যেসব প্রশ্ন অন্যকে করা শোভন নয়

ছবি: সংগৃহীত

অনেক অযাচিত প্রশ্ন আমরা বুঝে কিংবা না বুঝে অনেক সময় অন্যকে জিজ্ঞেস করে ফেলি। যারা এগুলো জিজ্ঞেস করেন তাদের কাছে হয়তো এটি তেমন কোনো বিষয় মনে হয় না। কিন্তু যাকে জিজ্ঞেস করা হচ্ছে তিনি হয়তো প্রশ্নটি শুনে খুবই বিব্রত হয়ে পড়েন, অস্বস্তিবোধ করেন বা প্রশ্নটি তার মনোবেদনার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। 

চলুন জেনে নিই এমন কিছু প্রশ্নের কথা, যেগুলো কাউকে জিজ্ঞেস করা শোভন নয়।

আয় কত

কে কত বেতন পান বা কত টাকা উপার্জন করেন সেটি তার একান্ত ব্যক্তিগত বিষয়। এ বিষয়টি সবার সঙ্গে শেয়ার করতে না চাওয়াটাই স্বাভাবিক। অন্যের আয় কিংবা ব্যয় যেহেতু আপনার জীবনে প্রভাব ফেলছে না, সেহেতু এ প্রশ্নটি কাউকে করবেন না। হতে পারে তিনি যে অর্থ আয় করেন সেটি নিয়ে সন্তুষ্ট না অথবা ব্যক্তিগত গোপনীয়তা বজায় রাখতে কাউকে বিষয়টি জানাতে চান না। আপনার প্রশ্নে তখন তিনি অস্বস্তি বোধ করবেন।

বিয়ে করছেন না কেন

বিয়ে মানুষের জীবনের গুরুত্বপূর্ণ একটি অধ্যায়। কিন্তু একজন কখন বিয়ে করবেন বা আদৌ করবেন কি না সেটি তার ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত। কখন বিয়ে করবেন বা বিয়ে করছেন না কেন জাতীয় প্রশ্ন জিজ্ঞেস করে কাউকে মানসিক চাপ দেওয়া একেবারেই উচিত নয়। 

সন্তান নিচ্ছেন না কেন

সন্তান নেওয়া বা না নেওয়া কোনো দম্পতির নিজেদের ইচ্ছা-অনিচ্ছা, আর্থিক অবস্থা, শারীরিক অবস্থাসহ বিভিন্ন বিষয়ের ওপর নির্ভর করে। দম্পতি সব দিক বিবেচনা করে নিজেরা সন্তানের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়। এক্ষেত্রে আপনার তাদের প্রশ্নটি করে বিব্রত করার প্রয়োজন নেই। এমনও হতে পারে, কোনো দম্পতি হয়তো অসুস্থতার কারণে সন্তান নিতে পারছে না বা তারা হয়তো আর্থিক দিক থেকে আরেকজন মানুষের দায়িত্ব নেওয়ার সক্ষমতা এখনও অর্জন করতে পারেনি। আপনার প্রশ্নটি তাদের মনোবেদনার কারণ হয়ে দাঁড়াবে তখন।

অনেকে আবার একটি সন্তান হলে পরবর্তী সন্তান কখন নেবেন বা নিচ্ছেন না কেন এমন প্রশ্নও করে থাকেন। এক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য। তাদের সিদ্ধান্ত তাদের নিতে দিন। 

মোটা বা চিকন হচ্ছেন কেন

'কী ব্যাপার? এত মোটা হচ্ছেন কেন? সারাক্ষণই খান নাকি?' কিংবা 'এত শুকিয়ে যাচ্ছেন কেন? ঠিকমতো খান না?'—এ ধরনের প্রশ্ন প্রায়ই আমরা অন্যকে করে থাকি। কিন্তু এমন প্রশ্ন করা একদম অনুচিত। যাকে জিজ্ঞেস করছেন, তিনি হয়তো আপনার প্রশ্ন শুনে আত্মবিশ্বাস হারিয়ে ফেলবেন। আয়নার সামনে দাঁড়ালে নিজের ওজন নিয়ে বিব্রতবোধ করবেন। হতে পারে তিনি কোনো অসুস্থতায় ভুগছেন। চেষ্টা করেও ওজন বাড়াতে বা কমাতে পারছেন না। আপনার প্রশ্নটি তাকে আরও হতাশ করে তুলবে।

ডিভোর্স বা বিচ্ছেদ হলো কেন

অনাকাঙ্ক্ষিত হলেও বিচ্ছেদ আমাদের জীবনের অংশ। দুজনের রোমান্টিক সম্পর্ক ভেঙে গেলে বা বিয়ে বিচ্ছেদ ঘটলে এমনিতেই মানুষ মানসিক চাপ অনুভব করে এবং এ সময়টা অনেকেই ভেঙে পড়ে। তখন যদি আপনি তার কাছে বিচ্ছেদের কারণ জানতে চান তবে তিনি আরও বিব্রত হবেন। তিনি যদি নিজে থেকে বিষয়টি আপনাকে জানাতে চান, নিজের খারাপ লাগা শেয়ার করতে চান তাহলে ভিন্ন বিষয়। তখন তার কথা মন দিয়ে শুনুন, তাকে মানসিক সমর্থন দিন। কিন্তু নিজে থেকে এগুলোর কারণ জানতে চাওয়া শোভনীয় নয়। 

উপার্জন করা শুরু করছেন না কেন

গ্র্যাজুয়েশন বা পোস্ট গ্র্যাজুয়েশন শেষ করা ব্যক্তি মাত্রই জানেন, এই প্রশ্নটা কতটা বিরক্তি উদ্রেক করে। প্রত্যেকের জীবন আলাদা। ভবিষ্যত নিয়ে প্রত্যেকের আলাদা পরিকল্পনা থাকে। সবাই যে পড়াশোনা শেষ করার পরপরই উপার্জন শুরু করে দেবেন বিষয়টি এমন নয়। চাকরি বা ব্যবসা চাইলেই শুরু করে ফেলা যায় না। কিছুটা সময় লাগে সব গুছিয়ে নিতে। আবার অনেকেই পিএইচডির মতো উচ্চশিক্ষার প্রস্তুতি নিয়ে থাকেন। ভালো চাকরির প্রস্তুতির জন্যও সময় নেন কেউ কেউ। আবার কেউ হয়তো অনেক চেষ্টা করেও চাকরি পাচ্ছেন না।  তাই আয় করছেন না কেন জিজ্ঞেস করে কারও মনোবল ভেঙে দেওয়া উচিত নয়।

বয়স কত

প্রয়োজন ছাড়া এবং নিজে থেকে না বললে কারোরই বয়স জানতে চাওয়া উচিত নয়। অনেকেই এটি জানাতে স্বস্তিবোধ করেন না। 

কাকে ভোট দিচ্ছেন বা দিলেন

জাতীয় নির্বাচন থেকে স্থানীয় নির্বাচন, ক্লাস প্রতিনিধি নির্বাচন থেকে পাড়ার সাংস্কৃতিক ক্লাবের নির্বাচন—কোনো ধরনের নির্বাচনেই কাউকে এই প্রশ্নটি করবেন না। মনে রাখবেন, ভোট একটি গোপনীয় বিষয়।

তথ্যসূত্র: রিডার্স ডাইজেস্ট

Comments

The Daily Star  | English

Likely reform proposal: Govt officials may be able to retire after 15yrs

For government employees, voluntary retirement with pension benefits currently requires 25 years of service. The Public Administration Reform Commission is set to recommend lowering the requirement to 15 years.

8h ago