গাড়ির এসির ঠান্ডা বাড়াবেন যেভাবে

উষ্ণ আবহাওয়ায় গাড়ির এসি প্রায়ই ঠিকমতো কাজ করে না। ছবি: সংগৃহীত প্রতিকী ছবি
উষ্ণ আবহাওয়ায় গাড়ির এসি প্রায়ই ঠিকমতো কাজ করে না। ছবি: সংগৃহীত প্রতিকী ছবি

তীব্র গরমের দিনে গাড়ির এয়ার-কন্ডিশনার (এসি) এনে দেয় স্বস্তির পরশ। প্রচন্ড গরমে সারাক্ষণ এসি চালিয়ে রাখলে জ্বালানি খরচ যেমন বাড়ে, তেমন এসিও সব সময় ঠিকমতো গাড়িকে ঠান্ডা করতে পারে না। 

কিছু সহজ প্রক্রিয়া অনুসরণ করে গাড়ির জ্বালানি খরচ কমানোর পাশাপাশি এসির উপযোগিতাও বাড়ানো সম্ভব। 

যুক্তরাষ্ট্রের পরিবেশ সংরক্ষণ সংস্থার (ইপিএ) মতে তীব্র গরমের সময় গাড়িতে এসির ব্যবহার প্রায় ২৫ শতাংশ পর্যন্ত জ্বালানি ক্ষয় বাড়িয়ে দেয়। বৈদ্যুতিক এবং হাইব্রিড গাড়ির ক্ষেত্রেও এটি ব্যাটারির আয়ু কমিয়ে আনে।

গাড়ির এসি কীভাবে কাজ করে

কারণ বুঝতে হলে জানতে হবে গাড়ির এসি কীভাবে কাজ করে। এটি প্রথমে বাতাস টেনে নিয়ে তা থেকে তাপ এবং আর্দ্রতা বের করে আনে। এরপর এই ঠান্ডা বাতাস গাড়ির ভেতরে পৌঁছে দেয়। এই পুরো কাজটি হয় কমপ্রেসর নামের একটি যন্ত্রের মাধ্যমে। এই যন্ত্র গাড়ির ইঞ্জিন থেকে কাজ করার শক্তি নেয়। তাই যখনই আপনি এসি ব্যবহার করেন, গাড়ির ইঞ্জিনকেও তখন আরও বেশি কাজ করতে হয়। ফলে বেড়ে যায় গাড়ির জ্বালানি খরচ।

তবে ভালো খবর হলো কিছু সহজ কৌশল কাজে লাগিয়ে এসির মাধ্যমে গাড়িকে দ্রুত ঠান্ডা করা সম্ভব। আর এতে জ্বালানি খরচেও হবে বেশ খানিকটা সাশ্রয় ।

ছায়াযুক্ত জায়গায় পার্কিং

গাড়ি পার্ক করার সময় একটি ঠান্ডা বা ছায়াযুক্ত জায়গা বেছে নেওয়া উচিত। একটি গাড়ির এয়ারকন্ডিশন ব্যবস্থা অভ্যন্তরের তাপমাত্রা গড়ে প্রায় ৪০ ডিগ্রি কমাতে পারে। ছায়ার নিচে পার্ক করা হলে গাড়ির অভ্যন্তর আগে থেকেই তুলনামূলক কম গরম থাকবে। তাই ভেতরের বাতাস ঠান্ডা করতে এসিকে কম কাজ করতে হবে। এছাড়াও গাড়ির ভেতরের বাতাস বেশি গরম থাকলে এসি চালু করার আগে জানালা খুলে দিয়ে গরম বাতাস বের হয়ে যেতে দেওয়া উচিত।

পুন:সঞ্চালন ব্যবস্থা চালু রাখা

গরমের দিন গাড়ির এসি ঠিকমতো কাজ না করলে যাত্রীরা ভোগান্তিতে পড়েন। ছবি: সংগৃহীত
গরমের দিন গাড়ির এসি ঠিকমতো কাজ না করলে যাত্রীরা ভোগান্তিতে পড়েন। ছবি: সংগৃহীত

আধুনিক গাড়িগুলোতে এসি রিসারকুলেশন বা পুনঃসঞ্চালন ব্যবস্থা সচল রাখা যায়। পুনঃসঞ্চালনের সুবিধা হল এতে এসি শুধুমাত্র গাড়ির ভেতর থেকে বাতাস টেনে নিয়ে তা ঠান্ডা করে। অর্থাৎ বাইরে তীব্র গরম থাকলেও এসিটি শুধুমাত্র গাড়ির ভেতরকার তুলনামূলক শীতল বাতাসকে ঠান্ডা করে আবার গাড়িতে পৌঁছে দেবে। এতে করে এসির তাপমাত্রা ৭২ ডিগ্রি ফারেনহাইটে নির্ধারণ করা থাকলে গাড়ির ভেতরের তাপমাত্রা ৭২ ডিগ্রিতে পৌঁছানোর পরে কমপ্রেসর বন্ধ হয়ে যাবে। এরপর এসি, গাড়ির ঠান্ডা বাতাসকেই পুনঃসঞ্চালন করবে। এতে করে গাড়ির ইঞ্জিনের ওপর চাপ কমবে, জ্বালানিও সঞ্চয় হবে।

যাত্রার শুরুর আগে এসি চালিয়ে না রাখা

অনেকেই যাত্রার আগে এসি ছেড়ে রেখে গাড়ির ভেতরটা ঠান্ডা করে নিতে পছন্দ করেন । কিন্তু যখন গাড়ি চলছে না, তখন এসি চালিয়ে রাখা অকার্যকর। কেননা, বাতাস ভালো চলাচল আছে এমন পরিবেশে এসি সবচেয়ে ভালো কাজ করে। আর তাই গাড়ি চলা শুরুর পরেই এসি চালু করা উচিত। এতে করে বাতাস বেশি দ্রুত ঠান্ডা হবে এবং সাশ্রয় হবে জ্বালানির। বৈদ্যুতিক বা হাইব্রিড গাড়িতেও চলার আগে থেকে এসি ছেড়ে রাখা ব্যাটারির আয়ু কমিয়ে দেয়। তাই উচিত হলো এই অনুশীলন এড়িয়ে চলা অথবা গাড়ি চার্জরত অবস্থায় এসি চালু করা।

নিয়মিত এয়ার ফিল্টার পরিবর্তন করা

এসির বাতাস নির্গমনপথ হতে বেরিয়ে আসা বাতাস থেকে ময়লা এবং ধুলো সরিয়ে দেওয়ার কাজ করে এয়ার ফিল্টার। ফিল্টার নোংরা হয়ে গেলে তখন এটি বাতাস চলাচল সীমাবদ্ধ করে। গাড়ির এয়ার ফিল্টার কতদিন পরপর পরিবর্তন করা প্রয়োজন তা গাড়ির নির্দেশিকা বইয়ে উল্লেখ করা থাকে। সেটা হতে পারে প্রতি বছর বা দুই বছর বা প্রতি ১৫-২০ হাজার মাইল অন্তর। এই সময়সূচী অনুযায়ী নিয়মিত গাড়ির এয়ার ফিল্টার পরিবর্তন করা হলে এসির কার্যকারিতা থাকবে অক্ষুণ্ণ।

ক্ষয়জনিত ছিদ্র উপেক্ষা না করা

অনেক সময় এসির কোন যন্ত্রাংশে ক্ষয় বা ছিদ্র থাকলে এসির রেফ্রিজারেন্ট কমে যায়। এই রেফ্রিজারেন্ট হল একটি রাসায়নিক যৌগ যা বাতাসকে ঠান্ডা করতে এসিতে ব্যবহৃত হয়।

রেফ্রিজারেন্ট কমে গেলে এসি থেকে গরম বাতাস বের হওয়া বা দেরিতে বাতাস শীতল হওয়ার মতো নানান সমস্যা দেখা যায়। এ অবস্থায় অনেকে এসিতে অতিরিক্ত রেফ্রিজারেন্ট যোগ করেন যা রিচার্জিং বলে পরিচিত। কিন্তু বিশেষজ্ঞদের মতে এই রিচার্জিং প্রক্রিয়া গাড়ির উপকারের চেয়ে ক্ষতিই করে বেশি। গাড়িতে রেফ্রিজারেন্ট কমে যাবার সমস্যা দেখা দিলে বুঝতে হবে এসির কোন যন্ত্রাংশে কোথাও ক্ষয়জনিত ছিদ্র বা ত্রুটি আছে। এই ত্রুটি মেরামত না করলে আসল সমস্যার সমাধান করা যাবে না। আর তাই পেশাদার কোন কারিগরের পরামর্শ নিয়ে এই ত্রুটি যত দ্রুত সম্ভব মেরামত করে নেওয়া প্রয়োজন।

তথ্যসূত্র: GEICO Living

অনুবাদ: নাফিসা ইসলাম মেঘা

Comments

The Daily Star  | English
The Indian media and Bangladesh-India relations

The Indian media and Bangladesh-India relations

The bilateral relationship must be based on a "win-win" policy, rooted in mutual respect, non-hegemony, and the pursuit of shared prosperity and deeper understanding.

6h ago