ঝিনাইদহে ১৫ টাকার গোলাপ এখন ৩৫-৫০ টাকা

ব্যস্ত সময় পার করছেন জেলার ফুলচাষিরা।ছবি: সংগৃহীত

বসন্ত বরণ ও বিশ্ব ভালোবাসা দিবসকে ঘিরে গত কয়েকদিনে ঝিনাইদহের স্থানীয় বাজারগুলো বেড়েছে ফুলের বিক্রি। বিক্রির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে ফুলের দাম। অন্য সময়ের থেকে ২ থেকে ৩ গুণ বা তারও বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে ফুল।

ঝিনাইদহের পাইকারি বাজারগুলো ঘুরে দেখা যায়, এখন একটি গোলাপ ২৮ থেকে ৩২ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আর খুচরা গোলাপের দাম এখন ৩৫ থেকে ৫০ টাকা। অথচ মাত্র ১ থেকে ২ সপ্তাহ আগে এই একই গোলাপ পাইকারি বিক্রি হয়েছিল ৮ থেকে ১২ টাকায়, খুচরা বিক্রি হতো ১৫-১৬ টাকায়।

জারবেরা বিক্রি হচ্ছে ১০ থেকে ১৫ টাকায়। ২-১ সপ্তাহ আগেও জারবেরার দাম ছিল ৩ থেকে ৪ টাকা। রজনীগন্ধার স্টিক বিক্রি হচ্ছে ৮ টাকা করে, যা এক সপ্তাহ আগে বিক্রি হয়েছিল ২ থেকে ৩ টাকায়। তবে দাম কমেছে গাঁদা ফুলের। রোববার ও সোমবার গাঁদা ফুল বিক্রি হয়েছে ১৮০ থেকে ২২০ টাকা ঝোপা (২০ মালায় এক ঝোপা)। একই ফুল ২ সপ্তাহ আগে বিক্রি হয়েছিল ৪০০ থেকে ৪৫০ টাকায়।

জেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, মাঠে মাঠে ফুটে আছে লাল, হলুদ ও কমলা রঙের জারবেরা। ফুটে আছে লাল, হলুদ আর সাদা রঙের গোলাপ, রজনীগন্ধা, গ্লাডিয়াস ও গাদা ফুল। ফুলের রঙে স্বপ্ন রাঙাতে ব্যস্ত সময় পার করছেন জেলার ফুলচাষিরা।

প্রতি বছর ফেব্রুয়ারি-মার্চ মাস এলেই এ জেলার ফুলচাষি ও ফুলকর্মীদের ব্যস্ততা বেড়ে যায়। বিভিন্ন জাতীয় উৎসবে এ এলাকায় উৎপাদিত ফুল ব্যবহৃত হয়ে থাকে। চলতি মাসেই পহেলা ফাল্গুন ও বিশ্ব ভালোবাসা দিবস। এ ছাড়া সামনে আছে ২১ ফেব্রুয়ারি। এসব দিবসের বাড়তি চাহিদা মেটাতে ব্যস্ত সময় পার করছেন জেলার ফুলচাষীরা।

ঝিনাইদহ জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, চলতি মৌসুমে ঝিনাইদহতে ২৬৮ হেক্টর জমিতে ফুলের চাষ হয়েছে। এরমধ্যে গোলাপ ২০ হেক্টর, গাঁদা ১৪৩ হেক্টর, রজনীগন্ধা ৬২ হেক্টর, জারবেরা ২১ হেক্টর, চন্দ্রমল্লিকা ১০ হেক্টর ও গ্লাডিয়াস ৮ হেক্টর জমিতে চাষ হয়েছে। সবচেয়ে বেশি ফুলের চাষ হয় জেলা সদরের গান্না ও কালীগঞ্জ উপজেলার ত্রিলোচনপুর ইউনিয়নে। এ কারণে এ এলাকাটি অনেকের কাছে ফুলনগরী বলে পরিচিত।

১৯৯১ সালে জেলার কালীগঞ্জ উপজেলার বালিয়াডাঙ্গা গ্রামের সৌখিন কৃষক ছব্দুল শেখ প্রথম ফুল চাষ করেন। তিনি ওই বছর মাত্র ১৭ শতক জমিতে ফুল চাষ করে ৩৪ হাজার টাকার ফুল বিক্রি করেন। এরপর থেকে এলাকায় বিভিন্ন জাতের ফুল চাষের বিস্তার শুরু হয়। বর্তমানে জেলার হাজার হাজার কৃষক ফুল চাষ করে অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হচ্ছেন।

জেলার কালীগঞ্জ উপজেলার ত্রিলোচনপুর ইউনিয়নের ত্রিলোচনপুর গ্রামের ফুলচাষী টিপু সুলতান বলেন, '২০১৭ সালে ৫৫ লাখ টাকা খরচ করে ৫ বিঘা জমিতে জারবেরা ফুলের চাষ করেছিলাম। বর্তমানে প্রায় ২০ বিঘা জমিতে আমার ফুল চাষ রয়েছে। এরমধ্যে গোলাপ রয়েছে ৫ বিঘার মতো। ভালোবাসা ও বসন্ত উৎসবকে কেন্দ্র করে গত কয়েক দিনে গোলাপ পাইকারি বাজারে ২০ থেকে ৩০ দরে বিক্রি করেছি। প্রতিদিন ১ হাজার থেকে দেড় হাজার গোলাপ ঢাকার বাজারে পাঠাচ্ছি।'

কালীগঞ্জের মেইন বাসস্ট্যান্ড, বালিয়াডাঙ্গা বাজার এবং ঝিনাইদহ সদর উপজেলা গান্নার ফুল বাজারে গিয়ে দেখা যায়, দুপুর থেকে শত শত কৃষক তাদের ক্ষেতের উৎপাদিত ফুল ভ্যান, স্কুটার ও ইঞ্জিন চালিত বিভিন্ন পরিবহনে করে নিয়ে আসছেন। বেলা গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে বালিয়াডাঙ্গা বাজার ও কালীগঞ্জ মেইন বাসস্ট্যান্ড ভরে যায় লাল, সাদা আর হলুদ ফুলে ফুলে।

কালীগঞ্জ উপজেলার বালিয়াডাঙ্গা বাজার ফুল ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি আব্দার হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক ফজলুর রহমান জানান, বর্তমানে ফুলের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। সারা বছরই তারা ফুল বেচাকেনা করেন। তবে প্রতি বছর বাংলা ও ইংরেজি নববর্ষের দিন, স্বাধীনতা দিবস, আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস, ভালবাসা দিবস ও বসন্ত বরণের দিন ফুলের অতিরিক্ত চাহিদা থাকে। এ সময় দামও ভালো পাওয়া যায়।

ঝিনাইদহ জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিপ্তরের উপ-পরিচালক মো. আজগর আলী বলেন, 'ঝিনাইদহ মাটি ও আবহাওয়া ফুলচাষের জন্য উপযোগী। এ বছর জেলায় ২৬৮ হেক্টর জমিতে গ্লাডিয়াস, রজনীগন্ধ্যা, গোলাপ, গাঁদাসহ নানা জাতের ফুল চাষ হয়েছে। ফুলচাষ এ অঞ্চলের আর্থ সামাজিক উন্নয়নে বিরাট ভূমিকা রাখছে।'

ফুল পরিবহন ও সংরক্ষণের বিষয়ে তিনি বলেন, 'পদ্মাসেতু হওয়ায় খুব সহজে ফুল ও কৃষি পণ্যবাহী গাড়ি ঢাকা চট্টগ্রাম পৌঁছে যাচ্ছে। অন্যদিকে ফেরিঘাটে ফুলের গাড়ি আগে পারাপারের বিষয়ে জেলার প্রশাসন ও সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা হয়েছে। এ ছাড়া ফুল সংরক্ষণের জন্য বালিয়াডাঙ্গা বাজারে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত অত্যাধুনিক রুম করা হয়েছে। যেখানে ফুল ও ফলের বীজ সংরক্ষণ করা যাবে।'

Comments

The Daily Star  | English

Democracy ends where leadership begins

The Daily Star analysis of 25 political parties

8h ago