শ্রীলঙ্কায় কর্মবিরতি ঠেকাতে সরকারের জরুরি উদ্যোগ  

তৎকালীন প্রেসিডেন্ট গোতাবায়ার বিরুদ্ধে বিক্ষোভের একটি দৃশ্য। ফাইল ছবি: রয়টার্স
তৎকালীন প্রেসিডেন্ট গোতাবায়ার বিরুদ্ধে বিক্ষোভের একটি দৃশ্য। ফাইল ছবি: রয়টার্স

শ্রীলঙ্কায় বেশ কিছুদিন ধরে চলছে অর্থনৈতিক সংকট। এর মাঝে আন্তর্জাতিক মুদ্রা সংস্থা থেকে ঋণ নেওয়ার শর্ত পূরণে দেশটির সরকার জনগণের ওপর করের বোঝা বাড়িয়েছে। সঙ্গে বেড়েছে বিদ্যুৎ, জ্বালানির দাম। ট্রেড ইউনিয়নের নেতারা বুধবার দেশটিতে প্রতীকী কর্মবিরতির ডাক দিলে সরকার এই উদ্যোগ দমনে বিশেষ ব্যবস্থা নিয়েছে। 

আজ মঙ্গলবার বার্তা সংস্থা এএফপি শ্রীলঙ্কা সরকারের বরাত দিয়ে জানিয়েছে, বেশ কিছু খাকে জরুরি সেবা হিসেবে চিহ্নিত করে পরোক্ষভাবে বিক্ষোভ ও কর্মবিরতি নিষিদ্ধ করা হবে।

এমন সময় এ ঘোষণা এলো, যখন ইউনিয়নের সদস্যরা বুধবার ১ দিনের কর্মবিরতি কর্মসূচির আহ্বান জানিয়েছেন। উচ্চ মাত্রার কর ও বিদ্যুৎ, পানি ও জ্বালানির মতো জরুরি সেবার মূল্য বৃদ্ধির প্রতিবাদে এই কর্মসূচি পালনের আহ্বান জানায় দেশের ইউনিয়নগুলো।  

দেশের প্রেসিডেন্ট রনিল বিক্রমাসিংহের প্রতি জনরোষ বাড়ছে। সাম্প্রতিক সময়ে সরকার আইএমএফের বেলআউট সুবিধা পাওয়ার শর্ত পূরণে ভর্তুকি কমিয়েছে এবং কর বাড়িয়েছে।

প্রেসিডেন্টের কার্যালয় জানিয়েছে, রনিল তার নির্বাহী ক্ষমতা ব্যবহার করে 'জরুরি সেবা' খাতে কর্মবিরতি নিষিদ্ধের নির্দেশ দিয়েছেন। ফলে কার্যত ইউনিয়নের উদ্যোগগুলো বেআইনি হয়ে পড়েছে।

তিনি জানান, 'গণপরিবহন, খাদ্য অথবা পানীয় পরিবহন, কয়লা, তেল, জ্বালানি, সড়ক, রেল বা আকাশযানের রক্ষণাবেক্ষণে নিয়োজিত যেকোনো প্রতিষ্ঠান, বিমানবন্দর, নৌবন্দর বা রেলপথকে জরুরি সেবা হিসেবে তাৎক্ষণিকভাবে চিহ্নিত করা হল'।

জরুরি সেবাদাতাদের কেউ কাজে না গেলে চাকুরি হারানোর ঝুঁকিতে থাকবেন।

ব্যাংক কর্মচারী ও সরকারের হাসপাতাল কর্মীসহ ৪০টিরও বেশি ট্রেড ইউনিয়ন বুধবার কাজে না যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। জানুয়ারি থেকে করের পরিমাণ দ্বিগুণ করার বিরুদ্ধে প্রতীকী প্রতিবাদ হিসেবে এই কর্মসূচি হাতে নেয় ট্রেড ইউনিয়ন।

সরকার আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের ২ দশমিক ৯ বিলিয়ন ডলার ঋণ-চুক্তির শর্ত মেটাতে জ্বালানির খরচ ৩ গুণ বাড়িয়েছে।

এপ্রিলে দেশটি ৪৬ বিলিয়ন ডলার বৈদেশিক ঋণ মেটাতে না পেরে দেউলিয়া হয়ে পড়ে। এরপর শ্রীলঙ্কা আইএমএফের বেলআউট প্যাকেজের আবেদন করে।

আইএমএফের বেশিরভাগ শর্ত পূরণ হলেও সংস্থাটি এখনও চীনের কাছ থেকে আর্থিক নিশ্চয়তার জন্য অপেক্ষা করছে। শ্রীলঙ্কাকে একক দেশ হিসেবে সবচেয়ে বেশি ঋণ দিয়েছে চীন। বেইজিং জানিয়েছে, দক্ষিণ এশিয়ার দ্বীপরাষ্ট্রটিকে নিজের পায়ে দাঁড়াতে সাহায্য করার জন্য তারা আংশিক ঋণ মওকুফ ও পুনঃতফশিল সুবিধা দিতে আগ্রহী।

২০২১ সালে নজিরবিহীন অর্থনৈতিক সঙ্কটে জনরোষ ও দেশব্যাপী বিক্ষোভ দেখা দেয়। যার ফলে ২০২২ এর জুলাই মাসে গোতাবায়া রাজাপাকসের তৎকালীন সরকারের পতন হয়। এরপর ক্ষমতায় আসেন রনিল।

সম্প্রতি রনিল জানিয়েছেন, দেশের অর্থনীতি গত বছর ১১ শতাংশ সংকুচিত হয়েছে এবং দেশটি অন্তত ২০২৬ সাল পর্যন্ত দেউলিয়া থাকবে। 

তিনি আরও জানান, ৯ মার্চে অনুষ্ঠিতব্য স্থানীয় সরকার নির্বাচন আয়োজনের মতো যথেষ্ট তহবিল সরকারের হাতে নেই। তবে এ ঘটনায় অভিযোগ ওঠে, রনিল অর্থনৈতিক সংকটের অজুহাত দেখিয়ে গণতন্ত্রের অবমাননা করছেন।

Comments

The Daily Star  | English

Climate finance: $250b a year needed

COP29 draft deal says rich nations should pay the amount to fight climate change

1h ago