সাগর নন্দিনী-২ জাহাজে ছিল না অগ্নি নির্বাপণ ব্যবস্থা

সাগর নন্দিনী-২ জাহাজে অগ্নি নির্বাপণ ব্যবস্থা ছিল না, স্টাফদেরও ছিল না প্রশিক্ষণ। বার বার দুর্ঘটনা ঘটলেও প্রতিরোধে নেওয়া হয়নি উপযুক্ত ব্যবস্থা। ছড়িয়ে পড়া প্রায় ২০ হাজার লিটার তেল মিশ্রিত পানি উদ্ধার করেছে কোস্টগার্ড | ছবি: টিটু দাস/স্টার

ঝালকাঠির সুগন্ধা নদীতে তেলবাহী ট্যাংকার সাগর নন্দিনী-২ জাহাজের বিস্ফোরণের ১১ ঘণ্টা পরে আগুন নেভাতে সক্ষম হয়েছে ফায়ার সার্ভিস।

বরিশাল, ঝালকাঠী ও খুলনার ১২টি ইউনিট আজ মঙ্গলবার সকালে জাহাজে লাগা আগুন নেভায়।

এদিন দুপুর দেড়টায় জ্বালানি সচিব ড. মো. খায়েরুজ্জামান মজুমদারের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।

এরপর তিনি সাংবাদিকদের জানান, অগ্নি দুর্ঘটনার কারণ অনুসন্ধানে জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিবকে প্রধান করে একটি আন্তঃমন্ত্রণালয় তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। এছাড়া বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন, জেলা প্রশাসন ও ফায়ার সার্ভিস আরও ৩টি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে।

সাগর নন্দিনী-২ জাহাজে অগ্নি নির্বাপণ ব্যবস্থা ছিল না, স্টাফদেরও ছিল না প্রশিক্ষণ। বার বার দুর্ঘটনা ঘটলেও প্রতিরোধে নেওয়া হয়নি উপযুক্ত ব্যবস্থা। ছড়িয়ে পড়া প্রায় ২০ হাজার লিটার তেল মিশ্রিত পানি উদ্ধার করেছে কোস্টগার্ড | ছবি: টিটু দাস/স্টার

তিনি বলেন, 'আমি যতদূর জানি ট্যাংকারটিতে ৪ লাখ লিটার তেল ছিল। ২০ হাজার লিটার তেল স্থানান্তরের সময় আগুনের সূত্রপাত হয়। আগুনে অধিকাংশ পেট্রোল পুড়ে যায়। তেল যাতে ছড়িয়ে না পড়ে সে জন্য ব্যবস্থা নেওয়ায় কোস্ট গার্ড ও স্থানীয় প্রশাসনকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি। এই মুহূর্তে তেল মিশ্রিত সামান্য  পানি জাহাজে রয়েছে।'

সরেজমিনে দেখা যায়, উপরের অংশ ছিন্ন-বিচ্ছিন্ন হলেও তলদেশ ফেটে না যাওয়ায় জাহাজটি ডুবে যায়নি।

স্থানীয় দোকানি রিপন বলেন, 'রাতে আমরা দেখেছি লম্বা লাইন ধরে নদীর মধ্যে আগুন জ্বলতে। প্রায় মাইল খানেক হবে।

খেয়াঘাটের ব্যবসায়ী মনির বলেন, 'আগুনের উত্তাপ যেন আধা মাইল দূরে এসেও লাগছিল। ভয়ে সন্ধ্যা থেকে কোনো খেয়া-ট্রলার চলেনি নদীতে।'

ট্যাংকারে সর্বশেষে ৪ লাখ ৫ হাজার ৫৬২ লিটার তেল ছিল। ফায়ার সার্ভিস, কোস্টগার্ড, পরিবেশ অধিদপ্তর নিশ্চিত করেছে, ২০ হাজার লিটার তেল উত্তোলন করা গেছে। বাকি তেলের অধিকাংশ পুড়ে গেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

কোস্টগার্ড দক্ষিণ জোনের মিডিয়া কর্মকর্তা লে. কর্নেল শাফিউল কিঞ্জল দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমরা লেমুর স্থাপন করে জাহাজটিকে ঘিরে রেখেছি। বিষখালী নদী পর্যন্ত ২০ কিলোমিটার এলাকায় আমাদের খুলনা, ভোলা, বরিশালের ৫টি ইউনিট তেল নিঃসরণ ঠেকাতে কাজ করছে। ইতোমধ্যে যেটুকু তেল মিশ্রিত পানি উদ্ধার করা গেছে তার পরিমাণ প্রায় ২০ হাজার লিটার।'

পরিবেশ অধিদপ্তরের উপপরিচালক এইচ এম রাশেদ জানান, তাদের ল্যাবরেটরি বিভাগ সুগন্ধা নদী থেকে পানি সংগ্রহ করে ঢাকায় পাঠাচ্ছে।

'দেখে মনে হয়েছে সামান্য পরিমাণ তেল ছড়িয়েছিল। কোস্টগার্ড বেশ কিছু তুলে ফেলেছে,' বলেন রাশেদ।

সাগর নন্দিনী-২ জাহাজে ছিল না অগ্নি নির্বাপণ ব্যবস্থা

ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিভেন্সের পরিচালক লে. কর্নেল মো. তাজুল ইসলাম চৌধুরী ডেইলি স্টারকে জানান, অয়েল ট্যাংকারে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা সরঞ্জাম ছিল না। স্টাফদেরও যথাযথ প্রশিক্ষণ ছিল না। এ ধরনের ট্যাংকারে ফোম ও কার্বন ডাই-অক্সাইড ইকুইপমেন্ট থাকার কথা ছিল কিন্তু সেগুলো জাহাজে ছিল না। 
একই জায়গায় ২০২১ সালের ২৪ ডিসেম্বর অভিযান লঞ্চে দুর্টনায় অর্ধ শতাধিক মানুষের মৃত্যু হয়। এছাড়া ২০২১ সালে ১২ নভেম্বর সাগর নন্দিনী-৩ জাহারে বিস্ফোরণ হলে ৬ জন নিহত হন। গত বছরের ২৫ ডিসেম্বর সাগর নন্দিনী-২ জাহাজ ১১ লাখ লিটার তেল নিয়ে ভোলার মেঘনা নদীতে ডুবে যায়। একই কোম্পানির জাহাজ বার বার দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছে।

Comments

The Daily Star  | English

Prisoners celebrate Eid in unity and harmony at Dhaka Central Jail

Eid prayers for inmates were held at 8:15am inside the prison premises

1h ago