বিলিভ ইট অর নট

ইরানের আধুনিক গুহাবাসী

ইরানের আধুনিক গুহাবাসী
ছবি: সংগৃহীত

ইরানের উত্তর-পশ্চিমে অবস্থিত একটি গ্রাম কান্দোভান। সেই গ্রামের মানুষদের রয়েছে এক অদ্ভুত অভ্যাস। মাটি, কাঠ, টিন বা ইটের খোলামেলা, প্রশস্ত বাড়ি নয়, তারা বাস করেন গুহায়! 

শুনতে খুবই অদ্ভুত লাগলেও এটাই সত্য! পাহাড়ের পাথর কেটে তারা বানিয়ে নিয়েছেন আপন আবাস। জানালা, দরজা, সিঁড়ি- সবই রয়েছে তাদের এই বাসস্থানে। তারা পাহাড়ের গায়ে এভাবে বাড়ি বানিয়ে বাস করে চলেছেন ৭০০ বছরেরও বেশি সময় ধরে! 

পূর্ব আজারবাইজান প্রদেশে পড়েছে গ্রামটি। এর গড়ে ওঠার পেছনে আছে অগ্নুৎপাত। মাউন্ট সাহান্দ আগ্নেয়গিরি জেগে উঠেছিল আজ থেকে ১১ হাজার বছর আগে। তারপর থেকে স্থানে স্থানে ফাটল ও গর্ত তৈরি হয়। 

তবে এরপরের ১০,৩০০ বছরেও এখানে কেউ থাকতে আসেননি। আজ থেকে ৭০০ বছর আগে এখানে আক্রমণ চালায় মঙ্গোলিয় যোদ্ধাবাহিনী। এই যাযাবর যোদ্ধাদের সঙ্গে পেরে ওঠা ছিলো খুব কঠিন। তাই স্থানীয় অধিবাসীরা ঘর-বাড়ি ছেড়ে চলে যান গুহায়। সেখানকার ফাটলগুলোকে নিজস্ব পরিশ্রমে তারা প্রকোষ্ঠের রূপ দেন। মরু অঞ্চলের চরমভাবাপন্ন আবহাওয়ার সাথে সমন্বয়ের জন্য দেয়াল বানান পুরু করে। 

তাদের বাসাবাড়িগুলো দেখতে অনেকটা উইপোকার ঢিবির মতো। তবে অধিবাসীরা এগুলোকে বলেন 'কারান।' এর অর্থ 'মৌচাক।' প্রকোষ্ঠগুলোকে একসঙ্গে বৃহদাকৃতির মৌচাক বলে মনে হয়। এর ভেতর স্বাভাবিক জীবনযাপনের প্রায় সব উপকরণই আছে। 

কালক্রমে গুহাগুলোকে একাধিকবার সংস্কার করে নিয়েছেন অধিবাসীরা৷ জলবায়ুর প্রকৃতিও তারা রেখেছেন বিবেচনায়। গুহার দেয়ালগুলো ৬ ফুটের বেশি পুরু, এর ফলে গরমের সময় ঘরের অপেক্ষাকৃত ঠান্ডা বাতাসেই ঘর ভরে থাকে, আবার শীতের সময় বাইরের ঠান্ডা বাতাস ঘরে ঢোকে না। 

বেশ কয়েক বছর হলো এখানে পর্যটকদের আনাগোনাও বেড়েছে। তারা ভাড়া পরিশোধ করে ফাঁকা থাকা প্রকোষ্ঠগুলোয় থাকতেও পারেন। ফাঁকা না পেলেও কোনো ক্ষতি নেই। সেক্ষেত্রে আছে ৫ তারকা হোটেল। নাম 'কান্দোভান লালেহ ইন্টারন্যাশনাল রকি হোটেল।' এখানে আছে বিলাসবহুল কক্ষ ও অত্যাধুনিক সুবিধা।

'জাকুযি' নামে ২৪ ঘণ্টার বা সার্বক্ষণিক সুবিধা আছে কক্ষগুলোয়। সঙ্গে আছে চমৎকার খাবারের ব্যবস্থা। রাত প্রতি খরচ ১০০ ডলার।

গুহার নির্মাণ কৌশলের কারণে সব ঋতুতেই বিরাজ করে নাতিশীতোষ্ণ চমৎকার আবহাওয়া। তাই পর্যটকরা তাদের সুবিধামতো যে কোনো সময়েই যেতে পারেন এখানে। নিতে পারেন ভিন্ন জীবনের স্বাদ। 

তথ্যসূত্র: রিপলি'স বিলিভ ইট অর নট

গ্রন্থনা: মাহমুদ নেওয়াজ জয়

 

Comments

The Daily Star  | English

Dhaka airport receives 2nd bomb threat

Operations at HSIA continue amid heightened security

56m ago