বকেয়া থাকায় বিপিসিকে জ্বালানি তেল দিতে অনীহা বিদেশি ২ প্রতিষ্ঠানের

ছবি: সংগৃহীত

বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনকে (বিপিসি) বর্তমানে জ্বালানি তেল সরবরাহ করছে ৬টি প্রতিষ্ঠান। তবে বকেয়া পরিশোধ না করায় এর মধ্যে ২টি প্রতিষ্ঠান বিপিসিকে জ্বালানি তেল সরবরাহ করতে অনীহা প্রকাশ করেছে।

এ অবস্থায় রাষ্ট্রীয় সংস্থাটি সামনের দিনগুলোতে নিরবচ্ছিন্নভাবে জ্বালানি তেল সরবরাহ নিশ্চিত করতে পারবে কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

জানা গেছে, চলমান ডলার সংকটের কারণে বিপিসি সিঙ্গাপুর-ভিত্তিক ভিটল এশিয়া এবং চীনা প্রতিষ্ঠান ইউনিপেককে মোট প্রায় ২৮২ মিলিয়ন ডলার পরিশোধ করতে পারেনি।

২০২০ সালে এই ২টি প্রতিষ্ঠান সর্বনিম্ন দরদাতা হিসেবে বছরের প্রথমার্ধে ১ দশমিক ০৬ মিলিয়ন টন জ্বালানি তেল সরবরাহ করার একটি টেন্ডার পায়।

তেল সরবরাহের পর ভিটল এশিয়া বিপিসির কাছে ১৫২ দশমিক ৬০ মিলিয়ন ডলার পাওনা থাকে। পরে প্রতিষ্ঠানটি গত বছরের ৮ ও ১০ আগস্ট ইমেইলে বিপিসিকে জানায়, বকেয়া পরিশোধ না করলে তারা বাংলাদেশে জ্বালানি সরবরাহ করবে না। একইসঙ্গে তারা বিলম্ব পরিশোধের সুদও দাবি করে।

এরপর চলতি বছরের ২৮ ফেব্রুয়ারি ভিটল এশিয়ার কর্মকর্তারা বিপিসির সঙ্গে বৈঠক করেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ভিটল এশিয়া বাংলাদেশের একজন কর্মকর্তা দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'এখন পর্যন্ত বিপিসি বকেয়া পরিশোধ করতে পারেনি।'

একইভাবে চীনা সিনোপেকের সহযোগী প্রতিষ্ঠান ইউনিপেক বিপিসির কাছে পায় ১২৯ মিলিয়ন ডলার।

চলতি বছরের ২৮ ফেব্রুয়ারি বেইজিংভিত্তিক এ প্রতিষ্ঠানটি বকেয়া পাওনার বিষয়ে বিপিসিকে চিঠি দেয়।

এরপর গত ৪ মার্চ ইউনিপেকের একটি ডিজেলবোঝাই জাহাজ চট্টগ্রাম বন্দরে আসে। কিন্তু বকেয়া পরিশোধ না হওয়ায় জাহাজটি থেকে ডিজেল খালাস করতে দেওয়া হয়নি।

এ প্রসঙ্গে বিপিসির এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমরা "ফিন্যান্সিয়াল হোল্ডের" কারণে জ্বালানি তেল ছাড়াতে পারিনি।'

পরদিন ৫ মার্চ বিপিসি ইউনিপেককে ৬২ দশমিক ২৭ মিলিয়ন ডলার পরিশোধ করে। পরে বন্দর থেকে কার্গোটি ছেড়ে দেওয়া হয়।

এর পরদিন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়কে এ বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে চিঠি দেয় বিপিসি। চিঠিতে তারা জানায়, যদি বকেয়া পরিশোধ করা না হয়, তাহলে ওই চীনা প্রতিষ্ঠান তেল ছাড়ে আবার এ ধরনের নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে পারে।

নির্ধারিত সময়সূচি অনুযায়ী জ্বালানির কার্গো না পৌঁছালে, দেশের জ্বালানি মজুত আশঙ্কাজনক হারে কমে যাওয়ার সম্ভাবনা আছে।

চিঠিতে বলা হয়, এ অবস্থায় নিরবচ্ছিন্ন জ্বালানি সরবরাহ নিয়ে অনিশ্চয়তা থাকবে। এর প্রভাব চলমান সেচ মৌসুমে কৃষিখাতে পড়বে।

জানতে চাইলে বিপিসির পরিচালক (অপারেশনস অ্যান্ড প্ল্যানিং) খালিদ আহমেদ ডেইলি স্টারকে বলেন, 'এ ধরনের "ফিন্যান্সিয়াল হোল্ড" নতুন কিছু নয়। বিপিসিকে চাপে রাখতে সরবরাহকারীদের একটি কৌশল।'

তিনি বলেন, 'ভিটল এশিয়াকে গতকাল ৩০ মিলিয়ন ডলার দেওয়া হয়েছে। বাকি পাওনা পর্যায়ক্রমে পরিশোধ করা হবে।'

ডলার সংকটের কারণে বিপিসির পক্ষে মার্চের চূড়ান্তকৃত আমদানি সূচির ১৬টির মধ্যে ৬টি এবং এপ্রিলের ১৪টি পার্সেলের এলসি (ঋণপত্র) এখনো খোলা সম্ভব হয়নি বলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।

জানতে চাইলে বিপিসির চেয়ারম্যান এ বি এম আজাদ ডেইলি স্টারকে বলেন, 'ব্যাংকে ডলার সংকট রয়েছে। তাই এলসি খুলতে বিলম্ব হচ্ছে। জ্বালানি তেল আমদানির এলসি একেবারে বন্ধ, তা নয়। ডলার প্রাপ্তি সাপেক্ষে ধীরে ধীরে এলসি খোলা হচ্ছে।'

ভিটল এশিয়া এবং ইউনিপেক ছাড়াও, বিপিসির এমিরেটস ন্যাশনাল অয়েল কোম্পানি, ইন্দোনেশিয়ার বিএসপি জাপিন, পেট্রো চায়না ইন্টারন্যাশনাল এবং ইন্ডিয়ান অয়েল করপোরেশনের কাছ থেকে ৪ দশমিক ৫০ লাখ মেট্রিক টন জ্বালানি আমদানি করার কথা।

বিভিন্ন দীর্ঘমেয়াদি চুক্তির অধীনে বা দরপত্রের মাধ্যমে বিপিসি বছরে প্রায় ৬৫ লাখ মেট্রিক টন বিভিন্ন ধরনের জ্বালানি আমদানি করে।

Comments

The Daily Star  | English

Each martyr family to get Tk 30 lakh: Prof Yunus

Vows to rehabilitate them; govt to bear all expenses of uprising injured

22m ago