বকেয়া ৪১৫৭ কোটি টাকা, বিপিসিকে তেল সরবরাহ না করার কথা জানাল ৭ বিদেশি প্রতিষ্ঠান

বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের (বিপিসি) কাছে জ্বালানি তেল সরবরাহকারী ৭টি বিদেশি প্রতিষ্ঠানের পাওনা রয়েছে প্রায় ৩৯২ মিলিয়ন ডলার, যা বাংলাদেশি টাকায় ৪ হাজার ১৫৭ কোটি টাকা। চিঠি দিয়ে সেই পাওনা আদায়ে বিপিসির ওপর চাপ প্রয়োগ করছে সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানগুলো। বকেয়া আদায়ের আগ পর্যন্ত জ্বালানি তেল সরবরাহ বন্ধ করে দেওয়ার কথাও জানিয়েছে তারা।

সর্বশেষ ইন্ডিয়ান অয়েল কোম্পানি লিমিটেড (আইওসিএল) পাওনা আদায়ে ভারতীয় দূতাবাসের মাধ্যমে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের হস্তক্ষেপ কামনা করেছে। আর পেট্রো চায়না ইন্টারন্যাশনাল (সিঙ্গাপুর) প্রাইভেট লিমিটেড তাদের ২৯ দশমিক ০৩ মিলিয়ন ডলার বকেয়া পাওনা প্রদানের জন্য গত ১৪ এপ্রিল চিঠি দিয়ে বিপিসিকে ২১ এপ্রিল বিকেল ৫টা পর্যন্ত পর্যন্ত সময়সীমা নির্ধারণ করে দিয়েছে।

বিপিসি কর্মকর্তাদের ভাষ্য, বিপিসির ফান্ড সংকট নেই। মূলত বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর ডলার সংকটের কারণে এলসির (লেটার অব ক্রেডিট) মাধ্যমে বকেয়া পরিশোধ করা যাচ্ছে না।

বিপিসি সূত্রে জানা গেছে, জ্বালানি তেল সরবরাহ বাবদ বিপিসির কাছে পাওনাদার প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে সিঙ্গাপুর-ভিত্তিক ভিটল এশিয়া, চীনা প্রতিষ্ঠান ইউনিপেক, সংযুক্ত আরব আমিরাতের এমিরেটস ন্যাশনাল অয়েল কোম্পানির (ইএনওসি), ভারতীয় আইওসিএল, ভারতীয় নুমালিগড় রিফাইনারি লিমিটেড (এনআরএল), সিঙ্গাপুরের পেট্রো চায়না ও ইন্দোনেশিয়ার বুমি সিয়াক পুসাকো (বিএসপি) উল্লেখযোগ্য।

বিপিসির কর্মকর্তারা জানান, বিপিসির কাছে সবচেয়ে বেশি পাওনা রয়েছে ভিটল এশিয়ার ১০২ দশমিক ২৭ মিলিয়ন ডলার। তাদের পরে আছে বিএসপি। প্রতিষ্ঠানটির কাছে বিপিসির দেনা ১০১ দশমিক ৯৩ মিলিয়ন ডলার। এ ছাড়া, ইউনিপেকের পাওনা ৮৪ দশমিক ৯৬ মিলিয়ন ডলার, ইএনওসির পাওনা ৪৩ দশমিক ০৫ মিলিয়ন ডলার, আইওসিএল পাবে ২৫ দশমিক ৩৯ মিলিয়ন ডলার, পেট্রো চায়নার বিপিসির কাছে পাওনা রয়েছে ২৯ দশমিক ০৩ মিলিয়ন মার্কিন ডলার ও এনআরএলের পাওনা ৫ দশমিক ৩৩ মিলিয়ন ডলার।

বিপিসি সূত্র জানিয়েছে, এর মধ্যে ভিটল এশিয়া গত ২৮ ফেব্রুয়ারি, ইউনিপেক ২৮ ফেব্রুয়ারি ও ২৪ মার্চ, আইওসিএল ৬ এপ্রিল, এনআরএল ২৯ মার্চ, পেট্রো চায়না ১৪ এপ্রিল ও বিএসপি ২৭ মার্চ বিপিসিকে চিঠি দিয়ে বকেয়া আদায় হওয়ার আগ পর্যন্ত জ্বালানি তেল সরবরাহ বন্ধ করে দেবে বলে জানিয়েছে। চিঠিগুলোর কপি দ্য ডেইলি স্টারের হাতে এসেছে।

আর ইএনওসি গত ১৭ এপ্রিল টেলিফোনে বিপিসিকে একই বিষয়ে জানিয়েছে বলে সূত্র নিশ্চিত করেছে।

নিয়ম অনুযায়ী বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে প্রাপ্ত জ্বালানি তেল খালাস করার পর ২০ দিনের মধ্যে মূল্য পরিশোধ করে থাকে। দেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোতে ডলার সংকটের কারণে ফেব্রুয়ারির পেমেন্টও পরিশোধ করতে পারেনি বিপিসি। এজন্য জ্বালানি তেল সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানগুলো চিঠি দিয়ে বকেয়া পরিশোধের অনুরোধ জানিয়ে আসছে।

বিপিসি কর্মকর্তারা আরও জানান, জ্বালানি তেল আমদানির জন্য জনতা ব্যাংকে ১১৯ দশমিক ৬৪ মিলিয়ন ডলারের এলসি খোলা হলেও ডলার সংকটের কারণে তেল সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের পেমেন্ট আটকে আছে। এ ছাড়াও সোনালী ব্যাংকে ১১৫ দশমিক ২৫ মিলিয়ন ডলারের ৬টি এলসি, রূপালী ব্যাংক ৭৪ দশমিক ৭৯ মিলিয়ন ডলারের ৪টি এলসি ও মেঘনা ব্যাংকে ৫ দশমিক ৩৩ মিলিয়ন ডলারের একটি এলসি খোলা হলেও সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের পেমেন্ট এখনো বাকি।

বিপিসির পরিচালক (অর্থ) কাজী মো. মোজাম্মেল হক ডেইলি স্টারকে বলেন, 'তেল সরবরাহকারী বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের বিপিসির কাছে পাওনা রয়েছে ৩০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের বেশি। পেমেন্ট একেবারেই বন্ধ, তা বলা ঠিক হবে না। দেশের বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোতে ডলার সংকটের কারণে এলসির পেমেন্ট বিলম্বিত হচ্ছে। আমরা এ ব্যাপারে ব্যাংক কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছি।'

তেল সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর পাওনা প্রসঙ্গে বিপিসির চেয়ারম্যান এ বি এম আজাদ দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'ডলারপ্রাপ্তি সাপেক্ষে নিয়মিতই সরবরাহকারীদের কিছু কিছু পেমেন্ট পরিশোধ করা হচ্ছে। বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে গত সোম ও মঙ্গলবার ৩০ মিলিয়ন করে মোট ৬০ মিলিয়ন ডলার বিপিসির জন্য ছাড় দেওয়া হয়েছে। এগুলো তেল সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানগুলোকে প্রদান করা হয়েছে।'

Comments

The Daily Star  | English

Tanvir takes five as Tigers clinch 2nd Sri Lanka ODI

Bangladesh captain Mehidy Hasan Miraz has won the toss and opted to bat first in the second ODI against Sri Lanka, looking to keep the three-match series alive with a win at the R Premadasa Stadium today. 

13h ago