ক্যাপাসিটি চার্জ আমাদের আপদ ছাড়া আর কিছু নয়

ক্যাপাসিটি চার্জ
ছবি: সংগৃহীত

দেশের জনগণকে যখন বিদ্যুৎ ও গ্যাসের বাড়তি দামের বোঝা বইতে হচ্ছে, এই ২ খাতেই তখন উৎপাদনের তীব্র ঘাটতি দেখা দিয়েছে। এদিকে সরকারের ভর্তুকি বরাদ্দের এক-চতুর্থাংশ চলে যায় বিদ্যুৎ খাতে। এর বেশিরভাগ যায় আবার বেসরকারি পাওয়ার প্ল্যান্টের ক্যাপাসিটি চার্জ পরিশোধের পেছনে।

প্রস্তাবিত নতুন অর্থবছরের বাজেট দেখে বোঝা যায়, এই দুর্দশাগ্রস্ত অবস্থা পরিবর্তনের কোনো ইচ্ছা নেই সরকারের। এতে আছে ভুল নীতির প্রতিফলন, যেগুলো সম্পর্কে বিশেষজ্ঞরা দীর্ঘদিন ধরে সতর্ক করে আসছেন। অথচ এখন পর্যন্ত এসবের প্রভাব সামান্যই পড়েছে।

সম্প্রতি, এক আলোচনা সভায় গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) ওপর ক্যাপাসিটি চার্জের ভারী বোঝার বিষয়টি তুলে ধরে। বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো বিদ্যুৎ সরবরাহ করুক বা না করুক, তাদের ক্যাপাসিটি চার্জ পরিশোধ করে যেতে হয়।

২০২১-২২ অর্থবছরে পিডিবি ২৭ হাজার ৪৭৭ কোটি টাকা লোকসান করে। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে লোকসান ছিল ৬ হাজার ২০০ কোটি টাকা। এ লোকসানের মূল কারণ ক্যাপাসিটি চার্জ পরিশোধ। একজন বিশেষজ্ঞ পিডিবিকে 'শ্বেতহস্তীর' সঙ্গে তুলনা করেছেন, যার আছে বিপুল পরিচলন ব্যয় এবং শেষ পর্যন্ত এই অর্থ নাগরিকদেরই বহন করতে হয়।

যখন জ্বালানি সংকট বাংলাদেশের জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখা দিয়েছে, তখন আমরা এমন এক বোঝা বয়ে বেড়াচ্ছি। সিপিডি যেমন বলেছে, বিতরণ ক্ষমতা না বাড়িয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা বাড়ানোর ফলে সক্ষমতার ৫০ শতাংশ অব্যবহৃত রয়ে গেছে।

এদিকে, গ্রীষ্মকালে আমাদের ভয়াবহ লোডশেডিংয়ের মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছে। এ কারণে অনেক কল-কারখানা ও অন্যান্য ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো অলস হয়ে বসে ছিল। অনেককে আবার বহু টাকা খরচ করে জেনারেটর ব্যবহার করতে হয়েছে।

সাধারণ গ্রাহকদের ওপর ভর্তুকির এমন বিশাল বোঝা চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে, আবার তাদেরকেই বিদ্যুৎ ও গ্যাসের বাড়তি দামের পাশাপাশি খাদ্যপণ্য মূল্যের ঊর্ধ্বগতির সঙ্গে লড়াই করে টিকে থাকতে হচ্ছে।

জ্বালানি ও গ্যাসের দাম যখন বাড়ে, তখন অন্য সব কিছুর দামও বেড়ে যায়। সাধারণ মানুষের ওপর পড়ে চরম আর্থিক চাপ। জ্বালানি আমদানির ওপর সরকারের অতিরিক্ত নির্ভরতা সেই চাপ আরও বাড়ায়।

আমরা সরকারকে বিশেষজ্ঞদের পরামর্শের দিকে মনোনিবেশ করার আহ্বান জানাই। ক্যাপাসিটি চার্জ দেওয়া বন্ধের পাশাপাশি দেশের ভেতরে গ্যাস অনুসন্ধান ও নবায়নযোগ্য জ্বালানির উন্নয়নের দিকে মনোযোগ দেওয়ার নীতি গ্রহণ করার আহ্বানও জানাই।

এর ফলে দীর্ঘমেয়াদে ব্যয়বহুল জ্বালানি আমদানির ওপর এই বিপজ্জনক নির্ভরতা কমবে এবং জনগণ ব্যাপকভাবে উপকৃত হবে।

Comments

The Daily Star  | English
EC free to hold fair polls

1994 attack on train carrying Hasina: HC acquits all 47 accused

The HC scrapped the trial court judgement, which sentenced nine people to death, life imprisonment to 25, and 10 years' jail sentence to 13 accused

48m ago