‘জলদস্যুরা জাহাজে উঠছে, বেঁচে থাকলে দেখা হবে’
ভারত মহাসাগরে সোমালিয়ার জলদস্যুদের হাতে জিম্মি বাংলাদেশি জাহাজ এমভি আবদুল্লাহর ২৩ নাবিকের একজন নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার রামপুর গ্রামের মোহাম্মদ আনোয়ারুল হক রাজু (২৯)। জলদস্যুরা যখন জাহাজে উঠছিলেন তখন পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেন তিনি।
মঙ্গলবার বাংলাদেশ সময় দুপুর দেড়টার দিকে রাজু তার বাবার মোবাইলে একটি মেসেজ পাঠান। মেসেজে তিনি লিখেন, 'জলদস্যুরা আমাদের জাহাজের নিয়ন্ত্রণ নিতে জাহাজে উঠছে। বেঁচে থাকলে দেখা হবে।' এরপর পরিবার জুড়ে শুরু হয় আহাজারি। রাজুর মা ছেলেকে ফিরে পেতে কাঁদতে শুরু করেন। তার কান্না কিছুতেই থামছে না।
আজিজুল হক ও দৌলত আরা বেগম দম্পতির ছেলে রাজু উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করে ২০১৬ সালে জাহাজে কাজ শুরু করেন। রাজুর বাবা দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, রাজু সাধারণত বছরে একবার বাড়িতে আসার সুযোগ পায়। সর্বশেষ গত বছর জুলাই মাসে বাড়িতে এসেছিল। মঙ্গলবার দুপুরে মোবাইলে মেসেজ দিয়ে জাহাজে জলদস্যু ওঠার কথা জানায় সে।
জলদস্যুদের কবলে পড়া জাহাজটিতে নোয়াখালীর আরও একজন নাবিক রয়েছেন। তিনি নোয়াখালীর চাটখিল উপজেলার সিংবাহুরা গ্রামের মো. সালেহ আহম্মেদ (৪৬)। মঙ্গলবার দুপুর থেকে তার বাড়িতেও স্বজনদের আহাজারি চলছে।
জাহাজে জিম্মি হওয়াদের মধ্যে আরও আছেন লক্ষ্মীপুরের রায়পুর উপজেলার রাখালিয়া গ্রামের আইয়ুব খান। মাসখানেক আগে তার বাবা আজহার মিয়া মারা যান। তাকে হারানোর শোক কাটিয়ে ওঠার আগেই পরিবারের ছোট ছেলে আইয়ুব জলদস্যুদের হাতে জিম্মি হলেন। এ শোকে আইয়ুবের মা হোমায়রা বেগম কান্নায় ভেঙে পড়েছেন।
আইয়ুব রাখালিয়া উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি ও রামগঞ্জের ফরিদ আহমেদ ভূঁইয়া একাডেমি থেকে এইচএসসি পাস করেন। তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেরিটাইম ইউনিভার্সিটি থেকে মেরিন ইঞ্জিনিয়ারিং পাশ করেন। প্রায় এক বছর ধরে জাহাজে ইন্টার্ন করছেন তিনি।
আইয়ুবের মা হোময়রা জানান, সোমবার বিকেলে ছেলের সঙ্গে শেষ কথা হয় তার। মঙ্গলবার তার অন্য ছেলেদের সঙ্গেও কথা হয়েছে। কিন্তু কেউ তাকে কিছু জানায়নি। মঙ্গলবার রাতে তিনি নাতনির কাছ থেকে জলদস্যুদের কথা শুনে মেজো ছেলেকে ফোন করে বিষয়টি জানতে চান।
এসব শোনার পর থেকে কাঁদছেন আইয়ুবের মা। সারারাত তিনি ঘুমাতে পারছেন না। ছেলের কোনো খবরও পাচ্ছেন না। তিনি তার ছেলেকে বুকে ফিরে পেতে চান।
Comments