প্রতিকূলতা সত্ত্বেও বেশিরভাগ বহুজাতিক কোম্পানির মুনাফা বেড়েছে
অর্থনৈতিক সংকট, মূল্যস্ফীতি ও কাঁচামালের উচ্চমূল্য সত্ত্বেও চলতি বছরের এপ্রিল-জুন প্রান্তিকে বাংলাদেশের বেশিরভাগ বহুজাতিক কোম্পানি ভালো মুনাফা অর্জন করেছে এবং বিক্রিও বেড়েছে।
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) তালিকাভুক্ত ১৩টি বহুজাতিক কোম্পানি বছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকের আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। প্রতিবেদন অনুযায়ী, তাদের সম্মিলিত মুনাফা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ২৩ শতাংশ বেড়ে হয়েছে ২ হাজার ২৪৭ কোটি টাকা।
একইসঙ্গে এসব কোম্পানির বিক্রি প্রায় ১৪ শতাংশ বেড়ে হয়েছে ১২ হাজার ৯৩৩ কোটি টাকা।
বিক্রি বৃদ্ধির কারণে বেশিরভাগ কোম্পানি ভালো মুনাফা করলেও, কিছু কোম্পানিকে কাঁচামালের দাম বৃদ্ধি, জ্বালানি ব্যয় ও মূল্যস্ফীতির সঙ্গে লড়াই করতে হয়েছে।
একটি অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানির এক শীর্ষ কর্মকর্তা বলেন, 'বিক্রি বৃদ্ধির কারণে কোম্পানিগুলোর মুনাফা বেড়েছে। তবে, কাঁচামালের দাম বৃদ্ধি, জ্বালানি খরচ ও বেতন বৃদ্ধির কারণে কিছু কোম্পানিকে লড়াই করতে হয়েছে।'
বহুজাতিক কোম্পানিগুলোর মধ্যে লাফার্জহোলসিম বাংলাদেশ, সিঙ্গার বাংলাদেশ, গ্রামীণফোন, বাটা শু বাংলাদেশ, বার্জার পেইন্টস ও ম্যারিকো বাংলাদেশ গত ৩ মাসে সবচেয়ে বেশি মুনাফা করেছে।
লাফার্জহোলসিমের মুনাফা ৩৯ শতাংশ বেড়ে ১৭০ কোটি টাকা এবং বিক্রি ৩৩ শতাংশ বেড়ে ৬৭১ কোটি টাকা হয়েছে।
লাফার্জহোলসিম বাংলাদেশের সিইও ইকবাল চৌধুরী বলেন, বিভিন্ন পণ্যের পণ্যপোর্টফোলিও, বাজার দক্ষতা, ডিজিটাল ফুটপ্রিন্ট, দেশব্যাপী ডিস্ট্রিবিউশন নেটওয়ার্ক ও সামগ্রিক ব্যবসা ভালো মুনাফা করতে সহায়তা করেছে।
হোম অ্যাপ্লায়েন্স নির্মাতা প্রতিষ্ঠান সিঙ্গার বাংলাদেশের মুনাফা ২৬১ শতাংশ বেড়ে ৪৭ কোটি টাকা হয়েছে, বিক্রি ৩৪ শতাংশ বেড়ে ৭১৭ কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে।
সিঙ্গার তাদের আর্থিক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, উচ্চ মূল্যস্ফীতি, বৈদেশিক মুদ্রার বাজারে অস্থিরতার মতো কয়েকটি অভ্যন্তরীণ ও বৈশ্বিক ইস্যু থাকা সত্ত্বেও বছরের শুরু থেকে আন্তরিক প্রচেষ্টার কারণে বিক্রি বেড়েছে। যদিও পরিস্থিতি পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আসেনি, তবে পণ্যের দাম বেশি থাকায় মানুষ দাম বৃদ্ধি মেনে নিয়েছে।
সিঙ্গার বাংলাদেশ জানিয়েছে, ঈদকে সামনে রেখে বিক্রি বাড়াতে এপ্রিল-জুন প্রান্তিকে বেশ কিছু বিপণন কৌশল বাস্তবায়ন করেছে তারা
এপ্রিল-জুন সময়ে দেশের সর্ববৃহৎ মোবাইল ফোন অপারেটর গ্রামীণফোনের মুনাফা ২৯ শতাংশ বেড়ে ১ হাজার ১৯৩ কোটি টাকা হয়েছে। যা তালিকাভুক্ত বহুজাতিক কোম্পানিগুলোর মধ্যে সর্বোচ্চ মুনাফা
দ্বিতীয় বৃহত্তম মোবাইল ফোন অপারেটর রবি আজিয়াটা ২৪ কোটি ৪০ লাখ টাকা মুনাফা করেছে। ফলে, ২০২২ সালের একই প্রান্তিকে ১২ কোটি টাকা লোকসান থেকে ঘুরে দাঁড়িয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।
রবির সিইও রাজীব শেঠি ডেটা আয়কে মুনাফা অর্জনের অন্যতম চালিকাশক্তি হিসেবে বর্ণনা করেছেন। ডেটা ব্যবসা থেকে দ্বিতীয় প্রান্তিকে কোম্পানিটির প্রায় ৩৯ শতাংশ আয় এসেছে।
বার্জার পেইন্টস বাংলাদেশের মুনাফা বেড়েছে ৫ দশমিক ৪২ শতাংশ।
হাইডেলবার্গ সিমেন্ট এপ্রিল-জুন সময়ে মুনাফা করেছে ৯ কোটি ১১ লাখ টাকা, আগের বছরের একই সময়ে কোম্পানিটির লোকসান ছিল ৩ কোটি ৭৫ লাখ টাকা। এবার তাদের বিক্রি ১৬ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪৫২ কোটি টাকায়।
ম্যারিকো বাংলাদেশের মুনাফা ২৯ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে, কারণ কোম্পানিটির বিক্রি বেড়েছে, বিপরীতে বিপণন ও বিক্রয় ব্যয় কম হয়েছে।
বাটা শু'র মুনাফা ১৫ শতাংশ বেড়ে ৩০ কোটি টাকা ও বিক্রয় ২ দশমিক ৫ শতাংশ বেড়ে ৩২১ কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে।
তবে, ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো, ইউনিলিভার কনজ্যুমার কেয়ার, আরএকে সিরামিকস, রেকিট বেনকিজার বাংলাদেশ এবং লিন্ডে বাংলাদেশের মুনাফা কমেছে।
ইউনিলিভার কনজ্যুমার কেয়ারের মুনাফা ৮ শতাংশ কমে হয়েছে সাড়ে ১৬ কোটি টাকা। কোম্পানিটির বিক্রি ৮ শতাংশ কমে হয়েছে ৮২ কোটি টাকা।
জ্বালানি খরচ বেশি হওয়ায় আরএকে সিরামিকের মুনাফা ৩৩ শতাংশ কমে ১২ কোটি টাকা হয়েছে। তবে, বিক্রি গত বছরের একই সময়ের ১৭৯ কোটি টাকার চেয়ে সামান্য বেড়ে ১৮০ কোটি টাকা হয়েছে।
কাঁচামালের দাম বৃদ্ধি ও পরিচালন ব্যয় বেশি হওয়ায় এপ্রিল-জুন সময়ে লিন্ডের নিট মুনাফা ৪০ শতাংশ কমে ১৩ কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে।
বেশি উত্পাদন ব্যয়, ক্রমবর্ধমান পরিচালন ব্যয় এবং বর্ধিত কর বিএটিবিসির আয় বৃদ্ধিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে।
রেকিট বেনকিজারের মুনাফা ২০২২ সালের একই সময়ের ১৪ কোটি ৮০ লাখ টাকা থেকে কমে হয়েছে ১৪ কোটি ৬৯ লাখ টাকায়।
Comments