সেরা ৫ বাংলাদেশি ভিডিও গেমস

সেরা ৫ বাংলাদেশি ভিডিও গেমস
ছবি: সংগৃহীত

ভিডিও গেম যদি হয় আপনার উৎসাহের জায়গা, তাহলে গেমিং জগতের সবশেষ সংযোজন নিয়ে নিশ্চয়ই জানাশোনা আছে। বহুল প্রতীক্ষিত মার্ভেলের স্পাইডারম্যানের সিক্যুয়েল 'গড অব ওয়্যার র‍্যাগনারোক্টো' অথবা 'হরাইজন ফরবিডেন ওয়েস্টের' মুক্তির তারিখ— নড়েচড়ে বসার জন্য গেমারদের অনেক কিছুই আছে। 

এগুলো ছাড়াও শুধু বাংলাদেশে তৈরি গেমগুলো নিয়েও উৎসাহের অনেক সুযোগ রয়েছে। ঢাকা রেসিং থেকে শুরু করে আসন্ন ওপেন ওয়ার্ল্ডস এবং ট্যাকটিকাল শুটারস পর্যন্ত বাংলাদেশের গেম ডেভেলপমেন্টকে বহুদূর নিয়ে গেছে। যদি কেউ প্রথম দিককার অগ্রগতির অভিজ্ঞতাটা নিতে চান, তাহলে বাংলাদেশের সেরা এই গেমগুলো দেখা দরকার–

আগন্তুক

বাংলা ডাবিং করা জিটিএ ভাইস সিটির সেই অন্তহীন অভিযানের সোনালি দিনগুলো মনে আছে তো? সেই নস্টালজিয়ায় আবার বাঁচতে চাইলে বা বর্তমানে বাংলাদেশে বহুল আলোচিত গেমগুলো সম্পর্কে হালনাগাদ তথ্য পেতে চাইলে আগন্তুক-এ চোখ রাখুন। 

ঢাকা শহরের পুনঃকল্পিত এক দৃশ্যায়নে 'আগন্তুক' দেশের প্রথম ওপেন-ওয়ার্ল্ড গেম। স্টুডিও আতৃত এবং এম৭ প্রোডাকশনের একটি যৌথ প্রকল্প হিসেবে জিটিএ-সদৃশ এই গেমটি গত বছর ট্রেইলার মুক্তি দেবার পর থেকেই গেমারদের উল্লেখযোগ্য দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। 

এই গেম রিলিজের তারিখ নিয়ে বেশ কিছু তথ্য জানা গেলেও আগন্তুক নিয়ে আগ্রহের ভাটা পড়েনি এখনো। প্রাথমিক কিছু দৃশ্য দেখেই ইতোমধ্যে বোঝা গেছে, এই গেমে মাফিয়া জগতের গল্প বোনা হয়েছে সেই শহরে, যাকে আমরা সবাই জানি ও ভালোবাসি। তাই আপনি যদি কখনো ঢাকার অলিতে-গলিতে মাস্তানের (ভিডিও গেমে) মতো দাপিয়ে বেড়াবার স্বপ্ন দেখে থাকেন, তাহলে আগন্তুকই হতে পারে আপনার পছন্দের গেম।

জিরো আওয়ার

আগন্তুকের জন্য অপেক্ষা করতে করতে আরেকটা গেমেও ঢুঁ মেরে আসা যায়। এটিও আতৃত এবং এম৭ এর যৌথ প্রকল্প। ধীরগতির একটি অনলাইন ট্যাকটিক্যাল শুটার হিসেবে বৈশ্বিক পরিসরে মুক্তি পাওয়ার পর 'জিরো আওয়ার' বেশ ইতিবাচক সাড়া পেয়েছে। 

এই ঘরানার অন্য গেমগুলো থেকে জিরো আওয়ার আলাদা এর বাস্তবসম্মত কুশলী বাস্তবায়ন এবং দলগত পরিকল্পনার জন্য। এখানে খেলোয়াড়রা সোয়াট টাস্ক ফোর্স বা সন্ত্রাসী যে কোনো ভূমিকাই বেছে নিতে পারেন। আক্রমণের সাজসজ্জা সম্পন্ন হবার পর যুদ্ধটাকে নিজের অনুকূলে আনার জন্য অস্ত্রশস্ত্র, ঢাল-তলোয়ার, ফাঁদ এবং বিভিন্ন গ্যাজেট নিয়ে প্রস্তুত হতে পারেন। 'সিএসজিও' বা 'রেইনবো সিক্স সিজ' এর মতো জনপ্রিয় কৌশলী গেমের যারা ভক্ত, তাদের জন্য জিরো আওয়ার একটি পছন্দের গেম হতে পারে। 

অ্যানিহিলেশন 

সপ্তাহান্তের দিনগুলোতে কি ফোর্টনাইট কিংবা অ্যাপেক্স লেজেন্ডসের সঙ্গে আপনার অবসর কেটে যায়? নাকি 'ভ্যালোরেন্ট'ই বেশি পছন্দ? যদি বাংলাদেশে নির্মিত কোনো ব্যাটেল রয়্যাল বা ট্যাকটিকাল শুটার খেলতে চান, তাহলে অবশ্যই দেশের প্রথম ব্যাটেল রয়্যাল গেম– অ্যানিহিলেশন খেলা দরকার। ক্রাইসিস এন্টারটেইনমেন্ট দ্বারা ডেভেলপকৃত 'অ্যানিহিলেশন' একটি অনলাইন মাল্টিপ্লেয়ার ৫ভি৫ এবং ৬০ জন খেলোয়াড়ের ব্যাটেল রয়্যাল। এই গেমটি এখনো রিলিজ করা হয়নি, ডেমো থেকে বেশ কিছু প্লেয়ার ফিডব্যাক গ্রহণ করার পর এটি কিছু ঘষামাজার মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে। 

পপ সংস্কৃতিতে এলিয়েন আক্রমণের ভাবনাটি যদি আপনার কাছে বিশ্বের খুব নির্দিষ্ট জায়গায় দেখানো হয় বলেই মনে হয়, তবে অ্যানিহিলেশনের প্লট আপনাকে দ্বিতীয়বার ভাবতে বাধ্য করবে। এই গেমে প্লেয়াররা আমাদের নিজস্ব শহর ঢাকার পথেঘাটেই আক্রমণকারী এলিয়েনদের সঙ্গে লড়বার সুযোগ পায়। পরিচিত রাস্তা, সিনেমার পোস্টার, স্থানীয় দোকানপাট, রিকশা এবং সিএনজির পাশ দিয়ে হেঁটে যাবার সময় বহু ধরনের অস্ত্রশস্ত্র ও চরিত্রের ব্যতিক্রমী, অসাধারণ সব শক্তি থেকে বেছে নেওয়ার সুযোগ তো থাকছেই, সেই সঙ্গে আছে শহরকে রক্ষা করার অভিযান। এই গেমে বেশ কিছু মৌলিক সংলাপ বাংলাতে এবং আমাদের প্রিয় অন্যতম আইকন সালমান শাহের চরিত্র নিয়েও এতে খেলা যাবে, যা কি না বাংলাদেশি সংস্কৃতির প্রতি অন্যতম শ্রদ্ধা প্রদর্শনের দৃষ্টান্ত। 

২১৭০ 

আনরিয়েল ইঞ্জিন ব্যবহার করে ফায়ারফ্লাই স্টুডিওর ডেভেলপ করা গেম '২১৭০' এর গ্রাফিকসে এমন এক ধরনের ব্যতিক্রমী দৃশ্যায়ন রয়েছে, যা কি না গেমের 'স্নিক-পিক' থেকেই অনুমান করে নেওয়া যায়।

ভবিষ্যতের এক থার্ড-পার্সন সাই-ফাই শুটার গেম হিসেবে ২১৭০ সালের প্লট রাখা হয়েছে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী পৃথিবীর 'পোস্ট-অ্যাপোক্যালিপ্টিক' প্রেক্ষাপটে। এ প্লট নিয়ে খুব বেশি জানা না গেলেও এটুকু নিশ্চিত যে ২১৭০ সালের প্লেয়াররা এমন এক ঢাকার দর্শন পাবেন, যেখানে পথেঘাটে ঘুরেফিরে বেড়াচ্ছে তখন হিউম্যানয়েড রোবটেরা। তাই বিধ্বংসী এক ভবিষ্যতে চন্দ্রিমা সুপার মার্কেটের মতো পরিচিত জায়গাগুলো দেখতে কেমন হবে, তা জানতে আগ্রহ হলে ২১৭০ সালের আঙিনায় ঘুরে আসতেই পারেন।

প্রজেক্ট জাজমেন্ট

র‍্যান টেকনোলজির ডেভেলপ করা, ক্রাইসিস এন্টারটেইনমেন্টের অর্থায়নে তৈরি 'প্রজেক্ট জাজমেন্ট' এমন একটি এফপিএস, যা শিগগিরই পিসি এবং কনসোলের লঞ্চ হতে যাচ্ছে। এই গেমে অফলাইন স্টোরি মোডের সঙ্গে অনলাইন মাল্টিপ্লেয়ার মোড, দুটোই আছে। কল অব ডিউটির মতো গেমগুলোর ভক্তদের জন্য প্রজেক্ট জাজমেন্টে থাকবে বাড়তি কিছু। এতে যুদ্ধক্ষেত্রের অভিজ্ঞতায় থাকবে 'সারভাইভাল শুটার' সংযোজন। মুক্তির তারিখের অপেক্ষা থাকা এই গেমটিও চূড়ান্তভাবে সবার সামনে আসার আগে বিভিন্ন ঘষামাজা, কাটাছেঁড়ার মধ্য দিয়ে যাবে। মুক্তির অপেক্ষায় থাকা এবং আসন্ন মুক্তিপ্রাপ্ত গেমগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের এই গেমটি পিসি, কনসোল বা মুঠোফোনের মতো বহুমুখী প্ল্যাটফর্মে দাপিয়ে বেড়াতে যাচ্ছে। 

যদিও বাংলাদেশে গেমিং নিয়ে মাতামাতি বেশিরভাগ কম্পিউটার গেম নিয়ে, তবে প্ল্যাটফর্ম যাই হোক না কেন– দেশে তৈরি 'হিরোস অব ৭১ রিটালিয়েশন', 'বাংলাদেশ ক্রিকেট লিগ', 'মুক্তি ক্যাম্প' বা 'দ্য হিরো আলম গেম'-এর মতো হাস্যরসাত্মক মোবাইল গেমগুলোও মানুষের আকর্ষণ কেড়ে নিচ্ছে। যদি বাংলাদেশি ভিডিও গেমের ভবিষ্যত সম্ভাবনা নিয়ে নিজেই পর্যবেক্ষণ করতে চান, তাহলে ক্রমবর্ধমান এই 'মেড ইন বাংলাদেশ' তালিকা থেকে নিজের ইচ্ছেমতো গেম বেছে নিয়ে মনোমুগ্ধকর সব জগতে ঘুরে বেড়ান। অপেক্ষা শুধু শুরুর বাটনটা চাপার। 

অনুবাদ: অনিন্দিতা চৌধুরী

 

Comments

The Daily Star  | English

‘Shockingly insufficient’

"The proposed decision to allocate USD 250 billion per year for all developing countries is shockingly insufficient," said the adviser

31m ago