২০২৩ সালে আলোচিত ৫ সুপারকার
শক্তিশালী ইঞ্জিন, দ্রুত এক্সিলারেশন, চোখ ধাঁধানো একেকটা ডিজাইন আর রঙ। চোখের পলক ফেলার আগেই ০ থেকে ৬০ কিংবা ১০০ মাইল গতি তুলে ফেলা গাড়িগুলো পরিচিত সুপারকার হিসেবে।
বিশ্বজুড়ে সুপারকার ভক্তরা প্রতিবছরের শুরুতে প্রতীক্ষায় থাকেন ব্র্যান্ডগুলো নতুন কোন কোন গাড়ি নিয়ে আসবে, গতির ঝড় তুলে দাপিয়ে বেড়াবে রাজপথ।
চলতি বছরও আলাদা নয়, অধীর আগ্রহে তারা অপেক্ষা করছেন নতুন কোন এক গতি-দানবের, যেটি হয়তো ভেঙে ফেলতে পারে আগের কোন রেকর্ড, গড়তে পারে নতুন ইতিহাস। আজকের আলোচনায় থাকছে চলতি বছরের সবচেয়ে আকাঙ্ক্ষিত ৫টি সুপার কার।
পাগানি ইউটোপিয়া
পাগানি জোন্ডা এবং পাগানি ওয়াইরা গাড়ি দুটির উত্তরসূরি হিসেবে আসছে ইউটোপিয়া নামের আরেকটি সুপারকার। গাড়িটিতে আছে মার্সিডিজ বেঞ্জ-এএমজির টুইন-টার্বোচার্জড ভি১২ ইঞ্জিন, যেটি ৬ হাজার আরপিএমে উৎপন্ন করতে পারবে সর্বোচ্চ ৮৫২ হর্স-পাওয়ার শক্তি।
গাড়িটি ২ হাজার ৮০০ থেকে ৫ হাজার ৯০০ আরপিএমে রেভ করার সময় সর্বোচ্চ ১ হাজার ১০০ নিউটন মিটার অফ টর্ক পাওয়া যাবে। মাত্র ৩ দশমিক ১ সেকেন্ডের মধ্যে এই গাড়ি ০ থেকে ১০০ কিলোমিটার প্রতি ঘণ্টা গতি তুলতে সক্ষম। সর্বোচ্চ গতি তুলতে পারবে ৩৫৪ কিলোমিটার/ঘণ্টা পর্যন্ত। তবে, যে সংখ্যাটি সবাইকে অবাক করবে, তা এর ওজন।
গাড়িটি তৈরিতে কার্বন ফাইবার ব্যবহার করায় এটির ওজন মাত্র ১ হাজার ২৮০ কেজি। সামনে ও পেছনে আরও পরিশীলিত স্প্লিটার্স ও এক্স-ট্র্যাক্টর থাকায় ইউটোপিয়া এখন আরও বেশি এরোডায়নামিক হবে। সেই সঙ্গে থাকছে ইলেক্ট্রিক্যালি নিয়ন্ত্রিত সাসপেনশন, যা গাড়িটিকে আরও নিচু হতে সাহায্য করবে। তেমন কোনো স্কুপ বা স্পয়লার না থাকায় পাগানি ইউটোপিয়া দেখতে ছিমছাম, কিন্তু অভিজাত একটি সুপারকার।
গাড়িটির মূল্য ২ দশমিক ১৯ মিলিয়ন ডলার, যা বর্তমান বাজার দর অনুযায়ী ২৩ থেকে ২৪ কোটি টাকার মতো। তবে, টাকা থাকলেই যে এমন একটি গাড়ির মালিক হওয়া যাবে তা না। এই সুপারকারটির মালিক হতে পারবেন মাত্র ৯৯ জন ভাগ্যবান, কারণ গাড়িটির মাত্র ৯৯টি ইউনিট তৈরি হবে। সবগুলো ইউনিটই এরমধ্যে বিক্রি হয়ে গেছে।
মাজারাটি গ্র্যানটুরিজমো ফোলগোরে
গাড়িটিকে প্রথম দেখায় সুপারকার মনে নাও হতে পারে। কিন্তু ছিমছাম চেহারার নিচে যে একটা আস্ত গতিদানব লুকিয়ে থাকতে পারে, মাজারাটির এই গাড়িটির পারফরম্যান্স না দেখলে বিশ্বাস করা কঠিন। মজার ব্যাপার, গাড়িটি সম্পূর্ণ ইলেকট্রিক। তাই বলে গাড়িটির ক্ষমতা কমেনি বিন্দুমাত্রও।
ফর্মুলা-ই থেকে নেওয়া সিলিকন কার্বাইড ইনভার্টারের মতো প্রযুক্তি ব্যবহার করায় গাড়িটি উৎপন্ন করে ১ হাজার ৩৫০ নিউটন মিটার অফ টর্ক ও ৫৬০ কিলোওয়াট ক্ষমতা, যা প্রায় ৭৫১ হর্স-পাওয়ারের সমান। এই গাড়িটি মাত্র ২ দশমিক ৭ সেকেন্ডের মধ্যে ০ থেকে ঘণ্টায় ১০০ কিলোমিটার গতি তুলতে পারে। ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ৩২৫ কিলোমিটার গতি তুলতেও সক্ষম এই ইলেকট্রিক গাড়ি।
ইলেকট্রিক গাড়ির ক্ষেত্রে অনেকেরই চিন্তা থাকে চার্জের বিষয়ে। সেখানেও মাজারাটি এনেছে চমক, গ্র্যানটুরিজমো ফোলগোরে একবার সম্পূর্ণ চার্জে যেতে পারবে ৪৫০ কিলোমিটারের মতো। যদি দরকার হয়, তাহলে মাত্র ৫ মিনিটেই ১০০ কিলোমিটার যাওয়ার মতো চার্জ দেওয়ার ব্যবস্থাও রয়েছে গাড়িটিতে।
ল্যাম্বর-গিনি হুরাকান স্টেরাটো
সুপারকারের জগতে অত্যন্ত পরিচিত ও জনপ্রিয় ব্র্যান্ড ল্যাম্বর-গিনিকে নতুন করে চেনানোর কিছু নেই। নিজেদের ট্রেডমার্ক ডিজাইন আর ইঞ্জিন পারফরম্যান্সের কারণে সুপারকার বললেই ল্যাম্বরগিনির কোনো একটা গাড়ির কথা মাথায় ভেসে উঠবে। তবে হুরাকান স্টেরাটো অন্যদের থেকে বেশ কয়েকটি কারণে ব্যতিক্রম। প্রথমত, এই গাড়িটির মাধ্যমে ল্যাম্বর-গিনি তাদের হুরাকান সিরিজের ইতি টানছে। তারপর, স্টেরাটো বানানো হচ্ছে অফরোডিং, অর্থাৎ ধুলোবালি-যুক্ত রাস্তায় চালানোর কথা মাথায় রেখে।
তাই বলে গাড়িটির ক্ষমতায় কমতি রাখা হয়নি। স্টেরাটোতে থাকছে ৫ দশমিক ২ লিটার ভি-১০ এঞ্জিন, যা ৬ হাজার ৫০০ আরপিএমে ৬১০ হর্স-পাওয়ার উৎপন্ন করতে পারবে। ঘণ্টায় ০ থেকে ১০০ কিলোমিটার গতি তুলতে গাড়িটি নেবে মাত্র ৩ দশমিক ৪ সেকেন্ড, সর্বোচ্চ গতি তুলতে পারবে ঘণ্টায় ২৬০ কিলোমিটার।
স্টেরাটোর আরেকটি বিশেষত্ব হচ্ছে, এই গাড়িটি দিয়েই শেষ হচ্ছে ল্যাম্বর-গিনি ন্যাচারালই এ-স্পিরিটেড ইঞ্জিনের যুগ, এরপর থেকে ব্র্যান্ডটি শুধুমাত্র ইলেকট্রিক ও হাইব্রিড ইঞ্জিনযুক্ত গাড়ি তৈরি করবে।
কেটিএম এক্স-বো জিটি-এক্সআর
কেটিএম। শুনলে প্রথমেই মাথায় আসে কমলা ছোপের স্পোর্টস কিংবা ডার্ট বাইকের কথা। কিন্তু সুপারকারের আলাপে এই ব্র্যান্ড আনার কারণ? কারণ হচ্ছে, কেটিএমের সুপারকারটির ফিচারগুলো। কেটিএম এই গাড়িতে ফিচারের কোনো অভাব রাখেনি। অডি আরএস৩-এর ইঞ্জিন রাখা হয়েছে গাড়িটিতে, যা ৪৯৩ হর্স-পাওয়ার ও ৫৮১ নিউটনমিটার অফ টর্ক উৎপন্ন করতে পারে। ঘণ্টায় ০ থেকে ১০০ কিলোমিটার গতি তুলতে গাড়িটি সময় নেবে মাত্র ৩ দশমিক ৪ সেকেন্ড, যা কি না উপরে বলা ল্যাম্বর-গিনি হুরাকান স্টেরাটোর সমান!
এক্স-বো জিটি-এক্সআরের যে দিকটি অবশ্যই সবার নজর কাড়বে, তা হচ্ছে গাড়িটিতে ঢোকার উপায়। অন্যান্য সুপারকারগুলোর মতো শুধু দরজা নয়, বরং যুদ্ধ বিমানের ক্যানোপির মতো পুরো উইন্ড-শিল্ড ও ছাদ উঠে যাবে, যা দেখতে বেশ আকর্ষণীয়। সেই সাথে থাকছে ৯৬ লিটারের বিশাল ফুয়েল ট্যাঙ্ক, তাই বারবার তেল নেওয়ার ঝামেলাও কমে আসবে অনেকাংশে।
বুগাটি মিস্ট্রাল
সুপারকার দুনিয়ায় নিজেদের কিংবদন্তীর পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া আরেক ব্র্যান্ডের নাম হচ্ছে বুগাটি। নতুন নতুন দেখানো ডিজাইনের সুপারকার নিয়ে আসায় বুগাটি অটোমেকারদের মধ্যে বিশেষ এক স্থান করে নিয়েছে। ২০২৩ সালে বুগাটি ডাব্লিউ১৬ মিস্ট্রালই একমাত্র ছাদ-খোলা সুপারকার। আর ছাদ-খোলা রোডসটার হিসেবে মিস্ট্রাল বাগিয়ে নিয়েছে সবচেয়ে দ্রুতগতি সম্পন্ন রোডস্টার গাড়ির রেকর্ডটি।
বুগাটি মিস্ট্রালে থাকছে কোয়াডচার্জড ডাব্লিউ১৬ ইঞ্জিন যা ৬ হাজার ৭০০ আরপিএমে ১ হাজার ৫৭৮ হর্স-পাওয়ার উৎপন্ন করতে পারবে! এই ইঞ্জিন ২ হাজার থেকে ৬ হাজার আরপিএমে গাড়িটিকে দেবে ১ হাজার ৬০০ নিউটনমিটার অফ টর্ক!
প্রচুর টর্কের কারণে অত্যন্ত দ্রুততার সঙ্গে মাত্র আড়াই সেকেন্ডেই ঘণ্টায় ০ থেকে ১০০ কিলোমিটার গতি ছুঁয়ে ফেলতে সক্ষম গাড়িটি। সর্বোচ্চ গতি তুলতে পারবে ঘণ্টায় ৪২০ কিলোমিটার। প্রতিটি ইউনিটের দাম ৫ মিলিয়ন ডলার ধরা বুগাটি মিস্ট্রাল তৈরি করা হবে মাত্র ৯৯টি, যার প্রত্যেকটি এরই মধ্যে বিক্রি হয়ে গেছে।
তথ্যসূত্র: টপগিয়ার, ড্রাইভিং, অটোএক্সপ্রেস, ইভো
Comments