নিয়োগ পরীক্ষার অনিয়ম নিয়ে প্রশ্ন, তাঁত প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটের কর্মকর্তা বরখাস্ত

ছবি: সংগৃহীত

নরসিংদীর বাংলাদেশ তাঁত বোর্ডের অধীনস্থ বাংলাদেশ তাঁত শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটের অধ্যক্ষ নিয়োগ পরীক্ষায় অনিয়ম নিয়ে প্রশ্ন তোলায় প্রতিষ্ঠানটির একজন কর্মকর্তাকে সাময়িক বরখাস্তের অভিযোগ উঠেছে।

বরখাস্তকৃত কর্মকর্তা মো. মাহমুদুল আলম সরকার ওই পদের একজন প্রার্থী ছিলেন। তার অভিযোগ, পরীক্ষার ফল ঘোষণার পর স্বজনপ্রীতি, তুলনামূলক কম যোগ্যতাসম্পন্ন ব্যক্তিকে নিয়োগ বোর্ডে বিশেষজ্ঞ হিসেবে রাখা ও নির্বাচিত প্রার্থীর সহকর্মীর মাধ্যমে খাতা মূল্যায়নসহ নানা অনিয়মের প্রশ্ন তোলায় তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।

এ বিষয়ে তিনি গত ৩০ এপ্রিল উচ্চ আদালতে একটি রিট পিটিশন করেছেন।

তবে বাংলাদেশ তাঁত বোর্ডের চেয়ারম্যান মো. ইউসুফ আলী জানিয়েছেন, নিয়ম মেনেই নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে। সরকারি কর্মচারী আচরণবিধি পরিপন্থী কাজ করায় মাহমুদুল আলমকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।

মাহমুদুল আলম বাংলাদেশ তাঁত শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটে সিনিয়র ইন্সট্রাক্টর ও রেজিস্ট্রারের অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন।

তিনি বলেন, গত ২২ ডিসেম্বর প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষ নিয়োগ দেওয়া হবে মর্মে পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয় যেখানে বলা হয় সংশ্লিষ্ট পদে ১২ বছরের অভিজ্ঞতা থাকতে হবে এবং বয়স অনূর্ধ্ব ৪০ বছর হতে হবে। গত ৮ এপ্রিল ঢাকায় লিখিত পরীক্ষার মাধ্যমে চার জন প্রার্থী মৌখিক পরীক্ষার জন্য মনোনীত হন। পরদিন বাংলাদেশ তাঁত বোর্ডের প্রধান কার্যালয়ে মৌখিক পরীক্ষা হয়। ৯ এপ্রিল চূড়ান্ত ফল ঘোষণা হয়।

ফল প্রকাশের পরদিন ১০ এপ্রিল মাহমুদুল পরীক্ষা, প্রার্থী বাছাইয়ে অসঙ্গতির কথা উল্লেখ করে ফলাফল পুনর্বিবেচনার দাবিতে নিয়োগ বোর্ডের সভাপতি ও অতিরিক্ত  সচিব মো. ইউসুফ আলী বরাবর আবেদন করেন। পরে, তিনি ১৬ এপ্রিল পাট ও বস্ত্র মন্ত্রণালয়ের সচিবকে একই বিষয়ে চিঠি দেন।

নিয়োগ পরীক্ষা নিয়ে বিধি বহির্ভূতভাবে প্রশ্ন তোলা এবং যথাযথ কর্তৃপক্ষকে চিঠি না দেওয়ার অভিযোগে বাংলাদেশ তাঁত বোর্ডের চেয়ারম্যান ১২ এপ্রিল মাহমুদুল আলমকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেন। স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ নিয়োগ পরীক্ষা নিয়ে প্রশ্ন তোলায় মাহমুদুল আলমের বিরুদ্ধে কেন ব্যবস্থা নেওয়া হবে না নোটিশে তা জানতে চাওয়া হয়। পরে ২৫ এপ্রিল নোটিশের লিখিত জবাব দেন তিনি। দুদিন পর তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। তিনি ৩০ এপ্রিল এ বিষয়ে উচ্চ আদালতে রিট আবেদন করেন।

ওই আবেদনে তিনি উল্লেখ করেন যে, অধ্যক্ষ পদটি রাজস্ব খাতে জাতীয় বেতন স্কেল ২০১৫ অনুযায়ী তৃতীয় গ্রেডের। কিন্তু ভাইভাতে বিশেষজ্ঞ হিসেবে থাকা ৩ জনের মধ্যে ২ জন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত। ওই দুইজনের মধ্যে একজন আহছানউল্লা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক যা নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির অধ্যক্ষ পদের কয়েক ধাপ নিচের।

অন্যদিকে মেধাক্রমে প্রথম হিসেবে নির্বাচিত প্রার্থীর সহকর্মী মৌখিক পরীক্ষায় বিশেষজ্ঞ হিসেবে উপস্থিত ছিলেন এবং খাতা মূল্যায়নে স্বজনপ্রীতি ও মৌখিক পরীক্ষায় পক্ষপাতের অভিযোগ তোলেন মাহমুদুল। নির্বাচিত প্রার্থীর রোল ক্রম অনুযায়ী নাম ঘোষণার শুরুতে থাকলেও পরে সেখানে হাজির হন বলে দাবি করেন তিনি।

অভিযোগে আরও বলা হয়, যাকে চূড়ান্ত মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে, তার শিক্ষা জীবন শেষ হয়েছে ১১ বছর আগে। এতে আবেদনের শর্ত পূরণ না হলেও তিনি লিখিত পরীক্ষার জন্য বিবেচিত হন। তাই প্রার্থী বাছাইয়ে অসংগতি ও ত্রুটি থাকায় তিনি ফলাফল পুনর্বিবেচনার অনুরোধ জানান।

মাহমুদুলের আইনজীবী মুনতাসির মাহমুদ রহমান বলেন, 'যাদের ভাইভা বোর্ডে রাখা হয়েছিল, তারা প্রার্থীর চেয়ে কম যোগ্যতাসম্পন্ন। তাছাড়া যাকে নির্বাচিত করা হয়েছে, তার সহকর্মীরা খাতা মূল্যায়ন ও বিশেষজ্ঞ হিসেবে ছিলেন যার জন্য আমার মক্কেল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। এসব ছাড়াও নিয়োগ পরীক্ষায় অনেক অনিয়মের সুযোগ ছিল।'

এসব বিষয়ে জানতে চাইলে নিয়োগ বোর্ডের সদস্য সচিব ও বাংলাদেশ তাঁত বোর্ডের পরিচালক (প্রশাসন) সুকুমার চন্দ্র সাহা জানান, কিছু জানার থাকলে লিখিতভাবে জানাতে।

'লিখিত ছাড়া আমি উত্তর দেব না। তাছাড়া, আমি নিজে থেকে কিছু করি না, বোর্ডের চেয়ারম্যানের নির্দেশে কাজ করি,' বলেন তিনি।

নিয়োগ বোর্ডের সভাপতি ও তাঁত বোর্ডের চেয়ারম্যান মো. ইউসুফ আলী বলেন, 'এখানে আমরা স্বচ্ছভাবে নিয়োগ প্রদান করেছি, কোনো স্বজনপ্রীতি করা হয়নি। তিনি (মাহমুদুল) ভুল তথ্য দিয়ে বিভ্রান্ত করছেন।'

দেশে টেক্সটাইল খাত সংশ্লিষ্ট অনেক সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে থাকতে ৩ জন বিশেষজ্ঞের মধ্যে ২ জন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় মধ্যে  নির্বাচিত করা হয়েছে কেন-- এমন প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, 'আমরা বুটেক্স (বাংলাদেশ টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টেকনোলজি) থেকে একজন নিয়েছি। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে থাকতে পারবে না, এমন কোনো কথা নেই।'

অধ্যক্ষ পদ থেকে কম যোগ্যতাসম্পন্ন ব্যক্তিকে বিশেষজ্ঞ রাখা হয়েছে বলে অভিযোগ আছে- এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, সংশ্লিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভাগীয় প্রধানকে চিঠি দিয়েছিলাম। তিনি ভাইভ বোর্ডে পাঠিয়েছেন। আমাদের হাত নেই ওখানে।'

চূড়ান্তভাবে নির্বাচিত প্রার্থীর সহকর্মীকে দিয়ে খাতা মূল্যায়নের বিষয়ে তিনি বলেন, 'আমরা ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যকে চিঠি দিয়েছি, তিনিই ওই শিক্ষককে নিয়োগ বোর্ডে পাঠিয়েছেন। এখানে স্বজনপ্রীতি হয়নি। আর কম যোগ্যতাসম্পন্ন ব্যক্তি ভাইভা বোর্ডে থাকতে পারবে না, এমন কোনো কথা নেই।'

প্রার্থীর অভিজ্ঞতার বিষয়ে তিনি বলেন, 'প্রার্থীর ১২ বছরের অভিজ্ঞতা হয়নি ঠিক আছে কিন্তু তিনি পিএইচডি ডিগ্রি সম্পন্ন করেছেন, তাই অভিজ্ঞতা দুই বছর বেশি ধরা যায়।'

তিনি বলেন, 'যিনি অভিযোগ করেছে তিনি জানেন না, পিএইচডি ডিগ্রির জন্য অভিজ্ঞতা দুই বছর শিথিলযোগ্য।'

Comments

The Daily Star  | English

Nahid warns against media intimidation, vows stern action

The government will take stern action against those trying to incite violence or exert undue pressure on the media or newspapers, said Information Adviser Nahid Islam today

1h ago