কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে সরকারের ব্যাপক ঋণ, বাড়ছে মূল্যস্ফীতির ঝুঁকি

বাংলাদেশ ব্যাংক

তারল্য সংকটে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো প্রয়োজনীয় তহবিলের জোগান দিতে না পারায়, বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে ঋণ নেওয়া অব্যাহত রেখেছে সরকার।

সরকার ক্রমাগত কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ঋণ নিতে থাকলে মূল্যস্ফীতি আরও বাড়তে পারে। এমনিতেই গত এক বছর ধরে উচ্চ মূল্যস্ফীতির মধ্য দিয়েই যাচ্ছে দেশ।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের ১ জুলাই থেকে ৯ ফেব্রুয়ারির মধ্যে সরকার কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ৫২ হাজার ১২৯ কোটি টাকা ঋণ নিয়েছে। অথচ, ২০২১-২২ অর্থবছরের পুরো সময়ে এই পরিমাণ ছিল ৩১ হাজার ৪০৩ কোটি টাকা।

বিশ্বব্যাংকের ঢাকা অফিসের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ঋণ নেওয়ার অর্থ হলো সাধারণত বাজারে নতুন করে টাকা ছাড়া। এমন হলে সাধারণত মূল্যস্ফীতির ওপর বিরূপ প্রভাব পড়ে।'

আর এভাবে মানুষের হাতে অতিরিক্ত টাকা এলে তা পণ্যের চাহিদা তৈরি করে এবং পণ্যের দামের ওপর এর প্রভাব পড়ে।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য অনুযায়ী, জানুয়ারিতে মূল্যস্ফীতি ৮ দশমিক ৫৭ শতাংশে দাঁড়িয়েছে, যা ডিসেম্বরে ছিল ৮ দশমিক ৭১ শতাংশ। 

জানুয়ারির মূল্যস্ফীতি গত আগস্টের পর থেকে সর্বনিম্ন। আগস্টে মূল্যস্ফীতি ছিল ৯ দশমিক ৫২ শতাংশ, যা গত ১০ বছরের সর্বোচ্চ।

আমদানি ব্যয় মেটাতে ব্যাংকের ঋণপত্র (এলসি) খোলার সুবিধার্থে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ১ জুলাই থেকে ৯ ফেব্রুয়ারির মধ্যে প্রায় সাড়ে ৯ বিলিয়ন ডলার ছেড়েছে। যেখানে পুরো ২০২১-২২ অর্থবছরে এই পরিমাণ ছিল ৭ দশমিক ৬২ বিলিয়ন ডলার।

ডলার কেনায় বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো তারল্য ঘাটতিতে পড়ে। বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকে সরকার ঋণ নিলে এ পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়।

২০২২-২৩ অর্থবছরে সরকার ১ লাখ ৬ হাজার ৩৩৪ কোটি টাকা ব্যাংক ঋণ নেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে।

গত ৭ মাসে বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছ থেকে সরকার যে অর্থ নিয়েছে, তার মধ্যে ১১ হাজার ৯১০ কোটি টাকা বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর ঋণ পরিশোধে ব্যবহৃত হয়েছে। সুতরাং, ৯ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ব্যাংকিং ব্যবস্থা থেকে সরকারের নিট ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৪০ হাজার ২১০ কোটি টাকা।

এ ছাড়া, সরকার বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকে ঋণ নিলে ট্রেজারি বিল ও বন্ডের সুদের হার বেড়ে যেত বলে জানান জাহিদ হোসেন।

২০ বছরের ট্রেজারি বন্ডের সুদের হার জানুয়ারিতে হয়েছে ৮ দশমিক ৮৯ শতাংশ, যা আগের বছর ছিল ৭ দশমিক ৬৭ শতাংশ।

জাহিদ হোসেন বলেন, 'সরকার বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকে ঋণ নিলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পক্ষে ট্রেজারি বন্ডের সুদের হার ৯ শতাংশের নিচে রাখা সম্ভব হবে না।'

তিনি বলেন, 'এমন পরিস্থিতিতে ঋণের সুদের হারের সর্বোচ্চ সীমা ৯ শতাংশ এবং সরকারি সিকিউরিটিজের মধ্যে গড়মিল থাকবে।'

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশ অনুসারে ব্যাংকগুলো ২০২০ সালের এপ্রিল থেকে সুদহারের সর্বোচ্চ সীমা মেনে ঋণ দিচ্ছে।

ব্যাংক থেকে সরকারের ঋণ নেওয়ার ক্ষেত্রে দুর্বল রাজস্ব সংগ্রহকে আংশিকভাবে দায়ী করা যায়।

আমদানি হ্রাস ও সংস্থাগুলোর মুনাফা হ্রাসের মধ্যে শুল্ক ও প্রত্যক্ষ কর কমে যাওয়ায় চলতি অর্থবছরের প্রথমার্ধে কর আদায়ের প্রবৃদ্ধি মারাত্মকভাবে কমেছে।

গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় জুলাই থেকে ডিসেম্বরের মধ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের কর আদায় ১১ শতাংশ বেড়েছে, যা তার আগের বছরের তুলনায় ১৭ শতাংশ কম।

জাহিদ হোসেন বলেন, সাম্প্রতিক মাসগুলোতে বিদেশি অর্থায়ন কমেছে এবং এটি এমন এক সময়ে হলো যখন সরকার লক্ষ্যমাত্রার সঙ্গে সঙ্গতি রেখে ব্যয় কমাতে ব্যর্থ হয়েছে। এর ফলে, কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে প্রচুর পরিমাণে ঋণ নিতে সরকার বাধ্য হয়েছে।

মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ মাহবুবুর রহমান বলেন, 'কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে সরকারি ঋণ নেওয়াকে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর জন্য ইতিবাচক হিসেবে বিবেচনা করা যেতে পারে। কারণ, সরকার বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকে ঋণ নিলে তারা তারল্য সংকটে পড়বে।'

সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের বিশিষ্ট ফেলো মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, 'বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকে ঋণ কম নেওয়া তাদের জন্য ভালো হলেও এটা মূল্যস্ফীতি বাড়িয়ে দিতে পারে।'

অর্থবছরের প্রথমার্ধে সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগের পরিমাণ অনেক বেশি পরিমাণে কমে যাওয়ার কারণেও সরকারকে তহবিলের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে যেতে হয়েছে।

জুলাই থেকে ডিসেম্বরের মধ্যে সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগের পরিমাণ ছিল ৩ হাজার ১০৭ কোটি টাকা, যা আগের বছরের একই সময়ে ছিল ৯ হাজার ৫৯০ কোটি টাকা।

Comments

The Daily Star  | English

UN chief Guterres meets Prof Yunus in Davos

UAE invites Yunus to attend World Governments Summit in Dubai

52m ago