বিলিভ ইট অর নট

বাইসাইকেলে বিশ্বভ্রমণ করা প্রথম নারী

স্পন্সর হিসেবে ছিল লন্ডনডেরি লিথিয়া স্প্রিং ওয়াটার কোম্পানি। তার সাইকেলে নিজেদের একটি লোগো দিয়ে দেয় ও তাকে ১০০ ডলার প্রদান করে
বাইসাইকেলে বিশ্বভ্রমণ করা প্রথম নারী
ছবি: সংগৃহীত

পৃথিবীর চমকপ্রদ ঘটনাগুলোর একটির সূচনা হয়েছিল ১৮৯৪ সালের ২৫ জুন। ম্যাসাচুসেটসের বোস্টন থেকে একটি বাইসাইকেলে করে পৃথিবী ঘুরতে বেরিয়ে পড়েছিলেন অ্যানি কোহেন কপকোভসি। অ্যানি তখন বিবাহিত ও ৩ সন্তানের মা। 

সাইকেলে করে বিশ্বভ্রমণে বেরিয়েছিলেন তিনি, ফিরেছিলেন প্রায় ১৫ মাস পর। এতে স্পন্সর হিসেবে ছিল লন্ডনডেরি লিথিয়া স্প্রিং ওয়াটার কোম্পানি। তার সাইকেলে নিজেদের একটি লোগো দিয়ে দেয় ও তাকে ১০০ ডলার প্রদান করে। তবে এত দীর্ঘ ভ্রমণে যাবার জন্য তার কোনো পূর্ব অভিজ্ঞতা ছিল না। মাত্র কয়েকদিনের প্রস্তুতি শেষে তিনি বেরিয়ে পড়েন ভ্রমণের জন্য। 

অভিনব পদক্ষেপ 

সময়টা ছিলো উনবিংশ শতাব্দীর শেষভাগ। নারীদের একা ভ্রমণ, বিশেষত বাইসাইকেলে চড়া তখনকার হিসেবে একেবারেই প্রথাবিরোধী একটি পদক্ষেপ। তবে মেয়েদের সাইকেল চালানোর পক্ষে যুক্তরাষ্ট্রের নারী অধিকারকর্মী সুসান বি অ্যান্থনি ১৮৯৬ বলেন, 'আমি বাইসাইকেল নিয়ে আমার ভাবনা হলো, বিশ্বের অন্য যে কোনো কিছুর চেয়ে নারীমুক্তিতে এটি বেশি ভূমিকা রেখেছে! এতে একজন নারী স্বাধীনতার অনুভূতি ও আত্মনির্ভরতার স্বাদ পান।' 

অ্যানির যাত্রা হলো শুরু 

১৮৯৪ সালের জুন। ২৪ বছরের অ্যানি একটি বাইসাইকেলে করে শুরু করলেন তার যাত্রা। সে সময় স্বামী ও ৩ সন্তানের মা অ্যানির এই ভ্রমণ সামাজিকভাবে খুব বেশি প্রত্যাশিত ছিলো তা নয়, তবে তিনি পারিবারিক সমর্থন পেয়েছিলেন। 

বোস্টন থেকে যাত্রা শুরু করার পর ৩মাস সময় লেগেছিলো অ্যানির শিকাগো পৌঁছতে। শহরে পৌঁছে তিনি দেখেন, বেশ বাতাস বইছে সেখানে। তাই এ যাত্রায় আরেকটু দ্রুত যাবার সুবিধার্থে আরেকটু হালকা সাইকেল বাছাই করেন তিনি। 

শিকাগো থেকে ফ্রান্স হয়ে পূর্ব এশিয়া 

শিকাগো থেকে জাহাজে করে আটলান্টিক সাগর হয়ে পূর্বে ফ্রান্সের দিকে যাত্রা করেন অ্যানি। তারপর আবার শুরু হয় অজানার পথে যাত্রা। এরকম একটি গল্প ছড়িয়েছিলো যে, বোস্টন থেকে আসা বণিকদের সঙ্গে তার ভ্রমণ নিয়ে বাজি ধরে তিনি ২০ হাজার ডলার জিতেছিলেন। তবে সামগ্রিক বিচারে এটির সত্যতা নিশ্চিত নয়। কারণ, অংশ নেওয়া আর কারও নামই জানা যায়নি।  

তবে শোনা যায়, এই বাজি জেতার ক্ষেত্রে বাজিকরের একটি ভুলের সুযোগ লুফে নিয়েছিলেন তিনি। বাজিকর জানতেন না, অ্যানির এই যাত্রা সম্পন্ন করতে সর্বমোট কত মাইল তাকে যেতে হবে। অ্যানি তার এই যাত্রায় নিজ সুবিধামত স্টিমার, ফেরি, ট্রেনও নিয়েছিলেন। তবে সেটি প্রয়োজনমতোই। বাকি সময়টি তিনি ভ্রমণ করেছিলেন সাইকেলেই। ইউরোপে সময় কাটানোর পর, তিনি মিশর, সিঙ্গাপুর ও শ্রীলঙ্কার কিছু কিছু জায়গাও সাইকেল চালিয়ে পাড়ি দেন। তিনি জেরুজালেমের আশেপাশেও গিয়েছিলেন বলে দাবি করেন, তবে এ নিয়ে যথেষ্ট সংশয় আছে। 

পথে যেতে যেতে 

এই দীর্ঘ ভ্রমণপথে তার ভ্রমণ নিয়ে প্রচুর উৎসাহী লোক দেখা যায়। এমনকি তিনি কয়েকবার বিয়ের প্রস্তাবও পান। তবে প্রখর আত্মসম্মানবোধ সম্পন্ন অ্যানি সেসব ভালোভাবেই সামলে নেন। 

তার যাত্রার একেবারে শেষ ধাপটি ছিলো বাইসাইকেলে সান ফ্রান্সিসকো থেকে শিকাগো ফিরে আসো। তৎকালীন সময়ের আমেরিকায় অবকাঠামো অতটা শক্তিশালী হয়নি। কাজেই এই পথটি সাইকেলে পাড়ি দেওয়া ছিলো প্রায় অসাধ্য সাধন করার মতোই বিষয়। 

প্রায় ১৫ মাসব্যাপী ভ্রমণের পর, ১৮৯৫ সালের সেপ্টেম্বর মাসে তিনি আবারও ফিরে আসেন বাড়িতে, জেতেন ভ্রমণ সম্পন্ন করায় ২০ হাজার ডলারের বাজি। 

প্রথাভাঙা  

অ্যানি যাত্রার সময় পুরুষদের রাইডিং স্যুট পরেছিলেন। নারী হওয়ায় অনেক জায়গাতেই তাকে ঘিরে মানুষের বাড়তি মনোযোগ ছিলো, তবে তার দৃঢ় ও ক্যারিশমাটিক ব্যক্তিত্ব তাদের শ্রদ্ধা আদায় করে নিতে পেরেছিলো। 

তবে কিছু ক্ষেত্রে তার ভ্রমণবিষয়ক তথ্যগুলো ছিলো অতিরঞ্জিত, হতে পারে সেটি স্পন্সরদের পরিকল্পনা মাফিক। যেমন- সানফ্রান্সিসকোতে অস্ত্রের মুখে ডাকাতির একটি কথা শোনা যায়, যার সত্যতা পাওয়া যায়নি। 

তবে এরকম দু-চারটা অতিরঞ্জন বাদ দিলে তার এই সাইকেল যাত্রা সে সময় তো বটেই, এ সময়ের হিসেবেও অভিনব ও চমকপ্রদ একটি ব্যাপার।

তথ্যসূত্র: রিপলি'স বিলিভ ইট অর নট

গ্রন্থনা: মাহমুদ নেওয়াজ জয়

Comments