আদানির বিদ্যুৎ কিনতে বাংলাদেশকে চাপ দেওয়া হয়েছে? প্রশ্ন কংগ্রেসের

নরেন্দ্র মোদি ও গৌতম আদানি। ছবি: সংগৃহীত

ঝাড়খণ্ডে আদানি গ্রুপের গোড্ডা পাওয়ার প্ল্যান্ট থেকে বিদ্যুৎ কিনতে মোদি সরকার বাংলাদেশকে চাপ দিয়েছে কি না, জানতে চেয়েছে ভারতের প্রধান বিরোধী দল কংগ্রেস।

আদানি গ্রুপ ইস্যুতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির কাছে কংগ্রেসের 'হাম আদানি কে হ্যায় কৌন' শীর্ষক ধারাবাহিক প্রশ্ন পর্বের নবম দিনে আজ মঙ্গলবার এ প্রশ্ন তোলা হয়।

এ পর্বে আদানির গোড্ডা বিদ্যুৎকেন্দ্র নিয়ে প্রশ্ন করা হয়েছে এবং সেখান থেকে বিদ্যুৎ কেনার ক্ষেত্রে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে নরেন্দ্র মোদি চাপ দিয়েছেন কি না, তা জানতে চেয়েছে কংগ্রেস।

গোড্ডা পাওয়ার প্ল্যান্ট থেকে বিদ্যুৎ কেনার চুক্তি 'আদানি পাওয়ারের জন্য খুবই লাভজনক এবং বাংলাদেশের জন্য লোকসান' উল্লেখ করে চুক্তির শর্ত মেনে নিতে নরেন্দ্র মোদি বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী 'শেখ হাসিনাকে চাপ দিতে পারে' বলে মন্তব্য করেছে কংগ্রেস।

দলটি বলছে, ২০১০ সালে কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন সরকার বাংলাদেশের বাগেরহাটে একটি ১,৩২০ মেগাওয়াট তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের জন্য রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ন্যাশনাল থার্মাল পাওয়ার করপোরেশনের পক্ষে সমঝোতা স্মারকে সই করেছিল।

কংগ্রেসের অভিযোগ, বিজেপি সরকার ক্ষমতায় আসার পর তার 'ডাবল এ' বন্ধুদের অর্থাৎ আদানি ও আম্বানিকে সুবিধা দিতে ঘোষণা দেয় যে আদানি পাওয়ার এবং রিলায়েন্স পাওয়ার (আম্বানি) বাংলাদেশে বিদ্যুৎ সরবরাহের জন্য তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ করবে।

মোদির উদ্দেশে দলটির প্রথম প্রশ্ন, 'আদানির গোড্ডা পাওয়ার প্ল্যান্ট থেকে বাংলাদেশে সরবরাহ করা বিদ্যুতের দাম ভারতের সরকারি তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের চেয়ে অনেক বেশি। তাহলে এটা কি সত্য যে বাংলাদেশের জন্য লোকসানের হলেও, আদানিকে ব্যাপক সুবিধা পাইয়ে দিতে আপনি শেখ হাসিনাকে চাপ দিয়েছেন।'

'প্রতিবেশী দেশের অর্থে আপনার বন্ধুদের লাভবান করা কি ভারতের পররাষ্ট্র নীতির সঙ্গে মানানসই?'

কংগ্রেস বলেছে, ঝাড়খণ্ড রাজ্য সরকার ২০১৬ সালে দাবি করেছিল যে ওই এলাকার পাওয়ার প্ল্যান্টের উত্পাদিত বিদ্যুতের শতকরা ২৫ ভাগ ভর্তুকি দিয়ে রাজ্যের ভেতরে সরবরাহ করতে হবে। আদানি পাওয়ারের সঙ্গে ২০১৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে সই করা প্রাথমিক চুক্তিতে এমন বলা আছে। কিন্তু একই বছরের অক্টোবরে আদানিকে সুবিধা দিতে হঠাৎ করে ওই চুক্তি সংশোধন করা হয়।

দ্বিতীয় প্রশ্নে মোদির কাছে জানতে চাওয়া হয়, 'এটা কি ঠিক যে চুক্তি সংশোধন করায় সরকারি অডিটের তথ্য অনুযায়ী ঝাড়খণ্ডে ২৫ বছরে ৭ হাজার ৪১০ কোটি পাউন্ড অতিরিক্ত খরচ হবে? রাজ্যের অডিটর জেনারেলের অফিস কি ২০১৭ সালের ১২ মে লিখিতভাবে জানায়নি যে আদানির সঙ্গে এ চুক্তি কোম্পানিটিকে 'অযাচিত সুবিধা' দেবে? রাজ্য সরকারের ওই পুরোনো নীতি থেকে ঝাড়খণ্ডের তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী রঘুবর দাসকে ফিরিয়ে আনতে আপনার ভূমিকা কী ছিল?'

তৃতীয় প্রশ্নটিও ঝাড়খণ্ডের গোড্ডা পাওয়ার প্ল্যান্ট সম্পর্কিত। কংগ্রেস অভিযোগ করেছে, ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারিতে আদানি পাওয়ার সুবিধা পেতে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল হিসেবে প্ল্যান্ট স্থাপনের আবেদন করেছিল। কিন্তু বাণিজ্য মন্ত্রণালয় তা প্রত্যাখ্যান করে। কারণ স্বতন্ত্র বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপন বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার নীতির সঙ্গে সাংঘর্ষিক।

পরের বছর মন্ত্রণালয় তার নীতিমালা পরিবর্তন করে এবং ২০১৯ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল বোর্ড আদানি পাওয়ারের আবেদনের অনুমোদন দেয়।

কংগ্রেসের তৃতীয় প্রশ্ন, 'এই নীতি পরিবর্তনে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের ভূমিকা কী ছিল, যেখানে কয়লা আমদানির শুল্ক ছাড় দিয়ে প্রতি বছর আদানি পাওয়ারকে ৩০০ কোটি টাকার সুবিধা দেওয়া হয়?'

আদানি পাওয়ারের সঙ্গে বাংলাদেশের এ চুক্তি নিয়ে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এখনো কোনো মন্তব্য করেনি।

সম্প্রতি জানিতে চাইলে দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র অরিন্দম বাগচি আদানি পাওয়ার ও বাংলাদেশের মধ্যে চুক্তির বিষয়ে ভারত সরকারের কোনো ভূমিকা নেই বলে উল্লেখ করেন।

তিনি বলেন, 'আমরা এতে জড়িত নই।'

শিল্পপতি গৌতম আদানি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির 'ঘনিষ্ঠ' উল্লেখ করে আদানি ইস্যুতে চাপ বাড়াতে প্রধানমন্ত্রীর কাছে প্রতিদিন তিনটি করে প্রশ্নের সিরিজ পাঠাচ্ছে বিরোধী দল কংগ্রেস। আর এই সিরিজের নাম দেওয়া হয়েছে 'হাম আদানিকে হ্যায় কৌন'।

 

Comments

The Daily Star  | English

US retailers lean on suppliers to absorb tariffs

Rather than absorbing the cost or immediately passing it on to consumers, many US apparel retailers and brands have turned to their suppliers in Bangladesh, demanding they share the pain

8h ago