বিলিভ ইট অর নট

হারানো নীলের খোঁজে

হারানো নীলের খোঁজে
ছবি: সংগৃহীত

ব্রিটিশ সচিব উইলিয়াম গ্লাডস্টোন প্রথম জীবনে ছিলেন শিল্প-সাহিত্যের খুব অনুরাগী। হোমারের ওডিসি নিয়ে মেতে থাকতেন রাত-দিন। ওডিসি যারা পড়েননি, আপাতাত এটুক জেনে রাখুন- ট্রয় নগরীর পতনের পর গ্রিক নায়ক ওডিসিয়াসের গৃহে প্রত্যাবর্তনের কাহিনী নিয়েই ওডিসি।

মহাকাব্যটি বহুবার পড়েছিলেন গ্লাডস্টোন। তারপর সবস্মিয়ে লক্ষ্য করেছিলেন, এখানে আর সব রংয়ের উল্লেখ থাকলেও নীল রংয়ের উল্লেখ কোথাও নেই। ইলিয়াড ও ওডিসি মিলে কালো রং ১৭০ বার ও সাদা রং ১০০ বারের মতো উল্লেখিত; লাল রং ১৩ বার, হলুদ ও সবুজ রং ১০ বারের কম। কিন্তু নীলের উল্লেখ একেবারেই নেই। 

অথচ, ওডিসির কাহিনীর বড় অংশজুড়েই আছে সাগর- কিন্তু সেই সাগরের নীল, ঘন নীল এর উল্লেখ নেই ওডিসির কোথাও। 

গ্লাডস্টোন প্রথমে ভেবেছিলেন হোমার হয়তো বর্ণান্ধ। কিন্তু অন্যান্য চিরায়ত গ্রিক সাহিত্যগুলোতেও উল্লেখ ছিলো না নীলের। 

এরপর ফিলোলজিস্ট লাজারাস গেইজার গবেষণা করে দেখলেন, শুধু গ্রিকরা নয়- প্রাচীন আইসল্যান্ডের গল্পে, পুরনো চীনা মহাকাব্যে, এমনকি মূল হিব্রু বাইবেলেও উল্লেখ নেই নীল রংয়ের!

নীলের রঙের সন্ধানে 

গেইজার আরও গভীরে পৌঁছালেন, লক্ষ করলেন বেশিরভাগ লেখায় কালো ও সাদা রংয়ের কথাই বেশি এসেছে, এরপর লাল, তারপর হলুদ অথবা সবুজ। 

কিন্তু এমন কেন হলো? আসলে সে সময় রংয়ের ভেতর বিভাজন ছিলো অনেক বেশি। হোমার যেমন লিখেছেন ওয়াইনের মতো অন্ধকার সাগর,  কালচে বেগুনি উল কিংবা সবুজ মধুর কথা! সে সময়ে এমন অনেক রংয়ের অস্তিত্ব ছিল যা আজ আর নেই৷ 

তবে এটি আধুনিক যুগেও ঘটেছে। ইংরেজদের বলা ঘন নীল আর হালকা নীল তাদের কাছে যথাক্রমে সিনলি ও গোলুবয়। 

অন্যান্য দেশে রং 

লেখক-গবেষক গাই ড্যুশারের মতে, নীল রং প্রকৃতিতে সব জায়গায় দেখা যায় না। তাই অনেক জায়গায় এই রংয়ের কোনো উল্লেখ ছিল না। প্রাচীনকালে শুধু মিশরীয়দের কাছেই নির্দিষ্টভাবে অস্তিত্ব ছিলো নীল রংয়ের। তাদের লেখায় পাওয়া যায় বস্ত্রশিল্পে ব্যবহৃত নীল রঞ্জকের কথা। সে ক্ষেত্রে স্বাভাবিকভাবেই একটি প্রশ্ন অনেকের মাথায় আসার কথা। আমাদের মাথার ওপর এই যে দিগন্তবিস্তৃত আকাশ- তাকে কি কারোরই চোখে পড়েনি? 

ড্যুশার অনানুষ্ঠানিক এক নিরীক্ষা করেন তার মেয়ের ওপর। মেয়েকে তিনি কখনোই জিজ্ঞাসা করেননি আকাশের রং কী। তারপর মেয়ে একটু বড় হলে, রং চিনতে শিখলে তিনি জানতে চান- বলো তো, এটা কী রং। তার মেয়ে ছিলো নিরুত্তর। 

ড্যুশারের মেয়ে অন্য সমস্ত নীল বস্তু ঠিকই চিহ্নিত করেছিলো, শুধু নিশ্চিত হতে পারেনি আকাশের বিষয়ে। ৪ মাস পর সে বাবাকে জানিয়েছিলো: আকাশের রং সাদা। আরও একমাস পর প্রথমবারের মতো সেই মেয়েটির কাছে মনে হয়েছিলো আকাশটা নীল, তবুও ছিলো মনে দ্বন্দ্ব- নীল নাকি সাদা! তবে আকাশের রং নীল- এটি মেয়েটি পরিষ্কারভাবে নির্ধারণ করতে পারে আরও পরে, প্রথম নীল রং চিনতে শেখার পর ততদিনে পেরিয়েছে ৬ মাস। 

তাই আদিকালের মানুষেরা যে নীল রংটি দেখেননি তা নয়, তবে সেই রং, সেই অনুভূতি ব্যক্ত হয়েছে ভিন্ন কোনো শব্দে- কখনো সাদা, কখনো কালো, কখনো বেগুনি রংয়ের মাধ্যমে।

 

তথ্যসূত্র: রিপলি'স বিলিভ ইট অর নট
গ্রন্থনা: মাহমুদ নেওয়াজ জয় 
 

Comments

The Daily Star  | English
explanations sought from banks for unusual USD rates

Explanations sought from 13 banks for higher dollar rate

BB issued letters on Dec 19 and the deadline for explanation ends today

3h ago