ত্রিমুখী চ্যালেঞ্জের মুখে অর্থনীতি

ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য। ফাইল ছবি

ক্রমাগত উচ্চ মুদ্রাস্ফীতি, উচ্চ ঋণের বোঝা এবং ধীর অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্থনীতির তিন চ্যালেঞ্জ বলে জানিয়েছেন অর্থনীতিবিদ ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য।

সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মানীয় ফেলো দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, মুদ্রাস্ফীতি নিম্ন আয়ের এবং প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর মানুষকে কঠিন সময়ের দিকে ঠেলে দিচ্ছে এবং খাদ্য ও স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা তাদের জন্য অত্যন্ত কঠিন হয়ে পড়েছে।

'নতুন সরকার, জাতীয় বাজেট ও জনমানুষের প্রত্যাশা' শীর্ষক আলোচনা সভায় গতকাল রোববার তিনি বলেন, বিশ্বব্যাপী মূল্যস্ফীতি কমেছে, কিন্তু বাংলাদেশ তা নিয়ন্ত্রণে আনতে পারেনি।

সিপিডি সিটিজেনস প্ল্যাটফর্ম ফর এসডিজি, বাংলাদেশ-এর সহযোগিতায় এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্য অনুযায়ী, মার্চে ভোক্তা মূল্যস্ফীতি হয়েছে ৯ দশমিক ৮১ শতাংশ, যা তার আগের মাসে ছিল ৯ দশমিক ৬৭ শতাংশ।

নিম্ন ও নির্দিষ্ট আয়ের মানুষের ক্রয়ক্ষমতার প্রকৃত চিত্র সরকারি পরিসংখ্যানের চেয়ে অনেক বেশি হতে পারে বলে মনে করেন দেবপ্রিয়।

তিনি বলেন, ঋণ পরিশোধের জন্য ধার নেওয়ার পরিমাণ বাড়ছে যা ঋণ ঝুঁকি তৈরি করছে। তিনি বলেন, বেসরকারি খাতের ঋণ বিবেচনায় নিলে বাংলাদেশের ঋণ-জিডিপি অনুপাত ৪২ শতাংশ।

তিনি বলেন, বৈদেশিক ঋণের তুলনায় অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে সরকারের ঋণ প্রায় দ্বিগুণ, যা বড় সমস্যার লক্ষণ। বৈদেশিক ঋণ বৈদেশিক মুদ্রা বিনিময়ে চাপ সৃষ্টি করেছে।

ঋণ পরিশোধে বাংলাদেশ কখনো পিছিয়ে না পড়লেও জ্বালানি ও অন্যান্য খাতে প্রায় ৫০০ কোটি ডলার ঋণ পরিশোধ হয়নি।

এছাড়া জিডিপির ধীরগতির কারণে সরকারের ব্যয়ের জায়গা কমে যাচ্ছে।

সরকার যদি ২০২৪ সালের জুনের মধ্যে বার্ষিক ৭ দশমিক ৫ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জন করতে চায়, তাহলে চলতি অর্থবছরের বাকি সময়ে ১০ শতাংশের বেশি প্রবৃদ্ধি অর্জন করতে হবে।

বিবিএসের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালের অক্টোবর-ডিসেম্বর প্রান্তিকে বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৩ দশমিক ৭৮ শতাংশ।

দেবপ্রিয় মনে করেন, সংকটময় আর্থ-সামাজিক ও রাজনৈতিক পরিবেশের মধ্যে সরকার আসন্ন ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেট দিতে যাচ্ছে।

তিনি বলেন, 'ধীরগতির প্রবৃদ্ধি থেকে কীভাবে ঘুরে দাঁড়ানো যায়, সে বিষয়ে সরকার কী ভাবছে, বাজেট তার একটি আভাস দেবে। আগামী বাজেট সরকারের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ'।

সুশাসন ও জবাবদিহি নিশ্চিত করতে প্রতি মাসে অন্তত একবার সংসদীয় স্থায়ী কমিটিগুলোর বৈঠক করার জন্যও আহ্বান জানান তিনি।

জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য আনিসুল ইসলাম মাহমুদ বলেন, বাজেট প্রণয়নে সংসদ সদস্য ও সংসদীয় স্থায়ী কমিটির অবদান খুবই সামান্য।

তিনি বলেন, আর্থিক খাতের দুর্বলতা মূলত সুশাসনের অভাবের কারণে।

'তাই সুশাসন প্রতিষ্ঠা জরুরি। অতীতে যা করা হয়েছে তা এখন অতীত। এখন থেকে সব ক্ষেত্রে সুশাসনকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিতে হবে।'

একই মত সাবেক পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নানেরও, 'সুশাসন জরুরি, প্রত্যেক দেশের শাসন ব্যবস্থারই নিজস্ব বৈশিষ্ট্য রয়েছে। দেশের উচিত এ বিষয়ে গুরুত্বারোপ করা।

তিনি বলেন, সব সমস্যার পেছনের সুশাসনের অভাব একটি বড় কারণ।

হা-মীম গ্রুপ অব কোম্পানিজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সংসদ সদস্য এ কে আজাদ বলেন, 'মন্ত্রণালয়গুলো যতদিন দুর্নীতিমুক্ত না হবে, বরাদ্দ যতই বাড়ানো হোক না কেন, ততদিন জনগণের কাছে বাজেটের সুফল পৌঁছাবে না।'

Comments

The Daily Star  | English

Humanitarian corridor: 'First get guarantee for Rohingya return'

'The interim government has agreed in principle to allow a humanitarian corridor under UN supervision with certain conditions'

11h ago