‘আমি মনে করি পৃথিবীর কোনো বক্তব্য বিতর্কের ঊর্ধ্বে নয়’

মামুনুর রশীদ। ছবি: শেখ মেহেদী মোরশেদ/স্টার

মামুনুর রশীদ। বাংলাদেশের মঞ্চ নাটকের অন্যতম পথিকৃৎ ও প্রখ্যাত অভিনেতা। স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে শহীদ মুনীর চৌধুরীর কবর নাটক দিয়ে প্রথম নির্দেশনা শুরু করেন। এদেশের নাটককে যারা সমৃদ্ধ করেছেন, তিনি তাদের একজন। তার নাটক ভারতসহ পৃথিবীর নানা দেশে প্রশংসা কুড়িয়েছে। একজন মুক্তিযোদ্ধাও তিনি। পেয়েছেন একুশে পদক।

সম্প্রতি এই নাট্যকার-অভিনেতার একটি বক্তব্যকে কেন্দ্র করে বেশ আলোচনা-সমালোচনা চলছে। বিষয়টি নিয়ে তিনি কথা বলেছেন দ্য ডেইলি স্টারের সঙ্গে।

ডেইলি স্টার: আপনার একটি বক্তব্যকে কেন্দ্র করে ব্যাপক আলোচনা হচ্ছে। এতে ইতিবাচক মন্তব্য যেমন আসছে, নেতিবাচক কথাও আসছে। এ বিষয়ে আপনার মন্তব্য কি?

মামুনুর রশীদ: আমি মনে করি পথিবীর কোনো বক্তব্য বিতর্কের ঊর্ধ্বে নয়। আমি গণতন্ত্রে বিশ্বাস করি। গণতন্ত্রকে ভালোবাসি। সেজন্য সবিনয়ে বলব, বিতর্ক হতে পারে; কিন্তু আমার বক্তব্যকে নিয়ে যেভাবে শ্রেণী বিভাজন করা হচ্ছে তা কি আদৌ ঠিক? পুরো বক্তব্য না পড়ে যেভাবে বলা হচ্ছে, তা কতটা সমীচিন তার বিচারের ভার সবার ওপর রইল। আসল বক্তব্যকে পাশ কাটিয়ে অন্যদিকে চলে যাওয়া হচ্ছে। 

দেখুন, শিল্প-সাহিত্যের জন্য যারা কাজ করে গেছেন, যুগের পর যুগ এই মাধ্যমকে সমৃদ্ধ করেছেন, আমিও সেই পথের একজন অতি সাধারণ কর্মী মাত্র। যারা যাত্রাপালা করেছেন, যারা পালাগান করেছেন, শিল্প-সাহিত্যকে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে  গেছেন, তারা কি সবাই ধনাঢ্য ব্যক্তি ছিলেন? কিন্ত, তাদের অবদানকে আমরা সবাই এখনো শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করছি।

ডেইলি স্টার: যাকে নিয়ে কথা হচ্ছে তাকে কি আপনি চেনেন?

মামুনুর রশীদ: সুন্দর প্রশ্ন। যাকে নিয়ে এত কথা বলা হচ্ছে, আমি তার একটি কাজও দেখেছি? আমি তাকে চিনি? না। চিনি না।

ডেইলি স্টার: শিল্পের কাজ কী শুধু বিনোদন দেওয়া, না অন্যকিছু?

মামুনুর রশীদ: শিল্পের একটা বড় কাজ বিনোদন। কিন্ত সেটা তো সম্মানজনক বিনোদন হতে হবে। যার জন্য অনেকেই কথা বলছেন, সে কি সম্মানজনক বিনোদন করে? নাকি করে না? এটা কি কেউ বলছেন? আমি বলব ভুল বলা হচ্ছে।

ডেইলি স্টার: সব বিনোদন কি সমৃদ্ধ করে আমাদের?

মামুনুর রশীদ:  সব বিনোদন সমৃদ্ধ করবে আমি তা আশাও করি না। এখানেই রুচির প্রশ্নটি আসে। আর সেইসব বিষয় নিয়ে অনেকগুলো কথা বলেছি। দেখুন, একজন জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম তার জীবদ্দশায় কত সংগ্রাম করেছেন। কত দরিদ্র ছিলেন ছিলেন তিনি। আমাদের ময়মনসিংহের ত্রিশালে এসে তিনি থেকেছেন, পড়ালেখা করেছেন। কত পরিশ্রম করেছেন। শেখার জন্য কী না করেছেন। আবার ওই সংগ্রামের মধ্যে লেখালেখিও করেছেন।

ডেইলি স্টার: শিল্পের কাজ কি?

মামুনুর রশীদ: এ প্রশ্ন আমারও। শিল্পের কাজ কি? শিল্পের কাজ শিক্ষনীয়। কেউ স্কুলে বা কলেজে বা বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়ে শেখে। আবার কেউ গুরুর কাছ থেকে শেখে। শেখার শেষ নেই। কিন্ত শেখার আগ্রহ থাকতে হবে। শিক্ষার অনেক সুযোগ আছে। কেউ  গ্রহণ করলে ভালো। না পড়ে কমেন্টস করা অতি সহজ। ফেসবুকে স্বাধীনতা আছে। যে যা পারে করছে। তর্কের খাতিরে তর্ক- এটা স্বাভাবিক । কিন্ত যুক্তি দিয়ে তর্ক করাটাও তো সুস্থ ও ভালো মানুষের  পরিচয়। সমানে কিংবা ঢালাওভাবে তর্ক করে যাচ্ছে।

ডেইলি স্টার: আপনি তো সর্বক্ষেত্রে রুচির কথা বলেছেন?

মামুনুর রশীদ: আমি বলেছি সর্বক্ষেত্রে রুচির দুর্ভিক্ষ চলছে। সে মাথা ঘামায় কেন? আমি তো চিনিও না? গায়ে মাখলো কেন? আমি একটা জেনারেল কমেন্টস করেছি। তার নাম এসে গেছে। কেউ কেউ বলছেন আর কারও নাম কেন বলেননি? আমি বলতে পারতাম। অবশ্যই বলতে পারতাম।

আচ্ছা, টাঙ্গাইলের মধুপুরে একটি মেয়েকে ধর্ষণ করে মেরে ফেলল, তার জন্য কি এরা প্রতিবাদ করেছিল? ফেসবুকে ঝড় তুলেছিল? যারা এখন এত কথা বলছেন? আমি তো পত্রিকায় কলম ধরেছি। সেমিনারে বলেছি। নানা জায়গায় বলেছি। পণ্যের দাম বাড়ছে এটা নিয়েও আমি লিখি পত্রিকার কলামে। আমি তো শিল্পী, এইসব না লিখে শুধু বিনোদন বা শিল্প-সাহিত্য নিয়ে লিখলেও পারতাম। কিন্ত কেন সবকিছু নিয়ে কলম তুলে নিই? শিল্পী ছাড়াও এই দেশের প্রতি দায় আছে বলেই নেই। যারা এখন হাজার হাজার কমেন্টস করছেন, কথা বলছেন, ওনারা তখন কথা বলেন না কেনে?

ডেইলি স্টার: থিয়েটার মানে কি?

মামুনুর রশীদ: থিয়েটার মানে মুক্তি। থিয়েটারে গণতন্ত্রের কথা বলা যায়। এই গণতন্ত্রকে আমি যেমন উপভোগ করি, দর্শকরাও করেন। থিয়েটার একটা বড় শক্তি।

ডেইলি স্টার: সম্প্রতি ভারতের কলকাতায় আজীবন সম্মাননা পেয়েছেন এবং বিশ্ব নাট্য দিবসেও সম্মাননা পেয়েছেন।

মামুনুর রশীদ: একটি জীবন কাটিয়ে দিলাম শিল্পের পথে। শিল্পকে ভালোবেসে। কত সংগ্রাম করেছি! কত কষ্ট করেছি! তারপরও শিল্পের পথ থেকে সরে যাইনি। এই শেষ জীবনে আমি মনে করি এগুলো ভালো কাজের স্বীকৃতি। আমার সৌভাগ্যও বটে। আমাকে দায়িত্বশীল ও মনোযোগী করে তোলো এই সম্মাননাগুলো।

ভারতের কলকাতা থেকে জীবন কৃতি আজীবন সম্মাননা পেয়েছি সম্প্রতি। এছাড়া বিশ্বনাট্য দিবসে চারটি বড় সংগঠন মিলে আমাকে সম্মাননা দিয়েছে।

ডেইলি স্টার: এই সময়ে নাট্য সংগঠনগুলো কি আপনার পাশে দাঁড়িয়েছে?

মামুনুর রশীদ: অবশ্যই। নাট্য সংগঠনগুলো যুক্তি দিয়ে তাদের কথা তুলে ধরছে। তারা আমার সঙ্গে আছে।

Comments

The Daily Star  | English
The Indian media and Bangladesh-India relations

The Indian media and Bangladesh-India relations

The bilateral relationship must be based on a "win-win" policy, rooted in mutual respect, non-hegemony, and the pursuit of shared prosperity and deeper understanding.

3h ago