শেখ হাসিনাকে উসকানিমূলক বক্তব্য দেওয়া থেকে বিরত রাখতে ব্যবস্থা নিন: মোদিকে ড. ইউনূস

বিমসটেক সম্মেলনের ফাঁকে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। ছবি: সংগৃহীত

ভারতে অবস্থানরত শেখ হাসিনাকে উসকানিমূলক বক্তব্য দেওয়া থেকে বিরত রাখার জন্য ব্যবস্থা নিতে নরেন্দ্র মোদিকে অনুরোধ জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস।

আজ শুক্রবার থাইল্যান্ডের ব্যাংককে ষষ্ঠ বিমসটেক সম্মেলনের ফাঁকে ভারতের প্রধানমন্ত্রী মোদির সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে এ অনুরোধ জানান ড. মুহাম্মদ ইউনূস।

গত আগস্টে ড. ইউনূস দায়িত্ব গ্রহণের পর মোদির সঙ্গে এটাই তার প্রথম বৈঠক।

প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং জানায়, দুই নেতার মধ্যে ৪০ মিনিটের এ বৈঠক ছিল খুবই আন্তরিক ও গঠনমূলক।

বৈঠকে ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, 'ভারতের সঙ্গে সম্পর্ককে যথেষ্ট মূল্য দেয় বাংলাদেশ। দুই দেশের মধ্যে গভীর বন্ধুত্ব পারস্পরিক ইতিহাস, ভৌগোলিক অবস্থান ও সাংস্কৃতিক সম্প্রীতির ওপর প্রতিষ্ঠিত। ১৯৭১ সালে আমাদের সবচেয়ে কঠিন সময়ে ভারতের সরকার ও জনগণের অটল সমর্থনের জন্য আমরা কৃতজ্ঞ।'

দুই দেশের সম্পর্কের মধ্যকার চ্যালেঞ্জের কথা উল্লেখ করে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, 'আমরা দুই দেশের জনগণের কল্যাণে সম্পর্ককে সঠিক পথে নিয়ে যেতে একসঙ্গে কাজ করতে চাই।'

বিমসটেকের চেয়ারম্যান হিসেবে অধ্যাপক ইউনূস সদস্য রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তির পক্ষে ভারতের সমর্থন চান।

তিনি গঙ্গার পানি চুক্তি নবায়ন এবং তিস্তার পানিবণ্টন চুক্তি করার জন্যও আলোচনার আহ্বান জানান।

ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে বিমসটেকের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব গ্রহণের জন্য অভিনন্দন এবং ঈদুল ফিতর উপলক্ষে শুভেচ্ছা জানান নরেন্দ্র মোদি।

ভারতের প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'নয়াদিল্লি সবসময় ঢাকার সঙ্গে সম্পর্ককে "সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার" দিয়েছে। দুই প্রতিবেশীর ইতিহাস ওতপ্রোতভাবে জড়িত এবং বাংলাদেশের জন্মের সঙ্গে সম্পর্কিত।'

প্রধানমন্ত্রী মোদি অধ্যাপক ইউনূসের বিশ্বব্যাপী মর্যাদার কথা স্মরণ করে বলেন, 'ভারত সর্বদা একটি প্রগতিশীল, গণতান্ত্রিক ও অন্তর্ভুক্তিমূলক বাংলাদেশকে সমর্থন করে।'

তিনি বলেন, 'ভারত বাংলাদেশের কোনো নির্দিষ্ট দলকে সমর্থন করে না। আমাদের সম্পর্ক জনগণের সঙ্গে জনগণের।'

অধ্যাপক ইউনূস মোদির কাছে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে প্রত্যর্পণে বাংলাদেশের অনুরোধের অগ্রগতি সম্পর্কে জানতে চান।

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, 'তিনি (শেখ হাসিনা) বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে উসকানিমূলক মন্তব্য করে বাংলাদেশের পরিস্থিতি অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করছেন, যা ভারতে তার আশ্রয়ের সুযোগের অপব্যবহার।'

'তিনি বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের বিরুদ্ধে ধারাবাহিকভাবে মিথ্যা ও উসকানিমূলক অভিযোগ করে আসছেন,' বলেন ড. ইউনূস।

মোদিকে ড. ইউনূস বলেন, 'আমরা ভারত সরকারকে অনুরোধ করছি, তাকে (হাসিনা) আপনাদের দেশে থাকাকালে এ ধরনের উসকানিমূলক বক্তব্য দেওয়া থেকে বিরত রাখতে যথাযথ ব্যবস্থা নিন।'

বৈঠকে অধ্যাপক ইউনূস জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধ সংক্রান্ত  জাতিসংঘের ফ্যাক্ট-ফাইন্ডিং রিপোর্টেরও উল্লেখ করেন। 

তিনি বলেন, 'রিপোর্টে বলা হয়েছে যে, আন্দোলন চলাকালে প্রায় ১ হাজার ৪০০ জন নিহত হয়েছেন, যাদের মধ্যে প্রায় ১৩ শতাংশ শিশু। প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে যে, বিক্ষোভ চলাকালে মানবতাবিরোধী অপরাধ, যেমন হত্যা, নির্যাতন ও অন্যান্য অপরাধ সংঘটিত হয়েছে।'

জাতিসংঘের রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে যে, তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী নিজেই নিরাপত্তা বাহিনীকে বিক্ষোভকারীদের হত্যার নির্দেশ দিয়েছিলেন এবং বিশেষভাবে 'নেতৃস্থানীয়দের গ্রেপ্তার, হত্যা এবং তাদের মরদেহ লুকিয়ে রাখার' নির্দেশ দিয়েছিলেন।

জবাবে ভারতের প্রধানমন্ত্রী অবশ্য শেখ হাসিনার মন্তব্যকে ঘিরে উত্তেজনার জন্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমকে দায়ী করেন। তিনি বলেন, 'ভারতের সম্পর্ক দেশের সঙ্গে, কোনো ব্যক্তি বা রাজনৈতিক দলের সঙ্গে নয়।'

অধ্যাপক ইউনূস এসময় সীমান্ত হত্যার বিষয়টিও উত্থাপন করেন এবং জোর দিয়ে বলেন যে, 'সীমান্তে প্রাণহানির সংখ্যা কমাতে একসঙ্গে কাজ করলে শুধু অনেক পরিবারই বড় ধরনের যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পাবে না বরং আস্থা ও আত্মবিশ্বাস তৈরি করতে এবং ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে সম্পর্ক আরও দৃঢ় করতে সাহায্য করবে।'

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, 'হত্যাকাণ্ড ঘটলে আমি কষ্ট পাই। ভারতকে এই ঘটনাগুলো ঠেকানোর "উপায়" খুঁজে বের করার আহ্বান জানাই।'

জবাবে মোদি বলেন, 'ভারতীয় সীমান্তরক্ষীরা আত্মরক্ষার জন্য গুলি চালায় এবং ভারতীয় ভূখণ্ডে প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে।'

তবে, এ বিষয়ে একসঙ্গে কাজ করার প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেন দুই নেতা।

বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের অবস্থা নিয়ে নরেন্দ্র মোদির উদ্বেগের জবাবে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, 'বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের ওপর হামলার খবরগুলো অতিরঞ্জিত এবং এর "বেশিরভাগই ভুয়া" খবর।' 

এ বিষয়ে প্রকৃত খবর নিতে তিনি নরেন্দ্র মোদিকে বাংলাদেশে সাংবাদিক পাঠানোর অনুরোধ করেন, যেন তারা এখানে এসে 'কথিত এসব হামলার" অনুসন্ধান করতে পারেন।

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, তিনি দেশে ধর্মীয় ও লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতার প্রতিটি ঘটনা পর্যবেক্ষণের জন্য একটি কার্যকর ব্যবস্থা তৈরি করেছেন এবং তার সরকার এ ধরনের ঘটনা বন্ধে কার্যকর ব্যবস্থা নিচ্ছে।

উভয় নেতা একে অপরের সুস্বাস্থ্য ও মঙ্গল কামনা করে বৈঠক শেষ করেন।

এসময় পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন, প্রধান উপদেষ্টার হাই রিপ্রেজেন্টেটিভ ড. খলিলুর রহমান, ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর, জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভাল উপস্থিত ছিলেন।

Comments

The Daily Star  | English

Drafting new constitution can take a long time: Asif Nazrul

He proposed that the next parliament can act as constitutional authority and amend the 1972 constitution until a new one is enacted

1h ago