলো বাংলাদেশের সঙ্গে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তিতে উৎসাহী হবে না।

বাংলাদেশ যদি কমপ্রিহেনসিভ ইকোনমিক পার্টনারশিপ এগ্রিমেন্ট স্বাক্ষর করতে চায়, তাহলে শুল্কহার কমাতে হবে।

তিনি বলেন, 'বাংলাদেশ যদি অন্যান্য দেশের বাজারে প্রবেশাধিকার উপভোগ করতে চায়, তাহলে স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণের পর অন্যদেরও একই সুবিধা দিতে হবে।'

Comments

The Daily Star  | English
IMF loan conditions

IMF conditions: Govt pledges to track graft in tax admin

The government has pledged a series of sweeping reforms to meet International Monetary Fund conditions for the next instalment of its $5.5 billion loan, including a public survey to measure corruption in tax administration and a phased reduction of subsidies on electricity, fertiliser, remittances and exports.

7h ago