বোমা ফাটিয়ে স্বর্ণের দোকানে ডাকাতি, ডাকাত দলের পিকআপভ্যান চাপায় পথচারী নিহত
লক্ষ্মীপুরে বোমা ফাটিয়ে স্বর্ণের দোকানে ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে। ডাকাত দল পালিয়ে যাওয়ার সময় তাদের ব্যবহৃত পিকআপ ভ্যান চাপায় এক পথচারী নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন আরও ২ জন। ডাকাতির সময় স্বর্ণ ব্যবসায়ী অপু কর্মকারকে কুপিয়ে জখম করা হয়েছে।
নিহত পথচারীর নাম সফি উল্যা (৭০)। ঘটনার সময় অপুর ছেলে অমি কর্মকারকেও পিটিয়ে আহত করা হয়। ঘটনাস্থল থেকে প্রায় ২০টি অক্ষত ককটেল বোমা উদ্ধার করেছে পুলিশ। ওই ঘটনায় ডাকাত দলের ব্যবহৃত পিকআপসহ দুজনকে আটক করা হয়েছে।
বুধবার রাত সোয়া ৮টার দিকে শহরের কলেজরোড এলাকার চৌধুরী সুপার মার্কেটের আর কে শিল্পালয়ে এই ডাকাতির ঘটনা ঘটে। আহত স্বর্ণ ব্যবসায়ী অপুকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। পিকআপ চাপায় আহত ইসমাইল হোসেন লক্ষ্মীপুরে সদর হাসপাতালে ভর্তি আছেন। অপর আহত পথচারী স্থানীয়ভাবে চিকিৎসা নিয়েছেন। তার নাম-পরিচয় জানা যায়নি।
আহত স্বর্ণ ব্যবসায়ী অপু লক্ষ্মীপুর পৌর শহরের সমসেরাবাদ এলাকার বাসিন্দা। নিহত পথচারী সফি উল্যা পৌরসভার পশ্চিম লক্ষ্মীপুরের ইটেরপুল এলাকার পানাম বাড়ির বাসিন্দা। আহত ইসমাইল হোসেন একই বাড়ির বাসিন্দা।
পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, ঘটনার সময় পিকআপভ্যানে একদল ডাকাত ঘটনাস্থল এসে একাধিক ককটেল বোম ফাটায়। এসময় অপুর স্বর্ণের দোকানে তারা হামলা করে। অপুকে কুপিয়ে তার দোকানের স্বর্ণালংকার লুটে নিয়ে যায়। এসময় অপুর ছেলে অমিকেও পিটিয়ে আহত করে। পালিয়ে যাওয়ার সময়ও ডাকাতদল ককটেল ফাটাতে থাকে। ঘটনাস্থলের পাশে মোহাম্মদ আলী সড়ক দিয়ে তারা পালিয়ে যায়। একই সড়ক থেকে পুলিশ ১০-১৫টি অক্ষত বোমা উদ্ধার করে।
একই এলাকার স্বর্ণ দোকানের কর্মচারী রিপন দত্ত দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'কলেজ রোডে প্রায় ১০০ স্বর্ণের দোকান আছে। রাত সোয়া ৮টার দিকে কলেজ রোডের আরকে শিল্পালয়ের সামনে ককটেল বিস্ফোরণের মতো শব্দ শোনা যায়। আশেপাশের ব্যবসায়ীরা প্রথমে ধারণা করেছিল পটকা বা আতশ বাজি ফুটছে। তাই অনেকেই প্রথমে বিষয়টিকে গুরুত্বের সঙ্গে দেখেনি। কিন্তু উপুর্যপুরি শব্দের কারণে অনেকে ঘটনাস্থল গিয়ে দেখে ডাকাত দল অপু স্বর্ণকারকে চাপাতি দিয়ে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে দোকানের স্বর্ণালংকার লুট করে ককটেল বিস্ফোরণ ঘটাতে ঘটাতে পালিয়ে যায়।
এদিকে পালিয়ে যাওয়ার পথে বেপরোয়া গতির পিকআপভ্যান চাপায় লক্ষ্মীপুর-রায়পুর সড়কের ইটেরপুল এলাকায় ৩ জন আহত হয়। তাদের মধ্যে সফি উল্যা ও ইসমাইল গুরুতর আহত হন। তাদেরকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নেওয়া হলে সফি উল্যাকে চিকিৎসকরা মৃত ঘোষণা করেন।
জেলা জুয়েলার্স সমিতির সভাপতি হরিহর পাল বলেন, অপুর অবস্থা আশঙ্কাজনক। তার মাথাসহ শরীরের বিভিন্ন অংশে কুপিয়ে জখম করা হয়েছে। তার দোকানের সব স্বর্ণালংকার লুট করে নিয়ে গেছে।
সদর হাসপাতালের (আরএমও) ডা. আনোয়ার হোসেন বলেন, পিকআপ চাপায় এক বৃদ্ধ নিহত হয়েছেন। আহত একজনকে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। এছাড়া আহত স্বর্ণ ব্যবসায়ী অপুর অবস্থা আশঙ্কাজনক। উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে ঢাকায় পাঠানো হয়েছে।
জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) মো. সোহেল রানা ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, খবর পেয়ে তিনি তাৎক্ষণিক সদর থানার ওসি মো. মোসলেহ উদ্দীনসহ হাসপাতাল ও ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। ওই ঘটনায় ২ ডাকাত ও তাদের বহনকারী পিকআপভ্যান আটক করা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, 'আটক ডাকাতদেরকে জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। আহত ব্যবসায়ীকে ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। ডাকাতির সঙ্গে জড়িত বাকি ডাকাতদেরকে আটকের চেষ্টা চলছে। পুলিশ সামান্য কিছু স্বর্ণালংকার উদ্ধার করেছে। তবে কী পরিমাণ স্বর্ণালংকার লুট হয়েছে তা জানতে পারিনি।'
Comments