মস্কোর দিকে অগ্রসর হচ্ছে ভাগনার যোদ্ধারা

ভাগনার বাহিনীর নিয়ন্ত্রণে রাশিয়ার দক্ষিণের শহর রোস্তভ। ছবি: রয়টার্স

রাশিয়ার ভাড়াটে সেনা সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান ভাগনার গ্রুপের যোদ্ধারা রাশিয়ার দক্ষিণাঞ্চলের একটি শহর দখলের পর মস্কোর দিকে অগ্রসর হচ্ছে। রুশ সেনারা আকাশপথে তাদের হামলা চালালেও তাদের অগ্রযাত্রা ঠেকাতে আপাত ব্যর্থ হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে।

গত ২৩ বছর ধরে ক্রেমলিনে থাকা ভ্লাদিমির পুতিতের বিরুদ্ধে এই বিদ্রোহ দমনকেই সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখা হচ্ছে। আর এমন এক সময়ে এটি ঘটছে যখন এক বছরের বেশি সময় ধরে রুশ সেনারা ইউক্রেনে যুদ্ধ করছে। টেলিভিশনে দেওয়া এক ভাষণে পুতিন এই বিদ্রোহ কঠোরভাবে দমনের হুঁশিয়ারি দিয়েছেন।

রয়টার্স জানায়, পুতিনের প্রাক্তন মিত্র ওয়াগনার গ্রুপের প্রধান ইয়েভজেনি প্রিগোশিন তার বাহিনী নিয়ে এখন মস্কো থেকে ১১০০ কিলোমিটার দূরে অবস্থান করছেন। পথিমধ্যে রোস্তভ শহরের একটি সামরিক ঘাঁটি দখল করে যোদ্ধারা মস্কোর উদ্দেশে রওনা হয়েছেন।

প্রিগোশিন বলেছেন, রোস্তভের ঘাঁটি দখল করতে তাদের একটি গুলিও ছুড়তে হয়নি। প্রতিরক্ষামন্ত্রী সের্গেই সোইগু সামরিক প্রধান ভ্যালেরি জেরাসিমভকে তার সঙ্গে দেখা করতে রোস্তভে আসতে হবে।

রয়টার্সের পাওয়া সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, মস্কোর দিকে অগ্রসর হতে এখনো কোনো বড় বাধার মুখে পড়েনি ভাগনার বাহিনী। তাদের বহরে থাকা ট্রাকে একটি ট্যাংকও আছে। মস্কোর দিকে অর্ধেকের বেশি পথ অতিক্রম করার পর ভরনেজ শহর পার হওয়ার পর হেলিকপ্টার থেকে তাদের ওপর হামলা হয়। এরপরও তারা সামরিক ট্রাকে করে হাইওয়ে ধরে মস্কোর দিকে অগ্রসর হচ্ছে।

শতাধিক দমকলকর্মী ভরনেজ শহরের একটি জ্বালানির ডিপোতে আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ করছেন। রয়টার্সের পাওয়া ভিডিও ফুটেজে দেখা গেছে একটি হেলিকপ্টার ওড়ার পরপরই জ্বালানির ডিপোতে বিস্ফোরণ ঘটে। প্রিগোশিনের অভিযোগ, তাদের অগ্রযাত্রা ঠেকাতে রাশিয়ার সেনারা আকাশ থেকে বেসামরিক লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত করছে।

প্রিগোশিন বলছেন, তার বাহিনীর লোকেরা ন্যায় বিচার চান। সেই সঙ্গে দুর্নীতিবাজ এবং অযোগ্য কমান্ডারদের রুশ বাহিনী থেকে অপসারণ করতে হবে। তার অভিযোগ, ইউক্রেনে তার বাহিনীর ওপর রুশ হামলায় বহু যোদ্ধা হতাহত হয়েছেন।

পুতিনের ভাষণ

ক্রেমলিন থেকে এক টেলিভিশন ভাষণে পুতিন বলেছেন, রাশিয়ার অস্তিত্ব হুমকির মুখে।

তিনি বলেন, 'আমরা আমাদের জনগণের জীবন ও নিরাপত্তার জন্য, আমাদের সার্বভৌমত্ব ও স্বাধীনতার জন্য, হাজার বছরের ইতিহাস সমৃদ্ধ রাশিয়ায় অধিকারের জন্য লড়াই করছি।'

'যারা বিশ্বাসঘাতকতার পথে পা দিয়েছে, যারা সশস্ত্র বিদ্রোহ করেছে, যারা আমাদের জিম্মি করে সন্ত্রাসের পথ নিয়েছে, তাদের শাস্তি অনিবার্য। জনগণ এবং আইনের কাছে তাদের জবাবদিহি করতে হবে।'

জবাবে প্রিগোশিন বলেছেন, তার বাহিনী এবং তার নিজেরও বিদ্রোহ করার কোনো ইচ্ছা ছিল না।

এক অডিও বার্তায় তিনি বলেন, 'রাষ্ট্রদ্রোহের কথা বলার সময় রাষ্ট্রপতি (পুতিন) একটি গভীর ভুল করেন। আমরা দেশপ্রেমিক, আমরা দেশের জন্য লড়াই করেছি এবং এখনো লড়ছি। আমরা চাই না আমলাদের দুর্নীতি ও প্রতারণা চলতে থাকুক।'

মস্কোতে নিরাপত্তা জোরদার

ভাগনার যোদ্ধাদের বিদ্রোহের মুখে মস্কোতে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। রুশ গণমাধ্যমের বরাতে রয়টার্স জানায়, মস্কোর দক্ষিণ উপকণ্ঠে পুলিশের কয়েকটি ছোট দলকে মেশিনগান নিয়ে অবস্থান নিতে দেখা গেছে। ওই এলাকার জনসাধারণকে ঘরের ভেতরে অস্থান করার পরামর্শ দিয়েছে স্থানীয় কর্তৃপক্ষ।

পশ্চিমা দেশগুলো বলছে, তারা রাশিয়ার পরিস্থিতি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে। হোয়াইট হাউস জানিয়েছে, প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনকে এ ব্যাপারে ব্রিফ করা হয়েছে।

ব্রিটেনের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় বলেছে, সাম্প্রতিক সময়ের মধ্যে এটাই রাশিয়ার সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। সরকারের প্রতি নিরাপত্তা বাহিনীর আনুগত্য কোথায় গিয়ে দাঁড়ায় সেটাই এখন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন।

 

Comments

The Daily Star  | English

Democracy ends where leadership begins

The Daily Star analysis of 25 political parties

8h ago