ইউটিউবে কোন ধরনের ভিডিও দেখতে কী পরিমাণ ডেটা খরচ হয়
প্রায় সবার বাসাবাড়ি-অফিসে ব্রডব্যান্ড কানেকশন থাকলেও চলতে-ফিরতে, গাড়িতে-রাস্তায় ইন্টারনেট সংযোগ ব্যবহারের জন্য এখনো মোবাইলে নেট প্যাকেজ কিনে রাখতে হয়। সেক্ষেত্রে কারও যদি 'আনলিমিটেড ডাটা' না থাকে, তবে কতটা ডাটা খরচ হলো, সে নিয়ে একটু চিন্তাভাবনা করা স্বাভাবিক।
মোবাইলের একেবারে মৌলিক কাজ, অর্থাৎ 'কলিং' আর 'টেক্সটিং' ছাড়া আসলে প্রায় সব অ্যাপেই ডাটা খরচ হয়। যোগাযোগমাধ্যম আর স্ট্রিমিং প্ল্যাটফর্মগুলোতে তো আরও বেশি।
আর এরকম চলন্ত অবস্থায় সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত প্ল্যাটফর্মগুলোর একটি নিঃসন্দেহে ইউটিউব। গান শোনা, বিনোদনমূলক ভিডিও দেখার মাধ্যমে সময় কাটানো তো এ যুগের লোকের অন্যতম মাধ্যম হয়ে দাঁড়িয়েছে।
আমরা এমন এক কনটেন্টনির্ভর সমাজে বাস করছি, যেখানে প্রতি মুহূর্তেই কেউ না কেউ ভিডিও তৈরি করছে এবং অপর একজন দেখছে। আর এ ভিডিও দেখার পরিমাণ শুধু ইউটিউবেই প্রতিদিন ১ বিলিয়ন ঘণ্টার বেশি। তাই ইউটিউব ব্যবহারের ফলে কত ডাটা খরচ হয়, এ নিয়েও ভাবনার অবকাশ আছে। এ বিষয়েই আজকের লেখাটি।
খরচ হওয়া ডেটার পরিমাণ
ভিডিও প্লেব্যাকের মানের ওপর নির্ভর করে ডেটা খরচের পরিমাণ। স্ট্যান্ডার্ড, তথা ৪৮০ পিক্সেলের ভিডিও দেখলে ঘণ্টায় ২৬০ মেগাবাইট ডেটা খরচ হয়। অন্যদিকে ফুল এইচডি ভিডিও দেখতে গেলে ঘণ্টায় দেড় গিগাবাইটের বেশি ডেটা খরচ হয়ে যাওয়াও অসম্ভব কিছু নয়। আর যদিও 'ফোর-কে ভিডিও' অতটা ছড়িয়ে পড়েনি এখনো, তবে নির্দিষ্ট পরিসরে এতে খরচ হওয়া ডেটার পরিমাণ ঘণ্টায় প্রায় ৩ গিগাবাইট।
ইউটিউবে মোট ৬ ধরনের পিক্সেল বা ভিডিও কোয়ালিটি পাওয়া যায়– ১৪৪, ২৪০, ৩৬০, ৪৮০, ৭২০, ১০৮০। ডেটা খরচের চিন্তা বেশি হলে বা পর্যাপ্ত ডেটা না থাকলেও জরুরি ভিডিও দেখতে হবে এমন পরিস্থিতিতে কোয়ালিটি ১৪৪ থেকে ২৪০ পিক্সেলের মধ্যে রাখা ভালো।
ভিডিওর মানের ওপর ভিত্তি করেই বলা যাবে, ১ গিগাবাইট ডেটা প্যাকেজ কতক্ষণ চালু থাকবে। নিছক সময় কাটানোর উদ্দেশ্য পূরণ করতে মোটামুটি মানের ভিডিও দেখে ডেটা সাশ্রয় করা যায় ৪৮০ পিক্সেলের ভিডিওতে।
অন্যদিকে আয়েশ করে পছন্দের ভিডিওগুলো দেখার জন্য উচ্চমানের, অর্থাৎ ৭২০ থেকে ১০৮০ পিক্সেলের মধ্যে রাখা যায়। শুধু একটি বিষয় মাথায় রাখলেই চলবে যে, যত বেশি ভালো মানের ভিডিও উপভোগ করবেন, তত বেশি ডেটা খরচ হবে।
ইউটিউবে যথাসাধ্য কম ডেটা খরচ করতে যা করতে পারেন-
ভিডিও দেখার সময় ভিডিও কোয়ালিটি কমিয়ে রাখা
এ কাজ করলে ভিডিও চলার সময় ডেটা বাঁচানো সম্ভব হয়। ডেটার পরিমাণ অনুযায়ী, ব্যবহারকারী নিজেই এটি ঠিক করে নিতে পারেন। তবে মূলমন্ত্রটা মাথায় রাখতে হবে, 'যত বেশি পিক্সেল, তত বেশি ডেটা।'
ডিফল্ট কোয়ালিটি সেট করে রাখা
তবে বারবার ভিডিও কোয়ালিটি ঠিক করা যদি আরও ঝক্কির কাজ মনে হয় তবে, একটি নির্দিষ্ট পিক্সেল মান বাছাই করে রাখা যায় 'ডিফল্ট কোয়ালিটি' হিসেবে। সাধারণত 'স্ট্যান্ডার্ড ডেফিনিশন' অনুযায়ী, সেটি ৪৮০ পিক্সেল হওয়াই ভালো।
ভিডিও অটোপ্লে বন্ধ রাখা
অটোপ্লে মোড অন থাকলে একটি ভিডিও চলার পরপর প্লেলিস্টে থাকা পরবর্তী ভিডিও চালু হয়ে যায়। সে ক্ষেত্রে অটো-প্লে বন্ধ করে রাখলে যতক্ষণ না 'ম্যানুয়ালি' একেকটি ভিডিও চালু করা হচ্ছে, ততক্ষণ বাড়তি ডেটা খরচের ভয় নেই। কেউ যদি একেবারে একটি প্লেলিস্ট শুনে ফেলতে না চান, তবে এই বুদ্ধি কাজে লাগাতে পারেন।
ইউটিউব ফিডে মিউটেড প্লেব্যাক বন্ধ রাখা
মিউটেড প্লেব্যাক হচ্ছে ইউটিউবের ফিডে থাকা ভিডিওগুলো 'প্লে' ক্লিক করার আগেই নিজে নিজে চলতে থাকা। এতেও কিছু ডাটা খরচ হয়।
ইউটিউব প্রিমিয়াম ব্যবহার করা
ইউটিউব প্রিমিয়ামের সাবস্ক্রিপশন নেওয়া সব সময়ই একটি ভালো বিকল্প, কেন না এতে যেকোনো ভিডিও ডাউনলোড করে দেখার সুযোগ পাওয়া যায় এবং ব্রডব্যান্ড কানেকশনের আওতায় থাকা অবস্থায় ভিডিওগুলো ডাউনলোড করে রাখলে অফলাইনেই উপভোগ করা যাবে।
মাসে ১২ ডলার সাবস্ক্রিপশন ফি অনেক মনে হলেও যেটুকু ডাটা প্যাকেজ বাঁচিয়ে দেবে, সে হিসেবে ব্যবহারের ওপর ভিত্তি করে এটি বেশ লাভের হতে পারে।
তথ্যসূত্র: এমউইও, হুইসেলআউট, টেকঅ্যাডভাইসর
Comments