আমাদের দাঁড়ানো দরকার, আমাদেরও কিছু বলার আছে: মামুনুর রশীদ

মামুনুর রশীদ। ছবি: শেখ মেহেদী মোরশেদ

মামুনুর রশীদ বাংলাদেশের নাট্যজগতের অন্যতম ব্যক্তিত্ব। মঞ্চ নাটকে তার অবদান অনেক। দেশ-বিদেশে তার লেখা ও নির্দেশিত মঞ্চ নাটক ব্যাপকভাবে প্রশংসিত হয়েছে। নাট্যপরিচালক ও অভিনেতা হিসেবেও তিনি সমাদৃত।

যে কোনো গণতান্ত্রিক আন্দোলনে রাজপথে দেখা গেছে তাকে। একুশে পদকপ্রাপ্ত গুণী এই শিল্পী আজও অভিনয় ও পরিচালনায় সরব। পাশাপাশি তিনি কলামও লিখছেন দীর্ঘ দিন ধরে।

দেশের চলমান পরিস্থিতি নিয়ে সম্প্রতি দ্য ডেইলি স্টারের সঙ্গে কথা বলেছেন মামুনুর রশীদ।

আপনি মুক্তিযুদ্ধ দেখেছেন, স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে অংশ নিয়েছেন, দেশের চলমান সংকটকে কীভাবে দেখছেন?

মামুনুর রশীদ: আমি মনে করি সর্বস্তরে সংলাপে বসা উচিত। দেখুন, তরুণরা একরকম করে ভাবছে। আমরা একরকম ভাবনা ভাবছি। রাজনৈতিক নেতারা একরকম ভাবছেন। সরকার ভাবছে একরকম। সরকারের ভাবনার পরিবর্তন দরকার। যেভাবে চলছে, এভাবে ভাবলে হবে না। সেজন্য সংকট দূর করার জন্য দ্রুত সরকারের উচিত সংলাপে বসা উচিত। আলোচনার টেবিলেই সব সমাধান করা দরকার।

বিচার বিভাগের কাছে আপনার প্রত্যাশা?

মামুনুর রশীদ: বিচার বিভাগের তদন্ত যেন সঠিকভাবে হয়। এটা সব মানুষের প্রত্যাশা।

গতকাল আপনি শিল্পীদের সঙ্গে রাজধানীর রাজপথে দাঁড়িয়েছিলেন এ ব্যাপারে কিছু বলুন।

মামুনুর রশীদ: আমাদের দাঁড়ানো দরকার। আমাদেরও কিছু বলার আছে। যারা সন্তান হারিয়েছেন তারা উদ্বিগ্ন। যারা আপনজন হারিয়েছেন তারা উত্তেজিত। শান্তিপূর্ণ অবস্থান নিলে কিছুটা উওেজনা প্রশমিত হয়। আমরা কিন্তু আগেও রাজপথে নেমেছি। গণতন্ত্রের অভিযাত্রা শুরু করেছিলাম স্বৈরাচারের সময়। তখন জনগণের কাছে আমরা একটা মেসেজ দিয়েছিলাম। শিল্পী হলেও আমি একজন মানুষ, এই দেশের নাগরিক, সেই তাড়না থেকে রাজপথে নেমেছি।

গতকাল তো আপনি বিটিভিতেও গিয়েছিলেন?

মামুনুর রশীদ: গতকাল শুধু রাজপথে যাইনি, বাংলাদেশ টেলিভিশনেও গিয়েছিলাম। বিটিভি আমাদের অনেক বছরের প্রিয় জায়গা। ওখানে যেভাবে ধ্বংস চালিয়েছে তা অত্যন্ত বেদনাদায়ক। যেদিন ওখানে আক্রমণ করেছে, পুলিশ দাঁড়াতে পারেনি। ফায়ার সার্ভিস আসতে পারেনি।

এছাড়া, গতকাল আমি ঢাকা মেডিকেলেও গিয়েছিলাম আহতদের দেখতে। কারো হাতে গুলি, কারো শরীরের বিভিন্ন অংশে গুলি লেগেছে। কেউ আহত হয়ে কাঁদছে। একজন শিশু হাসপাতালে ছিল। তাকে বাঁচানো যায়নি। হাসপাতালে গিয়ে এ পরিবেশ দেখে কষ্ট লেগেছে।

এই হত্যা, ধ্বংসযজ্ঞের ব্যাপারে কী বলবেন?

মামুনুর রশীদ: এটা দুঃখজনক। মানুষ হত্যা, স্থাপনা ধ্বংস কোনোটাই মানতে পারছি না। এইসব ধ্বংস যারা করেছে, তারা একটা মারাত্নক শক্তি। যে স্টাইলে করেছে খুবই হিংস্রভাবে করেছে। তারপর ধ্বংসযজ্ঞ করেই শান্ত হয়নি, লুটপাটও করেছে। আন্দোলন যারা করে তারা কখনো লুটপাট করে না। যারা করেছে খুব শক্তিশালী সংগঠন করেছে। তারা খুবই সংগঠিত। দীর্ঘ দিন ধরে হয়ত এটা নিয়ে পরিকল্পনা করেছিল। এখন খুঁজে বের করতে হবে কারা এটা করেছে।

ছাত্র হত্যা, সাধারণ মানুষ হত্যা, বিভিন্ন স্থাপনা ধ্বংস-কোনোটাই সমর্থন করি না। শান্তি প্রয়োজন। সকল সমস্যার সমাধান প্রয়োজন।

সম্প্রতি এতগুলো প্রাণ গেল, রক্ত ঝরল- মানুষ মানবিক হবে কবে?

মামুনুর রশীদ: গণতান্ত্রিক হলেই মানুষ মানবিক হয়ে উঠে। সুন্দর গণতান্ত্রিক পরিবেশ দরকার। জনগণের ভেতরে ক্ষোভ আছে। চারদিকে দুনীর্তি। সবকিছুর জন্য গণতন্ত্রটা বড় দরকার।

বর্তমানের তরুণ প্রজন্ম সম্পর্কে আপনার মন্তব্য?

মামুনুর রশীদ: তরুণদের আরও ভাবার অবকাশ আছে। তাদের আরও ভাবতে হবে। তারা দুর্নীতি নিয়ে কথা বলেনি। তারা শিক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে কথা বলেনি। ছাত্র আন্দোলনে শুধু চাকরি নয় পুরো শিক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে আন্দোলন করলে আরও ভালো হত।

Comments

The Daily Star  | English

UK govt unveils 'tighter' immigration plans

People will have to live in the UK for 10 years before qualifying for settlement and citizenship

56m ago