ভিডিও গেমস খাতে মহামারির ধাক্কা

এক সমীক্ষায় দেখা গেছে মহামারি উত্তর সময়ে কমে গেছে ভিডিও গেমসের জনপ্রিয়তা ও বিক্রি

মহামারিকালীন ঘরবন্দি জীবনে সময় কাটানোর অন্যতম উপায় ছিল ভিডিও গেমস। তবে, করোনাভাইরাসের প্রকোপ কমে আসার পর পরিস্থিতি অনেকটা স্বাভাবিক হলেও পৃথিবীজুড়ে দেখা দিয়েছে মূল্যস্ফীতি। এর ফলে ভিডিও গেমসের জনপ্রিয়তা হ্রাসের পাশাপাশি কমে গেছে বেচা-বিক্রিও। 

গেমিংয়ে ব্যবহৃত কনসল, এক্সেসরি ও সফটওয়্যার নির্মাতারা মহামারি পরবর্তী সময়ে একই ধরনের অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। যেমনটা যাচ্ছেন প্রযুক্তি বিশারদরাও--কোভিড-১৯-এর ভয়ে মানুষ বাসা-বাড়িতে অবস্থান করায়, যারা এই ব্যবসা ফুলে ফেঁপে ওঠার সম্ভাবনা দেখেছিলেন। 

অতিরিক্ত মূল্যস্ফীতি এই অবস্থার আরও অবনতি ঘটিয়েছে, কৃচ্ছসাধন এবং ইনডোর এনটারটেইনমেন্টের ওপর নির্ভরশীল হতে থাকায় সৃষ্ট গেমিং ফ্যাটিগ (অতিমাত্রায় গেম খেলে আগ্রহ হারিয়ে ফেলা) তৈরি হয়েছে।

মহামারির শুরুর দিকে, 'ঝাঁকে ঝাঁকে মানুষ 'টুইচ'-এ ভিড়তে শুরু করে', বলে জানান ব্র‍্যান্ডন উইলিয়ামস। যিনি আমাজনের মালিকানাধীন প্লাটফর্ম 'বিডব্লিউপ্যাকো'-এর সঙ্গে আছেন। যেখানে গেমাররা ভিডিও গেম কার্যক্রম সম্প্রচার করে থাকে। 'তবে আমি বেশকিছু লোকের সঙ্গে কথা বলেছি, যারা স্ট্রিমিং বন্ধ করেছেন তাদের বার্নআউটের কারণে অথবা এটা আর তারা উপযোগী মনে করছেন না। অথবা তাদের সেই সময় আর নেই, যেহেতু তাদের প্রত্যেককে কাজে যেতে হয়', যোগ করেন ৩০ বছর বয়সী এই স্ট্রিমার।
 
টুইচট্র‍্যাকার.কম-এর তথ্য অনুযায়ী,টুইচের দর্শকসংখ্যা মহামারিকালে অনেক বেড়েছিল যা এখন কমলেও ২০১৯ এর তুলনায় বেশি।

এখনো খেলা হচ্ছে ভিডিও গেমস 

মার্কেট রিসার্স গ্রুপ এনপিডির একজন বিশ্লেষক ম্যাট পিসকাটেলা'র অনুমান, যুক্তরাষ্ট্রের জনগণ এ বছর গেমিংয়ের পেছনে মোট ৫৫ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলার ব্যয় করবে, যা গত বছরের চেয়ে কম হলেও মহামারির আগে ২০১৯ সালের চেয়ে ২৮ শতাংশ বেশি৷ 

যুক্তরাষ্ট্রের ভিডিও গেম জায়ান্ট 'অ্যাক্টিভিশন বিজার্ড', মাইক্রোসফট যাকে কিনে নেবার প্রক্রিয়ায় আছে, জানিয়েছে, এ বছরের প্রথমার্ধের বিক্রিতে ভাটা পড়েছে, তার সঙ্গে গেমাররা তাদের আকর্ষণ 'কল অব ডিউটি' ফ্র‍্যাঞ্চাইস এ সময় কম দিচ্ছে। 

বিশ্লেষকরা মনে করেন, ক্যালিফোর্নিয়াভিত্তিক গ্রাফিকস কার্ড নির্মাতা প্রতিষ্ঠান 'এনভিদিয়া', যারা গেমারদের কাছেও খুব জনপ্রিয়, সম্প্রতি 'ভিডিও গেমের রেভিনিউয়ে পড়তির ফলে আয় কমার বিষয়ক সতর্ক করেছিল। 

নতুন কোনো ভিডিও গেমের বিক্রিতে যে গতি দেখা যায়, সেটা ওয়াইল্ড কার্ড-এর মতো। যা ইন্ড্রাস্টিটিকে এগিয়ে নিতে সহায়তা করে। যেহেতু নতুন রিলিজ হওয়া গেমগুলোতেই খেলোয়াড়রা আগ্রহী থাকেন বেশি। 

পিসকাটেলা আশা করছেন, আগামী বছরে ভিডিও গেমের বাজার আবারও চাঙ্গা হবে। তারপর থেকে স্থিতিশীল প্রবৃদ্ধি বজায় থাকবে। এই বিশ্লেষকের মতে, মূল্যস্ফীতির ফলে জীবনধারণের ব্যয় বৃদ্ধি গেমারদের বাধ্য করছে মৃতব্যয়ী হতে। তবে, তার অর্থ এই নয় যে, গেমাররা খেলা একেবারে ছেড়ে দিয়েছেন। 

যুক্তরাষ্ট্রের গ্রহকদের তিন-চতুর্থাংশেরও বেশি মানুষ ভিডিও গেমস খেলেন এবং এক্সবক্স গেমস পাস ও প্লেস্টেশন প্লাস ব্যয়টি কমিয়ে আনতে সাহায্য করছে, বলেন পিসকাটেলা। 

ভিডিও গেম খেলার ওপর মহামারির প্রভাব আর্থিক ক্ষেত্রের বাইরেও বিস্তৃত হয়েছে, খেলোয়াড়দের ভেতর জন্ম দিয়েছে এমন এক প্রবণতার যাতে তারা 'কমফোর্ট গেমস' খুঁজছেন। যা প্রতিযোগিতার চেয়ে সহযোগিতাকে বেশি গুরুত্ব দিয়ে থাকে। 

কমিউনিটি বিল্ডিং-এর প্রতি নিবেদিত নিনটেনডো-র 'এনিমেল ক্রসিং' এর তুমুল জনপ্রিয়তা এর একটি উদাহরণ। যেখানে খেলোয়াড়েরা এক হয়ে থাকেন ভার্চুয়াল জগতের শহরকে টিকিয়ে রাখতে।

 

অনুবাদ করেছেন, মাহমুদ নেওয়াজ জয় 

 

Comments

The Daily Star  | English

Yunus returns home completing 4-day Japan tour

A flight of Singapore Airlines, carrying the CA landed at Hazrat Shahjalal International Airport at 12:15am on Sunday

6m ago