পুতিন কি ভাগনারের ভাড়াটে বাহিনীকে প্রতিরোধ করে টিকে থাকতে পারবেন

রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। ছবি: এএফপি

ভাগনার গ্রুপের নেতা ইয়েভজেনি প্রিগোশিন মস্কোর সামরিক নেতৃত্ব উৎখাতের ঘোষণা দিয়েছেন। গতকাল শুক্রবার থেকে শনিবার পর্যন্ত সিরিজ ভিডিও বার্তা প্রকাশ করেছেন তিনি। তার দাবি, ভাড়াটে সেনাদের নিয়ে তিনি দক্ষিণ রাশিয়ার শহর রোস্তভ-অন-দনে প্রবেশ করেছেন এবং এর সামরিক এলাকার নিয়ন্ত্রণ নিয়েছেন। বার্তাসংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, এখন মস্কোর দিকে অগ্রসর হচ্ছে ভাগনার গ্রুপ।

এ বিদ্রোহ হঠাৎ ঘটা কোনো ঘটনা নয়। বেশ অনেক দিন ধরেই রুশ সামরিক নেতাদের সঙ্গে প্রিগোশিনের তিক্ততা তৈরি হচ্ছিল। এখন তা সরাসরি দ্বন্দ্বে পরিণত হয়েছে।

ভাগনার গ্রুপ কারা?

এটি একটি প্রাইভেট আর্মি গ্রুপ, যারা মধ্যপ্রাচ্য ও আফ্রিকার সংঘাতে জড়িত ছিল। যদিও সবসময় বিষয়টি অস্বীকার করে আসছে ভাগনার।

প্রিগোশিন গত বছর স্বীকার করেছেন, তিনি সাধারণ ক্ষমায় রাশিয়ার কারাগার থেকে মুক্তি পাওয়া সেনাদের নিয়ে এই গ্রুপটি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।

পূর্ব ইউক্রেনে তার ভাড়াটে সেনারা রাশিয়ার পক্ষে অনেকগুলো যুদ্ধে নেতৃত্ব দিয়েছে। বাখমুতের মাসব্যাপী আক্রমণের অগ্রভাগে ছিল তারা। রাশিয়ার হয়ে বাখমুত দখলও করে ভাগনার। যদিও সেটি বিশাল ক্ষয়-ক্ষতির বিনিময়ে।

কেন এই বিদ্রোহ?

বার্তাসংস্থা এএফপির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কয়েক মাস ধরে প্রিগোশিন পূর্ব ইউক্রেনে তার সেনাদের মৃত্যুর জন্য রুশ সেনাবাহিনীকে দায়ী করে আসছিলেন। তার দাবি, রুশ সেনাবাহিনী ভাগনার গ্রুপের অর্জনকে নিজেদের বলে চালিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছে।

রুশ বাহিনী তাদের পর্যাপ্ত অস্ত্র সরবরাহ করছে না বলে বারবার অভিযোগ তোলেন তিনি। অস্ত্র না পেলে যুদ্ধ থেকে সেনাদের সরিয়ে নেওয়ার হুঁশিয়ারিও দেন। তখন থেকে রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই শোইগু ও সেনাপ্রধান ভ্যালেরি গেরাসিমভের তার সম্পর্কে ফাটল ধরে।  

প্রিগোশিন গত কয়েক মাস ধরে প্রকাশ্যেই শোইগু এবং গেরাসিমভকে অযোগ্য বলে আসছেন। সম্প্রতি শোইগু নির্দেশ দেন, সব স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ও বাহিনীকে ১ জুলাইয়ের মধ্যে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক চুক্তি সই করতে হবে। এর জেরে তিক্ততা আরও বেশি তীব্র হয়ে উঠে।

শুক্রবার প্রিগোশিনের ক্ষোভ চূড়ান্ত রূপ ধারণ করে। একাধিক ভিডিওতে তিনি বলেন, মিথ্যা যুক্তি দিয়ে রাশিয়া ইউক্রেনে আগ্রাসন চালিয়েছে। ইউক্রেন আক্রমণের পেছনে ক্রেমলিন বিভিন্ন যুক্তি দেখালেও, সেগুলো রুশ সেনাবাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তাদের মিথ্যাচার ছিল।

এর কয়েক ঘণ্টা পরে তিনি বলেন, তার সেনারা দক্ষিণ রাশিয়ার শহর রোস্তভ-অন-দনে প্রবেশ করেছে এবং এর সামরিক এলাকার নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে।

রাশিয়ার প্রতিক্রিয়া কী

এএফপির তথ্যমতে, প্রিগোশিনের বিদ্রোহের বার্তা পাওয়ার পর ক্রেমলিন জানায়, বিদ্রোহের বিরুদ্ধে 'ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে'। রাশিয়া মস্কো, রোস্তভ ও লিপেতস্কের মতো কয়েকটি অঞ্চলে নিরাপত্তা জোরদার করেছে।

রুশ সংবাদমাধ্যম আরটির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পুতিন ভাগনার গ্রুপের বিদ্রোহের পর জাতির উদ্দেশে ভাষণ দিয়েছেন। এ ঘটনাকে তিনি রাশিয়ার জন্য একটি 'মারাত্মক হুমকি' বলে অভিহিত করেছেন এবং দেশটিকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। বিদ্রোহীদের কর্মকাণ্ডকে 'পিঠে ছুরি মারা' হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন তিনি।

ভাগনারের কাজকে 'রাষ্ট্রদ্রোহ' হিসেবে চিহ্নিত করে তাদের 'অনিবার্য শাস্তি' দেওয়ার প্রতিজ্ঞা করেছেন পুতিন।

আরটি আরও জানিয়েছে, রাশিয়া প্রিগোশিনের বিরুদ্ধে ফৌজদারি তদন্ত শুরু করেছে। সশস্ত্র বিদ্রোহ নিষিদ্ধ করে প্রণীত আইনের আওতায় মামলা করা হয়েছে। রাশিয়ার নিরাপত্তা সংস্থা প্রিগোশিনের নির্দেশ না মানতে ভাগনারের যোদ্ধাদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে।

রুশ বার্তা সংস্থা তাসের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মস্কোর শীর্ষস্থানীয় সন্ত্রাস দমন কর্তৃপক্ষ চায় প্রিগোশিন তার বিদ্রোহ বন্ধ করুক।

এই বিদ্রোহ কীভাবে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধকে প্রভাবিত করবে

এই বিদ্রোহটি রাশিয়ার জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হতে যাচ্ছে। এটি এমন একটা সময়ে ইউক্রেনের যুদ্ধক্ষেত্র থেকে রাশিয়ার মনোযোগ দূরে সরিয়ে দেবে, যখন কিয়েভ রুশ ভূখণ্ড দখল করতে পাল্টা আক্রমণ চালাচ্ছে।

ইউক্রেনের সেনাবাহিনী বলেছে, তারা প্রিগোশিন ও পুতিনের দ্বন্দ্ব 'পর্যবেক্ষণ' করছে।

এদিকে মস্কো বলছে, কিয়েভের সেনাবাহিনী বাখমুতের কাছে 'আক্রমণাত্মক কর্মকাণ্ডের জন্য' সেনা জড়ো করার জন্য এ সময়টা ব্যবহার করছে।

যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স ও জার্মানি বলেছে, তারা নিবিড়ভাবে এই পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে।

Comments

The Daily Star  | English

Hasina oversaw July protest killings: UN

Human rights office also finds systematic abuse by former ministers, security agency officials, AL leaders

7h ago